লেখালেখি

Tag: আসগার ফারহাদি

মৃদু মানুষের মাস্তুলহীন মন

(১)
আসগর ফারহাদি যখন জীবনে প্রথমবারের মতো সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকেন, ততদিনে তিনি পা রেখেছেন কৈশোরে, আর ইসলামি বিপ্লবের হাত ধরে ইরানের সুপ্রিম লিডার হয়ে বসা আয়াতুল্লাহ রুহুলউল্লাহ খোমেনির বিরুদ্ধে তখন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে মিত্রশক্তির দেশগুলো যে সব সিনেমা বানিয়েছিলো, জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে সেই সব সিনেমাই তখন জোরেশোরে দেখানোর ধুম পড়েছে ইরানের হলগুলোতে। ইরাকের সাথে যুদ্ধ বলে পাবলিকও তখন খুব খাচ্ছে সেই জিনিস।

ফারহাদি যেদিন প্রথম সিনেমা দেখতে যান, গুষ্টির আরো কিছু ভাইবোনকে নিয়ে বাসে করে সেদিন শহরে পৌঁছতে খানিক দেরিই হয়ে যায় তার। হলে ঢুকতে ঢুকতে পেরিয়ে যায় সিনেমার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু তাই বলে কি ক্ষুদে দর্শকদের আনন্দ কমে? নাহ, বরং সিনেমার পর্দায় তরুণ এক যোদ্ধা, যে নাৎজিদের রুখে দিতে কড়া ফাইট দিচ্ছিলো পূর্ব ইউরোপের কোথাও, সেটা দেখে সকলে একেবারে বিগলিত। বলাই বাহুল্য, শেষ দৃশ্যে নায়ক যথারীতি গলা কেটে নিয়েছিলো নাৎজি শয়তানদের।

অনুভূতির অনুবাদ

শেখ সাদী বা এপিজে আবুল কালামের সাথে বেইলি রোডের দেয়ালের চিকা-চিরন্তনীতে জায়গা করে নেওয়া জনৈক রেদোয়ান মাসুদ আমাদের জানান দ্যান, মানুষ যখন প্রকৃত সাফল্যের নিকটে পৌঁছে, তখনই তার ভালোবাসার মানুষটি চলে যায়। কখনো ভিকারুন্নিসা স্কুলের পাশের রাস্তায় ফুচকা খেতে আসেননি বলেই বোধহয়, উক্ত বাণীটিকে ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক আসগার ফারহাদির ঠিক আত্মস্থ করা হয়ে উঠে নাই। রেদোয়ান মাসুদের একশো আশি ডিগ্রি বিপরীতে দাঁড়িয়ে থেকে আসগার ফারহাদি বরং তার ‘এ সেপারেশন’ চলচ্চিত্রটি শুরু করলেন ভালোবাসার মানুষের প্রস্থান থেকে। চিবুকের কাছেও একা কয়েকটি মানুষকে নিয়ে পরবর্তী দুই ঘন্টায় এমনই এক গল্প বললেন ফারহাদি, ফুটবলের টাইব্রেকারের মতো ক্ষণে ক্ষণে দুলে গেলো দর্শকের মন। দুটি পরিবারের গল্প হয়ে উঠলো আধুনিক মানুষের চিরন্তন ট্রাজেডির অপরুপ এক ভাষ্য।

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!