লেখালেখি

Tag: এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো

কয়েক টুকরো গ্যালিয়ানো

এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানোকে নিয়ে আগেও লিখেছিলাম। দুর্দান্ত এক লেখক লোকটা। শব্দের ব্যবহারে তার চেয়ে পরিমিত গদ্যলেখক দেখিনি আর। ক্ষমতাসীনদের লেখা ইতিহাসকে ভেঙে চুরে গ্যালিয়ানো এমনভাবে তুলে ধরেন প্রাকৃতজনের বয়ান, সেটাকে কবিতা বললেই যেন মানায় বেশি।

গ্যালিয়ানোর আলোচিত বই মিররসঃ স্টোরিস অফ অলমোস্ট এভরিওয়ান থেকে নির্বাচিত কয়েকটা ভুক্তি এখানে অনুবাদের চেষ্টা করলাম। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, গ্যালিয়ানোর লেখার সৌন্দর্য্য আর কাব্যিকতার অনুবাদ আমার ল্যাংড়া কী-বোর্ডের সাধ্যতীত।

মার্কো পোলো
নিজের ভ্রমণকাহিনি শ্রুতিলিখনের সময়ে তিনি ছিলেন জেনোয়ার কারাগারে। কারাগারের অন্য বন্দীরা তার বলা সমস্ত গল্পই বিশ্বাস করতো। সাতাশ বছর ধরে প্রাচ্যের পথে পথে হেঁটে বেড়ানো মার্কো পোলোর অভিযানের কাহিনি শুনতে শুনতে প্রতিটি বন্দীই যেন ঘুরে আসতো কারাগারের বাইরে।

তিন বছর পরে, তিনি ভেনিস থেকে নিজের বই প্রকাশ করলেন। ‘প্রকাশ’ বলছি ঠিকই, কিন্তু ইউরোপে প্রিন্টিং প্রেস আসতে তখনো দেরি। হাতে লেখা কয়েকটা কপি ঘুরে বেড়ালো পরিচিত মন্ডলে। অল্প যে কিছু পাঠক মার্কো পোলো পেয়েছিলেন, তাদের কেউ সেই বইয়ের একটা অক্ষরও বিশ্বাস করেনি।

নীল জল দিগন্ত

প্রথম যেদিন গল্পকার হিসেবে আমি পরীক্ষার সামনে দাঁড়াই, সে ঘটনাটা আজ বলতে চাই। প্রথমবারের মতো সেদিন মনে হয়েছিলো যে কাজটা আমার জন্য নয়।

ঘটনাটা ঘটেছিলো আয়াগুয়া নামের একটা শহরে, বলিভিয়াতে। আমি উঠেছিলাম কয়লা খনির কাছে একটা জায়গায়। স্যান জুয়ানের কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডটা এ শহরেই হয়েছিলো, সেইন্ট জন’স ইভ উদাযপন করতে থাকা পানরত আর নৃত্যরত খনি শ্রমিকদের ওপর সেই সন্ধ্যায় চারদিকের পাহাড়চূড়া থেকে স্বৈরাশাসক ব্যারিন্টোসের আদেশে গুলি চালিয়েছিলো তার সৈনিকেরা।

ইতিহাসের কালো যাদুকর

গল্পটা প্রতি চার বছরে ফিরে ফিরে আসে। লোকটা নাকি একমাসের জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ করে রাখে, বাইরে ঝোলানো নোটিশ উঁচুস্বরে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জানায়- “খেলা দেখার জন্য বন্ধ “। আর এই একটা মাস নিজের প্রিয় চেয়ারে বসে লোকটা কেবল টিভি দ্যাখে আর সেটা নিয়ে লিখে যায়।

লোকটা এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো, খেলাটা ফুটবল, উপলক্ষটা বিশ্বকাপ।

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!