প্রিয় লেখকের প্রতি পাঠকের প্রেম হয় দুই ঘরানার। এক ধরনের লেখককে পাঠক ভালোবাসে কেবল তাদের লেখার মাধ্যমে। আরেক রকম প্রিয় লেখকের প্রতি ভালোবাসাটা জমে অক্ষরের বাইরে, লেখার প্রতি লেখকের নিবেদনের প্রগাঢ়তা অনুভব করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে প্রথম ঘরানার লেখক, দ্বিতীয় ধারার লেখক হিসেবে মনে আসে ওরহান পামুকের নাম। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা সতীনাথ ভাদুড়ীর মতো কেউ কেউ একই সাথে আবার দুই নৌকায়ও পা রাখেন।
তো বাংলাদেশের মতো জায়গায়, পাঠকগোষ্ঠীর আয়তন যেখানে যথেষ্ট বড় নয়, সংবাদ মাধ্যম যেখানে ডুবে রয় নিজস্ব বুদবুদে আর প্রকাশনা ব্যবসা দাঁড়িয়ে থাকে নানা ধরনের ফাঁকির ওপর ভিত্তি করে; তেমন এক দেশে বাস করেও মনোরঞ্জনের সাহিত্যের প্রতি উন্নাসিকতা নিয়ে কেবল জীবন ঘষে আগুন বের করে লেখার প্রতি নিবেদন দেখাচ্ছেন বলে, হামিম কামালের প্রতি আমার অনুরাগ দ্বিতীয় ঘরানায় পড়ছে। পরিচয় আছে বলেই লেখক হয়তো রেগে উঠবেন তাকে প্রথম দলে না রাখায়, এবং কেউ কেউ হয়তো ক্ষেপেও উঠবেন ওই ব্যক্তিগত পরিচিতির সূত্রে আমার পছন্দকে দুই নম্বরি মাল ভেবে। কিন্তু যিনি সত্যি সত্যি লিখতে চান, তিনি জানেন, তার প্রতিটি অক্ষরকেই উল্টেপাল্টে দেখা হবে মহাকালের কাস্টমসে, এবং পকেটে মিথ্যা থাকলে তাকে ফিরে আসতেই হবে সেই দরজা থাকে। বিগ ব্রাদার আর অগণিত স্মার্টফোনের তীব্র তীক্ষ্ণ নজর এড়িয়ে, মিথ্যা বলার ঝুঁকি এই জমানায় তাই, নিতান্ত অদূরদর্শী না হলে নেয়া যায় না।