লেখালেখি

Category: বইয়ের আলাপ Page 1 of 10

‘নয়পৌরে’ প্রসঙ্গে

গল্পগ্রন্থ ‘নয়পৌরে’ প্রকাশ হতে যাচ্ছে অচিরেই, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী থেকে। মনে হলো, তার আগে দু’চার কথা বলে নেই ওয়েবসাইটে।

বাইরের দেশে লেখকের ওয়েবসাইটের আলাদা মাহাত্ম্য আছে। লোকে সেখানে ওয়েবসাইট ঘেঁটে লেখকের কথাবার্তা কি তার কাজের হালনাগাদ জেনে নেয়। কোনো জরিপ করা হয়নি, কিন্তু পাঠকদের কোনো তথ্য পৌঁছে দিতে বাংলাভাষী লেখকদের মূল ভরসা বোধ করি, হয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়াই। বিপণন বা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর পেশাদারিত্ব হয়তো লেখকদের ওপর থেকে এই কাজের কিছুটা সরাতে পারে।

সুলতানের দুই সফর

মঈনুস সুলতানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ নামের ভ্রমণ সংকলনের হাত ধরে। দৈনিক প্রথম আলো’তে সুলতানের যে ভ্রমণ গল্পগুলো পর্বের পর পর্ব ধারাবাহিক আকারে বেরিয়েছিলো প্রায় এক দশক আগে, ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ ছিলো তারই সংকলিত রুপ। পত্রিকার পাতায় অতটা নিয়মিত পড়া হয়নি সুলতানকে, স্বীকার করি; কিন্তু যখন তাকে পড়া হয় মলাটবদ্ধ বইয়ের পাতায়, অনুরাগী হয়ে যেতে তার সময় লাগে না। উর্দু-ফারসি-আরবীর আধিক্যের সাথে বহু অবাঙাল শব্দ যুতসই ভাবে ব্যবহার করে সুলতান কী করে প্রায়ই বাংলা ভ্রমণগদ্যের আরেক চূড়ামণি সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করান; সে প্রসঙ্গেও নিয়মিতই অনেকের সাথে আলাপ করেছি। মঈনুস সুলতানকে তাই সময় পেলেই অনুসরণ করেছি আমি; নিকারাগুয়ায়, জিম্বাবুয়েতে, অথবা কান্দাহারে।

২০২৪ এর বই / কিস্তি ০১

২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো পড়া শেষে আমার এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই ধারাবাহিক। আশা রাখি, এই স্বেচ্ছা-উদ্যোগ বেশ কিছুদিন চালিয়ে নিতে পারবো। আজ থাকলো প্রথম পর্ব।

(১) শূন্যের মাঝামাঝি শূন্যে / জিল্লুর রহমান সোহাগ

জিল্লুর রহমান সোহাগের গল্পগ্রন্থ ‘জুড়িগাড়ি’ পড়বার পর একটি পর্যবেক্ষণ আমি উপস্থাপন করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, গল্পকার হিসেবে সোহাগের ভাষা কিছু বেশিই অলঙ্কারপূর্ণ। গদ্য নয়, দীর্ঘ কোনো কবিতা– বলা ভালো আবৃত্তি করবার মতো কোনো কবিতা লিখছেন যেন সোহাগ। শব্দেরা সেখানে ভারি, গতি সেখানে সম্ভ্রম জাগানো শ্লথ।

ইতিহাস সংক্রান্ত বইপত্র

১৮ আগস্টে ফেসবুকে দিয়েছিলাম পোস্টটা, তালিকায় সামান্য পরিমার্জন করে তুলে দিচ্ছি ওয়েবসাইটেও।

ইতিহাস ব্যাপারটা কী, ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ তলস্তয় সেটা খুব ভালো মতো বলে দিয়েছেন। আমার কাছে ব্যাপারটা ফুটবল ম্যাচের মতো। লেফট ব্যাক থেকে অ্যাটাকিং মিড, কিংবা রাইট উইং থেকে স্ট্রাইকার— প্রত্যেকেই ভাবে যে গোলের পেছনে তার ভূমিকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাইরে থেকে যে দর্শক খেলা দ্যাখে, তার কাছে পুরো ম্যাচটাই ধরা দেয় বিক্ষিপ্ত কিছু প্রচেষ্টার সমষ্টি হিসেবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষেত্রে আবার, তুলনাটা দিতে হয় হাইস্কুলের ফুটবলের সাথে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের মতো দক্ষ ক্যামেরা না থাকায়, দর্শকের অবস্থানটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। খেলা আর ‘অফ দা বল মুভমেন্ট’; দুটোকেই একসাথে দেখাটা খুব কঠিন।

হাসনাত আবদুল হাই’এর ভ্রমণ-জগত

(১)
প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকারের নাম ভাবতে গিয়ে বাঙালি পাঠককে প্রথমেই সবুট স্যালুট মারতে হয় সৈয়দ মুজতবা আলীকে। একদম আটপৌরে গদ্যে সুনীল গাঙ্গুলীও আমাকে নানা জায়গা ঘুরিয়ে এনেছেন অক্ষর দিয়ে, তাকেও আমি রাখবো নিজের প্রিয় ভ্রমণ-লেখকের তালিকায়। বলতে হবে, মাত্র খান দুয়েক বইয়ের মাধ্যমেই প্রিয় পর্যটক-লেখক হয়ে ওঠা রাইকার্ড কাপুচিনস্কির নামটাও।

কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাংলাদেশে আমার প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকার কে, তখন?

ভেবে দেখলে, খুব বেশি নাম বিবেচনায় উঠে আসে না। হুমায়ূন আহমেদ থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো বহুপ্রজ লেখকেরা তো বটেই, সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম বা মুনতাসীর মামুনের মতো একটু পাশে সরে থাকা লেখকেরাও ভ্রমণ-কাহিনি পিপাসু পাঠকদের উপহার দিয়েছেন সুলিখিত কিছু বই। বিশেষ করে বলতে হবে শুধু ভ্রমণ সংক্রান্ত রচনা দিয়েই প্রায় তারকা-খ্যাতি পেয়ে যাওয়া মাঈনুস সুলতানের নাম, তার ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’কে তো রীতিমতো আধুনিক ‘দেশে-বিদেশে’ বলতে হয়। একদম হালের ভ্রমণ-লেখক সঞ্জয় দে কিংবা ফাতিমা জাহানের রচনাও বেশ লাগে পড়তে। তাঁদের প্রত্যেকের রচনাই নিঃসন্দেহে দারুণ নিজস্বতা ও সৌন্দর্য্য-মণ্ডিত। তবু, নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলাদেশে আমার প্রিয় ভ্রমণ-গদ্যকার হাসনাত আবদুল হাই।

২০২৩ এর বইঃ চায়ের কাপে সাঁতার

(১)
সমসাময়িক কোনো লেখকের মাথায় ঢোকার জন্য এমনকি দুই দশক আগেও পাঠকের রাস্তা ছিলো একমুখী। একজন লেখক কী ভাবছেন কোনো বিষয়ে, কী পর্যবেক্ষণ বা মতামত তার কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে- তা জানতে পাঠকেরা তখন নির্ভর করতেন উদ্দিষ্ট লেখকের লেখা বা বক্তব্যের ওপরেই কেবল। অনলাইনের উত্থান এখন কমিয়ে দিয়েছে পাঠকের সেই বাধা। পাঠকের জন্য পত্রিকা কি বইয়ের মোড়কে পেশ করা লেখা ছাড়াও লেখকরা আছেন ব্লগে, ফেসবুকে; সেখানে তারা জায়েদ খানের রোলেক্স থেকে আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় অক্লেশে মতামত প্রদান করেন নিয়মিত। আর এই দ্বিতীয় ধারার টেক্সটও পাঠকের মাথায় তৈরি করতে থাকে লেখকের দ্বিতীয় একটা সত্ত্বা। সমকালের লেখক এনামুল রেজাকে পড়তে গেলে ওই দ্বিতীয় সত্ত্বা কি কিছুটা ছায়া ফেলে পাঠকের মনে?

কুটি কবিরাজের জগৎ

(১)
কুটি কবিরাজ কে?

পোশাকি পরিচয় দিতে গেলে, লোকটার নাম মীর্জা শিপিহর আলি। আয়ূর্বেদিক শাস্ত্রে পন্ডিত বাপের ছিলো কবিরাজি ব্যবসা, মাইনর পর্যন্ত পড়ে শিপিহর সেখানেই ঢুকে গেলো। তারপর কবিরাজি ব্যবসায় সাফল্য। কখনো সিলেটের করিমগঞ্জ, কখনো শিলং, কখনো বীরভূমের সীতাবাড়িতে তার চেম্বার।

কিন্তু বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে মানুষটার জীবন যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, তার কারণ নিশ্চিতভাবেই শিপিহরের পেশাগত জীবন নয়। লোকে বরং তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলো ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে, যখন দীর্ঘ বিরতির পর ‘কুটি’ ডাকনামের ওই কবিরাজ হঠাৎ চিঠি পাঠায় বন্ধু তুলুকে, আর জানায়ঃ দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর ছায়ার মতো অনুসরণ করে অবশেষে জামশেদ মুস্তফিকে কব্জায় পেয়েছে সে!

Page 1 of 10

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!