লেখালেখি

Category: উপন্যাস Page 1 of 5

২০২৩ এর বইঃ চায়ের কাপে সাঁতার

(১)
সমসাময়িক কোনো লেখকের মাথায় ঢোকার জন্য এমনকি দুই দশক আগেও পাঠকের রাস্তা ছিলো একমুখী। একজন লেখক কী ভাবছেন কোনো বিষয়ে, কী পর্যবেক্ষণ বা মতামত তার কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে- তা জানতে পাঠকেরা তখন নির্ভর করতেন উদ্দিষ্ট লেখকের লেখা বা বক্তব্যের ওপরেই কেবল। অনলাইনের উত্থান এখন কমিয়ে দিয়েছে পাঠকের সেই বাধা। পাঠকের জন্য পত্রিকা কি বইয়ের মোড়কে পেশ করা লেখা ছাড়াও লেখকরা আছেন ব্লগে, ফেসবুকে; সেখানে তারা জায়েদ খানের রোলেক্স থেকে আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় অক্লেশে মতামত প্রদান করেন নিয়মিত। আর এই দ্বিতীয় ধারার টেক্সটও পাঠকের মাথায় তৈরি করতে থাকে লেখকের দ্বিতীয় একটা সত্ত্বা। সমকালের লেখক এনামুল রেজাকে পড়তে গেলে ওই দ্বিতীয় সত্ত্বা কি কিছুটা ছায়া ফেলে পাঠকের মনে?

২০২২ এর বইঃ ডি-মাইনর

(১) যখনই কোনো উপন্যাস প্রসঙ্গে বলি আমরা, অনুমিতভাবেই আমাদের মাথায় তখন ঘুরতে থাকে উপন্যাসটা পড়বার স্মৃতি। কোন জায়গাটায় সে উপন্যাস স্পর্শ করেছে আমাদের গোপন কোনো বেদনা, কোন অধ্যায়টা আমাদের নতুন কোনো ভাবনা দিলো, কিংবা কোন জায়গাটা মনে হয়েছে একেবারে গাঁজাখুরি- বলতে বা লিখতে গেলে সেইসব ভাবনাকেই আমরা উল্টেপাল্টে দেখি রুমালের মতো। সাথে, যদি লেখকের অন্যান্য লেখার সাথে পূর্বে যাত্রার অভিজ্ঞতা থাকে আমাদের- সেটাও প্রভাব ফেলে কোনো উপন্যাসকে নিয়ে বলবার সময়।

কিন্তু যখন ঔপন্যাসিকের রচনা-প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকেন পাঠক?

না, পাঠক যদি হয় লেখকের পূর্বপরিচিত, আর সে যদি টের পায় যে এই লেখা নামানোর সময় ঔপন্যাসিক ভাবনার অমুক সড়কটায় পা দিয়েছেন- তখন কিন্তু উপন্যাসটাকে সে অন্য দশটা বইয়ের সাথে একত্রে মেশাতে পারে না। শিরায় মাদক ঢুকলে যেমন চেনা জগতের মাত্রা সংখ্যা বেড়ে যায় – ঠিক তেমনই নতুন একটা বোধ, একটা দৃষ্টিভঙ্গি তখন তার চোখের সামনে চশমার মতো এসে দাঁড়ায় উদ্দিষ্ট উপন্যাস পড়তে গেলে।

কদর্য সব আরব্য রজনী

হাতে জমে থাকা বইয়ের স্তূপ আর ইন্টারনেটে গণ্ডায় গণ্ডায় ঘুরে বেড়ানো মাগনা ই-বই এর দৌরাত্ম্যে যেটা হয়েছে, সদ্য প্রকাশিত বই কেনার ক্ষেত্রে মন ইদানিং অনেক যাচাই-বাছাই করে। নতুন বের হওয়া কোনো বই কিনবো কি না, স্বীকার করি, অনলাইনের নানা প্রতিক্রিয়াও আজকাল ভূমিকা রাখে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করায়। এসব হিসাবের বাইরে রাখি কেবল অল্প কিছু লেখককে। তাদের নতুন কোনো বই এলে, সেটা সংগ্রহ করে নিয়ে পড়তে আমার দেরি হয় না। ব্যক্তিগত সেই তালিকার একদম প্রথম দিকেই থাকেন শাহীন আখতার।

জুলাইয়ের দুপুরে জনৈক বইপড়ুয়া

জুলাই মাসের এক সকালবেলায়- দুপুরও হতে পারে- অন্তর্জালে একটা ক্লিক করে আপনি ঢুকে পড়েছেন সুহান রিজওয়ানের লেখালেখির সাইটে, লিংকটা বলছিলো এখানে ইতালো কালভিনোর উপন্যাস ইফ অন আ উইন্টারস নাইট এ ট্রাভেলার’ এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।

হ্যাঁ, এই সাইটে আপনি সত্যিই সুহানের লেখাটা পড়তে পারবেন। কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে। জানি, কয়েক লাইন পড়ে ফেলার পরেও উদ্দিষ্ট বইটা নিয়ে কিছু খুঁজে না পেয়ে আপনি অধৈর্য হচ্ছেন, সাথে সাথে, নিজের বিচারও আপনাকে ক্রমাগত বলে যাচ্ছে যে এই লেখাটা চট করে স্ক্রল করে পড়া যাবে না। তবে এটা ঠিক, যে বই নিয়ে এই বিচিত্র ভঙ্গীতে লেখা প্রতিক্রিয়া আপনার কৌতূহল জাগিয়েছে, আপনি তাই পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি এটাও জানেন যে অন্তর্জালে কোনো কিছুতে মন দেয়া কেমন কষ্ট, তাই আপনি ভয় পাচ্ছেনঃ যে এলোমেলো এই লেখা আপনাকে অচিরেই করে তুলবে ক্লান্ত। এসব ফালতু বকুনি আর কতক্ষণ?

কোথাও ডাইনি আজও হতেছে শিকার

১৬৯২ সালের আমেরিকা; সালেম, ম্যাসাচুসেটস। ছোটো একটা শহর, চারিদিকে জঙ্গল ঘেরা। সেই জঙ্গলের মাঝেই একদল কিশোরী মেয়ে নেচে নেচে খেলছিলো একদিন, সাথে ছিলো এক কৃষ্ণাঙ্গ দাসী, তিতুবা। কোনো এক শহরবাসীর চোখে পড়ে যায় এই অতি-সাধারণ দৃশ্যটি। আর তারপর, মানুষের কূটবুদ্ধি আর রাজনীতির প্যাঁচে পড়ে এই তুচ্ছ ব্যাপারটাই হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটা; যা কুখ্যাত হয়ে আছে ‘ডাইনি শিকার’ (Witch Hunting) নামে।

কী ঘটেছিলো ১৬৯২ এর সালেমে?

২০২১ এর বইঃ আন্ডারগ্রাউন্ড

অনেকেরই জানা, দুটি চলকের মাঝে সম্পর্ক পাওয়ার জন্য ছক কাগজের বুকে যে বেস্ট ফিটেড কার্ভ (Best Fitted Curve) আঁকা হয়, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারে যদি আমরা মাত্র দুইটি বিন্দুর অবস্থান জানি। অথচ যদি আরেকটা বিন্দু যোগ হয়, কোনো ছকের প্রকৃত গতিপথ বোঝার সম্ভাব্যতা তখন অনেকটা বেড়ে যায়। আমার ধারণা, লেখার ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা খাটে।

২০২১ এর বইঃ রঁদেভু

বহুদিন ধরেই মাসুমুল আলমকে পড়বো পড়বো করি। বন্ধুর কাছ থেকে তার উপন্যাস ‘র‍্যাম্প, বার-বি-কিউ আর কানাগলির হুলো’ যোগাড় পর্যন্ত করা হয়, তবুও কেন জানি তাকে পড়া হয়ে ওঠে না। শেষ পর্যন্ত, কোনো এক সন্ধ্যায় সমমনা কজনের সাথে হাতিরপুল এলাকার কনকর্ডের কোনো বইয়ের দোকানে গিয়ে চোখে পড়ে যায় মাসুমুলের ২০২১ এ প্রকাশিত উপন্যাস ‘রঁদেভু’। এবং তখন, দীর্ঘদিনেও ‘…কানাগলির হুলো’কে আক্রমণ না করবার উদাসীনতা আমাকে এমন অপরাধী করে তোলে, যে আরো বইয়ের সাথে উদ্দিষ্ট উপন্যাসকে না কিনে আমার উপায় থাকে না। এবং অবশেষে মাসুমুল আলম পাঠ আমার শুরু হয়, উপন্যাস ‘রঁদেভু’ দিয়েই।

Page 1 of 5

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!