সুহান রিজওয়ান

লেখালেখি

২০২৩ এর বইঃ যে জীবন আমার ছিল

[২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো পড়া শেষে আমার এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই ধারাবাহিক। আশা করি, এই স্বেচ্ছা-উদ্যোগ চালু থাকবে বছর জুড়েই। ধারাবাহিকের আজকের পর্বে থাকলো ইমদাদুল হক মিলনের আত্মজীবনী ‘যে জীবন আমার ছিল’ নিয়ে আলাপ।]

লেখকের মৃত্যু ঘটে দুই রকমে।

এক রকমের মৃত্যু তার দৈহিক মৃত্যু, লেখক যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য হলে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের এই মৃত্যুদিনটি মুখস্ত করতে হয় অবজেক্টিভে গোল্লা ভরাটের জন্য। আর দ্বিতীয় মৃত্যুটি লেখকের রচনার মৃত্যু, তার রচনা তখন প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলে পাঠকের কাছে। বলা বাহুল্য, সত্যিকার লেখকের জন্য এই মৃত্যুটাই করুণতম।

২০২৩ এর বইঃ জবরখাকি

[২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো পড়া শেষে আমার এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই ধারাবাহিক। আশা করি, এই স্বেচ্ছা-উদ্যোগ চালু থাকবে বছর জুড়েই। ধারাবাহিকের আজকের পর্বে থাকলো বর্ণালী সাহার গল্প-সংকলন ‘জবরখাকি’ নিয়ে আলাপ।]

(১)
যুগটা এখন পলিটিকাল কারেক্টনেসের, বাংলা সিনেমার মতো ড্রেসিং-গাউন গায়ের পাইপ টানা চৌধুরী সাহেবদের হাতে অনলাইনে লেখকদের নিল-ডাউন হবার দৃশ্য আজকাল অতি পরিচিত। ইদানিং নাকি ‘লোলিতা’ লেখার জন্য নবোকভকেও ডাকা হচ্ছে শিশুকামী বলে।

কিন্তু সাহিত্যের কাজ কি এসব পলিটিকাল কারেক্টনেসের  গুষ্টি মেরে ব্যক্তিগত অনুভূতির অস্বাভাবিকতাকেই আবিষ্কার করা নয়? অন্য দশজন যা এড়িয়ে যাচ্ছে স্বভাব বশে, লেখকের কাজ কি চিরকাল সেখানেই নজর রাখা না? উদাহরণ হিসেবে যদি প্রেম বিষয়টাকেই বেছে নেই; হাত ধরে রমনা পার্কে বসে বাদাম খাওয়া আর প্যারিসের রাস্তায় কাব্যিক ও কোটেবল বাক্য উচ্চারণের বাইরেও কি সেই প্রেমের একটা কালো রুপ নেই? এমনও তো প্রেম আছে, যা ভেঙে গেলে ছোঁড়া হয় এসিড আর অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হয় ভিডিও? সেই সব অস্বাভাবিকতার গল্প বলাটাও কি লেখকের কাজ নয়?

তবু অনন্ত জাগে

কলোনির মাঠে বিকেলে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামা না গেলে জীবনের আর অর্থ কী? ফলে, আবেগী দর্শক আর আনাড়ি ফেসবুকার হিসেবে নয়, তখন তুমি নিজেই টেড লাসো সিরিয়ালের ‘দানি রোহা’, যার কাছে Football is life।

১৯৯৮ এর রহস্যময় ফাইনালে রোনালদোকে চেনাই গেলো না, কিন্তু- ব্রাজিল ফ্যান নয়- ফুটবলের ফ্যান হিসেবেই চোখে লেগে থাকলো বার্গক্যাম্পের তিন টাচের যাদুতে আর্জেন্টিনার বিদায়। সিআইএ তখনো অপেক্ষা করে যাচ্ছে, অচিরেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পতন ঘটবে। তোমার অপেক্ষা তখনো শুরুই হয়নি।

ঘ্রাণময় চিরকুট

আত্মজীবনী ঘরানার রচনা In Sensorium : Notes for my people এর জন্য সম্প্রতি কারকাস রিভিউ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তন্বী নন্দিনী ইসলাম, যিনি লেখেন তানাইস (TaNaIs) নামে। অনলাইনে খবরটা চোখে পড়তে ভালো লাগে দুই কারণে। (১) বইটা সদ্য পড়া হয়েছে আমার। নিজের পড়া আর ভালো লাগা কোনো বই যদি সাহিত্য পুরস্কার পায়, কোন পাঠকের তা ভালো না লাগে! (২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা তানাইস মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।

সত্যি বলতে, দ্বিতীয় কারণটাই মুখ্য। তানাইসকে চিনতে, তার লেখার জগতের খোঁজ পেতে হয়তো আরেকটু দেরি হতো আমার; যদি না তিনি আমাদের এক সুহৃদের আত্মজা হতেন। ফলে তানাইসের উল্লিখিত বইটা এক পরিচিতজনের কাছে দেখতেই হস্তগত করতে আমি দেরি করি না। স্বীকার করি, বয়েসে তিনি পাঠকের প্রায় সমসাময়িক বলেও তার গল্প শোনার জন্য বাড়তি একটা আগ্রহ কাজ করে। দেখতে চাই, দুনিয়ার আরেক প্রান্তে বসে ঠিক কোন চোখে তিনি দেখছেন পৃথিবীকে।

ডিস্টোপিয়া প্রসঙ্গে

০১।
ধরা যাক, অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একদিন হঠাৎ অভ্যুত্থানে বদলে গেলো ‘গিলিয়াড’ নামের কোনো প্রজাতন্ত্রে। তারপর সামরিক জান্তা সেই প্রজাতন্ত্রকে ক্রমশ বদলে দিলো চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী আর পুরুষতান্ত্রিক এক রাষ্ট্রে। গিলিয়াড রাষ্ট্রে সবচেয়ে নাজুক অবস্থান হলো নারীর, কেড়ে নেওয়া হলো তার সন্তান জন্মদানের অধিকার। দুঃস্বপ্নের এখানেই শেষ নয়, নারীদের এবার কাজে লাগানো হলো কেবল শাসক শ্রেণীর জন্য সন্তান উৎপাদনের কাজে…।

মার্গারেট অ্যাটউডের দুনিয়া-বিখ্যাত ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘দা হ্যান্ডসমেইড টেইল’ এর কাহিনি এগিয়ে গেছে এভাবেই, পাঠককে ক্রমাগত অস্বস্তি দিয়ে। কুঁচকানো ভুরু আর মৃদু আতঙ্ক নিয়েও পাঠক কিন্তু ঠিকই পড়ে গেছে কাল্পনিক রাষ্ট্র গিলিয়াডের গল্প, এবং একরকম উপভোগও করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতের বিকৃত একটা রুপ দেখানো এই ধরনের কল্প-সাহিত্য (ফিকশন) পড়তে কেন ভালো লাগে পাঠকের? কেন স্বস্তির চাইতে অনেক বেশি অস্বস্তির সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হলেও ডিস্টোপিয়ান ফিকশনরা আমাদের আনন্দ দেয়?

কদর্য সব আরব্য রজনী

হাতে জমে থাকা বইয়ের স্তূপ আর ইন্টারনেটে গণ্ডায় গণ্ডায় ঘুরে বেড়ানো মাগনা ই-বই এর দৌরাত্ম্যে যেটা হয়েছে, সদ্য প্রকাশিত বই কেনার ক্ষেত্রে মন ইদানিং অনেক যাচাই-বাছাই করে। নতুন বের হওয়া কোনো বই কিনবো কি না, স্বীকার করি, অনলাইনের নানা প্রতিক্রিয়াও আজকাল ভূমিকা রাখে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করায়। এসব হিসাবের বাইরে রাখি কেবল অল্প কিছু লেখককে। তাদের নতুন কোনো বই এলে, সেটা সংগ্রহ করে নিয়ে পড়তে আমার দেরি হয় না। ব্যক্তিগত সেই তালিকার একদম প্রথম দিকেই থাকেন শাহীন আখতার।

জুলাইয়ের দুপুরে জনৈক বইপড়ুয়া

জুলাই মাসের এক সকালবেলায়- দুপুরও হতে পারে- অন্তর্জালে একটা ক্লিক করে আপনি ঢুকে পড়েছেন সুহান রিজওয়ানের লেখালেখির সাইটে, লিংকটা বলছিলো এখানে ইতালো কালভিনোর উপন্যাস ইফ অন আ উইন্টারস নাইট এ ট্রাভেলার’ এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।

হ্যাঁ, এই সাইটে আপনি সত্যিই সুহানের লেখাটা পড়তে পারবেন। কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে। জানি, কয়েক লাইন পড়ে ফেলার পরেও উদ্দিষ্ট বইটা নিয়ে কিছু খুঁজে না পেয়ে আপনি অধৈর্য হচ্ছেন, সাথে সাথে, নিজের বিচারও আপনাকে ক্রমাগত বলে যাচ্ছে যে এই লেখাটা চট করে স্ক্রল করে পড়া যাবে না। তবে এটা ঠিক, যে বই নিয়ে এই বিচিত্র ভঙ্গীতে লেখা প্রতিক্রিয়া আপনার কৌতূহল জাগিয়েছে, আপনি তাই পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি এটাও জানেন যে অন্তর্জালে কোনো কিছুতে মন দেয়া কেমন কষ্ট, তাই আপনি ভয় পাচ্ছেনঃ যে এলোমেলো এই লেখা আপনাকে অচিরেই করে তুলবে ক্লান্ত। এসব ফালতু বকুনি আর কতক্ষণ?

Page 2 of 18

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!