লেখালেখি

Category: ভ্রমণ Page 1 of 3

সুলতানের দুই সফর

মঈনুস সুলতানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ নামের ভ্রমণ সংকলনের হাত ধরে। দৈনিক প্রথম আলো’তে সুলতানের যে ভ্রমণ গল্পগুলো পর্বের পর পর্ব ধারাবাহিক আকারে বেরিয়েছিলো প্রায় এক দশক আগে, ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ ছিলো তারই সংকলিত রুপ। পত্রিকার পাতায় অতটা নিয়মিত পড়া হয়নি সুলতানকে, স্বীকার করি; কিন্তু যখন তাকে পড়া হয় মলাটবদ্ধ বইয়ের পাতায়, অনুরাগী হয়ে যেতে তার সময় লাগে না। উর্দু-ফারসি-আরবীর আধিক্যের সাথে বহু অবাঙাল শব্দ যুতসই ভাবে ব্যবহার করে সুলতান কী করে প্রায়ই বাংলা ভ্রমণগদ্যের আরেক চূড়ামণি সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করান; সে প্রসঙ্গেও নিয়মিতই অনেকের সাথে আলাপ করেছি। মঈনুস সুলতানকে তাই সময় পেলেই অনুসরণ করেছি আমি; নিকারাগুয়ায়, জিম্বাবুয়েতে, অথবা কান্দাহারে।

হাসনাত আবদুল হাই’এর ভ্রমণ-জগত

(১)
প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকারের নাম ভাবতে গিয়ে বাঙালি পাঠককে প্রথমেই সবুট স্যালুট মারতে হয় সৈয়দ মুজতবা আলীকে। একদম আটপৌরে গদ্যে সুনীল গাঙ্গুলীও আমাকে নানা জায়গা ঘুরিয়ে এনেছেন অক্ষর দিয়ে, তাকেও আমি রাখবো নিজের প্রিয় ভ্রমণ-লেখকের তালিকায়। বলতে হবে, মাত্র খান দুয়েক বইয়ের মাধ্যমেই প্রিয় পর্যটক-লেখক হয়ে ওঠা রাইকার্ড কাপুচিনস্কির নামটাও।

কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাংলাদেশে আমার প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকার কে, তখন?

ভেবে দেখলে, খুব বেশি নাম বিবেচনায় উঠে আসে না। হুমায়ূন আহমেদ থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো বহুপ্রজ লেখকেরা তো বটেই, সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম বা মুনতাসীর মামুনের মতো একটু পাশে সরে থাকা লেখকেরাও ভ্রমণ-কাহিনি পিপাসু পাঠকদের উপহার দিয়েছেন সুলিখিত কিছু বই। বিশেষ করে বলতে হবে শুধু ভ্রমণ সংক্রান্ত রচনা দিয়েই প্রায় তারকা-খ্যাতি পেয়ে যাওয়া মাঈনুস সুলতানের নাম, তার ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’কে তো রীতিমতো আধুনিক ‘দেশে-বিদেশে’ বলতে হয়। একদম হালের ভ্রমণ-লেখক সঞ্জয় দে কিংবা ফাতিমা জাহানের রচনাও বেশ লাগে পড়তে। তাঁদের প্রত্যেকের রচনাই নিঃসন্দেহে দারুণ নিজস্বতা ও সৌন্দর্য্য-মণ্ডিত। তবু, নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলাদেশে আমার প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকার হাসনাত আবদুল হাই।

সাড়ে সাত ঘণ্টা / ২য় পর্ব

( প্যারিসের বুকে প্রিয় লেখকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঘোরার গল্পের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। প্রথম পর্বটা পড়া যাবে এইখানে।)

আরো খানিক পরে আমাদের পরিচিত পর্যটককে দেখা যায় তার ছোট্ট সবুজাভ ব্যাগটি পিঠে ঝুলিয়ে লুক্সেমবার্গ উদ্যান থেকে বেরিয়ে সিন নদীর দিকে হাঁটা দিতে। বিকেলের আলোতে রাস্তায় এখন লোকজন বেড়েছে, তার মাঝে অধিকাংশকেই ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি বলে বোধ হয়। ফলে হাঁটতে সুহানের চমৎকার লাগে। একটু কল্পনা করলে নিজেকে সে এমনকি আবিষ্কার করতে পারে ১৯৬৮ এর মে মাসে, ছাত্রজনতার সাথে পথে নেমে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে সে সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে, তেমন খোয়াবটিও বেশ করে মন্থন করা হয় খানিক। তবে এই কল্পনা প্রবণতার ফলটা সুহান হাতেনাতে পায়। একটা তিন রাস্তার মাথায় এসে সে ভুল পথে খানিক দূরে চলে যায় গন্তব্য হতে, সন্দেহ হওয়ায় তাকে পুনরায় ঠিক লাইনে ফিরতে হয় সেই গুগল ম্যাপ দেখেই।

সাড়ে সাত ঘণ্টা / ১ম পর্ব

সিম্‌তিয়ের দ্যু মোঁপার্নাস (Cimetière du Montparnasse)-কে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় সেটার অনাড়ম্বর ফটকটার দিকে সুহান একটু সম্ভ্রম নিয়ে তাকায় ঠিক, তবে তা মুহুর্তের জন্যেই। বিশাল এই সমাধিক্ষেত্রটা সে ঘুরে দেখতে চায় কখনো। কিন্তু তাড়াহুড়োয় নয়; দীর্ঘ সময় নিয়ে, একটু একটু করে শিশুসুলভ আনন্দে সে আবিষ্কার করতে চায় কোথায় শুয়ে আছেন জাঁ পল সাত্রে, সিমন দ্য বোভোয়ার কিংবা হুলিও কোয়ার্তাজার। আজকের পরিকল্পনায় যেহেতু সিম্‌তিয়ের দ্যু মোঁপার্নাসের জায়গা নেই, এদিকে আর তাকিয়ে তবে ফায়দা কী? চোয়াল শক্ত করে সুহান তাই এগিয়ে যায়, লা ক্লোজরি দে লিলা (La Closerie Des Lilas) জায়গাটা সামনের চৌরাস্তার আশপাশেই কোথাও হবে, কাউকে জিজ্ঞেস করলেই খুঁজে পাবার কথা।

স্তালিনের রোদে পোড়া বুটজোড়া

রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুল হেরে বসার পরের বিকালটায় আমি বেরিয়ে পড়ি মেমেন্টো পার্কের দিকে। একলাই, কারণ জাপানি এক রেস্তোঁরায় খানিক আগে দেড় সপ্তাহ পরে ভাতের সান্নিধ্যে এসেছে বলেই হয়তো, আমার সফরসঙ্গী রিফাত আলম শরীর ম্যাজম্যাজের অজুহাত দেয় এবং টার্কিশ বাথ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু সফর পরিকল্পনায় বুদাপেস্টের দর্শনীয় স্থান হিসেবে মেমেন্টো পার্ক আমার তালিকায় বেশ উপর দিকেই আছে, সেই জায়গা দেখার সুযোগ আমি কিছুতেই ছাড়বো না।

কিন্তু গুগল ম্যাপ আর হাতের ট্যুরিস্ট গাইডের নির্দেশনা দেখে মেমেন্টো পার্কে যাবার পথ নিয়ে ধাঁধা লাগে আমার, তেমন পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়াই যায় না। খানিক ভেবে আমি তাই চলে যাই হোস্টেলের গলির মোড়ে। গতকাল থেকেই খেয়াল করেছি, বিভিন্ন বাস কোম্পানির হয়ে আগ্রহী টুরিস্টদের কাছে নানারকম পাস (Pass) আর টিকেট বিক্রি করছে হাস্যজ্বল তরুণ তরুণীরা, কিছু না কিনলেও এদের কাছে তথ্য চেয়ে কেউ ফিরে আসে না। আমি দ্বারস্থ হয়ে যাই ওরকমই একটা তথ্যকেন্দ্রের। মেমেন্টো পার্কে যেতে চাই আমি, কীভাবে যাবো?

ম্যারিলেসের অলিম্পাস ক্যামেরা আর চিরকুট

প্রথম দেখায় স্টেশনটাকে বেশি সুবিধার লাগে না। টিভি নাটকে বাংলাদেশের মফস্বলের কোনো অনামা রেলস্টেশন দেখাতে হলে যেভাবে সেট সাজাতে হয়, প্রায় সেই আদলেই সাজানো। বাতি জ্বলছে না অনেক জায়গায়। ওভারকোট মোড়া সন্দেহজনক দুয়েকটি অবয়ব, যে দলে পুরুষ আর নারী উভয়েই আছে, প্রায়ই আমাদের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। এদের দিকে দৃষ্টিপাত করে আমার উদ্দেশ্যে নিচুস্বরে নানা মাত্রার সতর্কবাণী ছাড়ে সফরসঙ্গী রিফাত আলম।

ঘটনাস্থল বেলগ্রেড, সময় রাত্রি সোয়া দশটা হবে। সার্বিয়ার রাজধানী থেকে আমরা রওয়ানা হবো হাঙেরির রাজধানী বুদাপেস্টের দিকে।

ইউরোপ ২০১৮ _ বার্লিন

৮ জুন, ২০১৮।

বার্লিন, জার্মানি।

10 Berlin.jpg
প্রাচীন সভ্যতা থেকে ইসথার গেট বা নেফারতিতির মূর্তি তুলে এনে দূর ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে চাইলেও এই শহর আসলে নিজেই ইতিহাসের কেন্দ্রীয় অভিনেতা।

Page 1 of 3

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!