লেখালেখি

Category: বিবিধ Page 1 of 4

চিঠি নিয়ে দুই বই

কিছু কিছু প্রসঙ্গের এমন গুণ, সংবেদনশীল মানুষের মনে তারা দ্যোতনা তুলবেই।

মায়ের কথা ধরা যাক। কিংবা ধরা যাক শৈশবের স্মৃতির কথা। এসব নিয়ে যদি বলতে বলা হয়—দেখা যাবে, ঘোরতর কর্কশ মানুষেরও মনের একটা কোমল অংশ বেরিয়ে আসছে। মা, কিংবা শৈশব, কিংবা প্রথম প্রেম—চাইলেও মানুষ এদের ব্যাপারে কঠোর হতে পারে না।

একই ব্যাপার খাটে চিঠির ক্ষেত্রেও। একবিংশ শতাব্দীর সিকিভাগ কেটে যাওয়ার পর, ই-বার্তার মাধ্যমে মানুষ আজকাল প্রতিটি ক্ষণ সংযুক্ত অন্য কারো সাথে। তবু, যখনই কাগজে লেখা চিঠি পড়তে বসি আমরা, না চাইলেও হৃদয় খানিক দ্রবীভূত হয়ে যায় পাঠকের।

সাহিত্যে জলবায়ূ ও জ্বালানি প্রসঙ্গ

[সাধারণভাবে, যে কোনো ধরনের আলোচনা সভা আমি এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে বিষয়বস্তু যদি একটু ভারী ধরনের হয়, তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বক্তাদের প্রজ্ঞা আরও সহ্য হয় না। কিন্তু শুভ কিবরিয়া ভাই পুরোনো সুহৃদ বলে তার আমন্ত্রণ এড়াতে পারলাম না, ফলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর একটা আলাপে যেতে হলো ২৩ নভেম্বর, ২০২৪। শিরোনামটা বেশ জটিলঃ জ্বালানি রুপান্তরের সন্ধিক্ষণে সাহিত্য ও সংস্কৃতিজনের দায় ও দরদ।

সত্যি বলতে, মূল ব্যাপারটা শিরোনামের মতো অত কঠিন নয়। মূল প্রবন্ধ রচয়িতা ড কাজল রশীদ শাহীনের বক্তব্যটা সহজ করে বললে, তা দাঁড়ায় এমনঃ কার্বন নিঃসরণ তথা পরিবেশ দূষণ হ্রাসকল্পে দুনিয়া এখন জীবাশ্ম জ্বালানি (ফসিল ফুয়েল) থেকে ঝুঁকে যাচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি (রিনিউয়েবল এনার্জি)-এর দিকে, জ্বালানি রুপান্তরের এই চাহিদাটা গণমানসে ছড়িয়ে দিতে সংস্কৃতিজনের একটা ভূমিকা রাখা দরকার। দরকার– লেখাজোখা, গান বা চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো শিল্পমাধ্যমগুলোয় নতুন দিনের এই চাহিদাটা তুলে আনা।

‘নয়পৌরে’ প্রসঙ্গে

গল্পগ্রন্থ ‘নয়পৌরে’ প্রকাশ হতে যাচ্ছে অচিরেই, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী থেকে। মনে হলো, তার আগে দু’চার কথা বলে নেই ওয়েবসাইটে।

বাইরের দেশে লেখকের ওয়েবসাইটের আলাদা মাহাত্ম্য আছে। লোকে সেখানে ওয়েবসাইট ঘেঁটে লেখকের কথাবার্তা কি তার কাজের হালনাগাদ জেনে নেয়। কোনো জরিপ করা হয়নি, কিন্তু পাঠকদের কোনো তথ্য পৌঁছে দিতে বাংলাভাষী লেখকদের মূল ভরসা বোধ করি, হয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়াই। বিপণন বা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর পেশাদারিত্ব হয়তো লেখকদের ওপর থেকে এই কাজের কিছুটা সরাতে পারে।

কী নামে ডাকবো একুশে ফেব্রুয়ারিকে?

একুশে ফেব্রুয়ারি এগিয়ে এলেই কয়েক বছর ধরে একটা বিষয় লক্ষ করি। ‘বিতর্ক’ বললে ব্যাপারটা খানিক ভারি হয়ে যায় অবশ্য। তার চেয়ে এভাবে বলি, যে এক ধরনের মত-দ্বৈততা বা দ্বিধা চোখে পড়ে তারিখটাকে ঘিরে। কেউ একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস/ভাষা-শহীদ দিবস’ বলেন, কেউ বলেন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।

সত্যি বলতে, আমাদের ছেলেবেলার স্মৃতিতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বলে কিছু নেই। একুশে ফেব্রুয়ারি তখনও বাঙালির নিতান্ত ঘরোয়া অনুষ্ঠান। গলির মোড়ে মাইকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর অমর লাইনগুলো শোনা যেতো, স্থানীয় সব শহীদ মিনারে বাচ্চাদের ফুল রাখার সাথে বাজতো আলতাফ মাহমুদের সুর, সব মিলিয়ে গোটা ব্যাপারটা ছিলো তীব্র আবেগের অথচ আটপৌরে। সেই ১৯৫২-তে সরকারের আরোপ করা ১৪৪ ধারা ভেঙে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার দাবিতে মিছিল করা সালাম-বরকতদের ওপর গুলি চালানো আমাদের দিনটাকে করে তুলতো শোকের।

আজও অ্যালান পো

(১)
টিভি-ধারাবাহিক কিংবা সিনেমার ক্ষেত্রে ‘অমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে’ কথাটা যখনই ব্যবহার করা হয়, সম্ভাব্য দর্শকদের মাঝে তখন একটা বাড়তি সাড়া পড়ে। নির্মাতার দিক থেকে ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপণ-মার্কা প্রচার, নিঃসন্দেহে। কিন্তু দর্শক যখন শোনে যে অমুক কাজটা তমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে, ধারণা করি, তার ভেতরে সেই তথ্য তখন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে দু’ভাবে। (ক) যখন সেই নির্দিষ্ট রচনাটা তার পড়া থাকে না, কেবল জানা থাকে নাম-ধাম-রচয়িতা বিষয়ক তথ্য; সে তখন ওই টিভি-ধারাবাহিক বা সিনেমা দেখে স্বাদ পেতে চায় মূল গল্পের। ভাব এমন থাকেঃ খুব তো নাম শুনছি, দেখি না- ওই হ্যারি পটার জিনিসটা কেমন। এবং (খ) যখন মূল গল্পটা তার পড়া থাকে, তখন সে জিনিসটা দেখতে চায় নিজের ভেতরের কল্পনার সাথে নির্মাতার কল্পনা কতটা মিলেছে- সেটা দেখার জন্য।

তবু অনন্ত জাগে

কলোনির মাঠে বিকেলে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামা না গেলে জীবনের আর অর্থ কী? ফলে, আবেগী দর্শক আর আনাড়ি ফেসবুকার হিসেবে নয়, তখন তুমি নিজেই টেড লাসো সিরিয়ালের ‘দানি রোহা’, যার কাছে Football is life।

১৯৯৮ এর রহস্যময় ফাইনালে রোনালদোকে চেনাই গেলো না, কিন্তু- ব্রাজিল ফ্যান নয়- ফুটবলের ফ্যান হিসেবেই চোখে লেগে থাকলো বার্গক্যাম্পের তিন টাচের যাদুতে আর্জেন্টিনার বিদায়। সিআইএ তখনো অপেক্ষা করে যাচ্ছে, অচিরেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পতন ঘটবে। তোমার অপেক্ষা তখনো শুরুই হয়নি।

ঘ্রাণময় চিরকুট

আত্মজীবনী ঘরানার রচনা In Sensorium : Notes for my people এর জন্য সম্প্রতি কারকাস রিভিউ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তন্বী নন্দিনী ইসলাম, যিনি লেখেন তানাইস (TaNaIs) নামে। অনলাইনে খবরটা চোখে পড়তে ভালো লাগে দুই কারণে। (১) বইটা সদ্য পড়া হয়েছে আমার। নিজের পড়া আর ভালো লাগা কোনো বই যদি সাহিত্য পুরস্কার পায়, কোন পাঠকের তা ভালো না লাগে! (২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা তানাইস মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।

সত্যি বলতে, দ্বিতীয় কারণটাই মুখ্য। তানাইসকে চিনতে, তার লেখার জগতের খোঁজ পেতে হয়তো আরেকটু দেরি হতো আমার; যদি না তিনি আমাদের এক সুহৃদের আত্মজা হতেন। ফলে তানাইসের উল্লিখিত বইটা এক পরিচিতজনের কাছে দেখতেই হস্তগত করতে আমি দেরি করি না। স্বীকার করি, বয়েসে তিনি পাঠকের প্রায় সমসাময়িক বলেও তার গল্প শোনার জন্য বাড়তি একটা আগ্রহ কাজ করে। দেখতে চাই, দুনিয়ার আরেক প্রান্তে বসে ঠিক কোন চোখে তিনি দেখছেন পৃথিবীকে।

Page 1 of 4

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!