লেখালেখি

Category: চলচ্চিত্র Page 1 of 2

‘কীভাবে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা চিনবেন’: উমবার্তো ইকো

পর্নোগ্রাফিক সিনেমা কীভাবে চেনা যায়?

জানি, প্রশ্নটা শুনে ভুরু কুঁচকে ফেলবেন কেউ কেউ, তরুণেরা হেসেও উঠতে পারেন। আরে বাবা নানা রকম ওয়েবসাইটে দিনে-রাতে সমানে পর্নোগ্রাফি চলছে, একজনের ডাউনলোড করা ইরোটিকা কিংবা পর্নোগ্রাফি মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়ছে দিগ্বিদিক; এমন যুগে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা চিনতে কারো মাথা ঘামাতে হবে কেন!

সেলিনা হোসেনের ‘লারা’, ক্রিস নোলানের ‘প্রেস্টিজ’

(১)
যখনই পড়তে বসি সেলিনা হোসেনকে, তার উপন্যাসগুলোর শেষে যেন সঙ্গী করতে হয় এক ধরনের আক্ষেপকে।

ছেলেমানুষি এক ধরনের সাহসিকতা আছে সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে। তার প্রায় সমসাময়িক ঔপন্যাসিকেরা মানুষের মনকে নানা ভাবে ভেঙে দেখানোর যে রাস্তায় হেঁটেছেন, অথবা পূর্বপুরুষ ওয়ালীউল্লাহ কিংবা সৈয়দ হকের উপন্যাসেও যেমন পরিচয় মেলে নক্ষত্রবীথির চেয়েও অচেনা মানব মনের, সেলিনা সেখানে রীতিমতো ছেলেমানুষের মতো যেন পণ করেছেন পাড়ার ওইসব বড় ভাইদের অগ্রাহ্য করার। তার চরিত্ররা যেন মনে করায় আরো প্রায় অর্ধেক শতাব্দী পেছনের শরৎচন্দ্রের উপন্যাসকে, যারা এই পৃষ্ঠায় উপদেশ মারে তো পরের পৃষ্ঠায় কান্না চাপতে ঠোঁট কামড়ায়।

বায়োস্কোপের পর্দায় / ০১

তিনটা সিনেমা দেখার টুকরো অভিজ্ঞতা একত্রে করে এই লেখা। এদের মাঝে সাধারণ যোগসূত্র আবিষ্কার করতে চাইলে উঠে আসবে ইতিহাসের প্রসঙ্গটা। দেশ আর কালের ভিন্নতা নিয়েও তিনটা সিনেমাই সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত।

দা টু পোপস [২০১৯,পরিচালকঃ ফার্নান্দো মেরিলেস]

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্ম একটা হলেও, একই ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও বিরোধ কম হয় না কখনোই। নানা মুনির মত, ধর্মের ক্ষেত্রেও বিবিধ রুপ নেয়। কিন্তু ক্যামন হয়, যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ধর্মগুরুদের মাঝেই মতের অমিল হয় আকাশ-পাতাল? ‘সিটি অফ গড’ খ্যাত পরিচালক ফার্নান্দো মেরিলেসের ‘দা টু পোপস’ সিনেমাটা দর্শকের ভাবনাকে দোলালো সেই চিন্তার সুতো ধরেই।

মৃদু মানুষের মাস্তুলহীন মন

(১)
আসগর ফারহাদি যখন জীবনে প্রথমবারের মতো সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকেন, ততদিনে তিনি পা রেখেছেন কৈশোরে, আর ইসলামি বিপ্লবের হাত ধরে ইরানের সুপ্রিম লিডার হয়ে বসা আয়াতুল্লাহ রুহুলউল্লাহ খোমেনির বিরুদ্ধে তখন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে মিত্রশক্তির দেশগুলো যে সব সিনেমা বানিয়েছিলো, জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে সেই সব সিনেমাই তখন জোরেশোরে দেখানোর ধুম পড়েছে ইরানের হলগুলোতে। ইরাকের সাথে যুদ্ধ বলে পাবলিকও তখন খুব খাচ্ছে সেই জিনিস।

ফারহাদি যেদিন প্রথম সিনেমা দেখতে যান, গুষ্টির আরো কিছু ভাইবোনকে নিয়ে বাসে করে সেদিন শহরে পৌঁছতে খানিক দেরিই হয়ে যায় তার। হলে ঢুকতে ঢুকতে পেরিয়ে যায় সিনেমার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু তাই বলে কি ক্ষুদে দর্শকদের আনন্দ কমে? নাহ, বরং সিনেমার পর্দায় তরুণ এক যোদ্ধা, যে নাৎজিদের রুখে দিতে কড়া ফাইট দিচ্ছিলো পূর্ব ইউরোপের কোথাও, সেটা দেখে সকলে একেবারে বিগলিত। বলাই বাহুল্য, শেষ দৃশ্যে নায়ক যথারীতি গলা কেটে নিয়েছিলো নাৎজি শয়তানদের।

প্যাটারসন আর পেসোয়াঃ না বাস-ড্রাইভার, না কেরানি

(১)

খেয়াল করলে দেখা যাবে, অজস্র অনাচার আর শ্বাপদে ভরে থাকা আমাদের ক্যারেক্টারলেস ঢাকা শহরকেও কোনো কোনো দিন অসম্ভব সুন্দর দেখায়। এক একটা পথশিশুর মুখের আদলে সেদিন আবিষ্কার করা যায় লেপচা কোনো পিচ্চিকে, কিংবা ভিজে সপসপ প্যান্টে ছিট ছিট কাদা নিয়েও বৃষ্টির পরে নিজেকে মনে হয় সম্রাট। সেইসব দিনে মনে হয়, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা আর সময়ের পৃথিবীতে পঞ্চম কোনো মাত্রা হয়ে আসে সংবেদনশীলতা। আর আমরা জানি, ওই বিশেষ মাত্রাটিকে নিয়ত আবিষ্কার করা যায় একজন কবির হৃদয়ে। আমাদের প্রতিদিনের বিড়ালের মুখে ধরা ইঁদুরের জীবনেও তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগাতে পারে একজন কবি। আর সৌন্দর্য্য আবিষ্কার করতে একজন প্রকৃত কবির পিরামিড কি তাজমহলের প্রয়োজন হয় না, তিনি সৌন্দর্য্যকে খুঁজে নিতে পারেন আমাদের চারপাশের ছড়ানো সাধারণের মাঝ থেকেও। জিম জারমুশের ধীর লয়ের সিনেমা প্যাটারসন দেখে, সেই বিশ্বাসটা মনে আরও পোক্ত হয়।

অনুভূতির অনুবাদ

শেখ সাদী বা এপিজে আবুল কালামের সাথে বেইলি রোডের দেয়ালের চিকা-চিরন্তনীতে জায়গা করে নেওয়া জনৈক রেদোয়ান মাসুদ আমাদের জানান দ্যান, মানুষ যখন প্রকৃত সাফল্যের নিকটে পৌঁছে, তখনই তার ভালোবাসার মানুষটি চলে যায়। কখনো ভিকারুন্নিসা স্কুলের পাশের রাস্তায় ফুচকা খেতে আসেননি বলেই বোধহয়, উক্ত বাণীটিকে ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক আসগার ফারহাদির ঠিক আত্মস্থ করা হয়ে উঠে নাই। রেদোয়ান মাসুদের একশো আশি ডিগ্রি বিপরীতে দাঁড়িয়ে থেকে আসগার ফারহাদি বরং তার ‘এ সেপারেশন’ চলচ্চিত্রটি শুরু করলেন ভালোবাসার মানুষের প্রস্থান থেকে। চিবুকের কাছেও একা কয়েকটি মানুষকে নিয়ে পরবর্তী দুই ঘন্টায় এমনই এক গল্প বললেন ফারহাদি, ফুটবলের টাইব্রেকারের মতো ক্ষণে ক্ষণে দুলে গেলো দর্শকের মন। দুটি পরিবারের গল্প হয়ে উঠলো আধুনিক মানুষের চিরন্তন ট্রাজেডির অপরুপ এক ভাষ্য।

রীনা ব্রাউনকে মৃদু স্মরণ

তপ্ত দুপুরে রোদ ঠেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভূ-গর্ভস্থ স্বাধীনতা যাদুঘরের প্রবেশমুখে যখন দাঁড়ানো যায়, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দেখানোর প্রশংসনীয় উদ্যোগটির প্রচারের প্রতি অনুরাগ তখন অনেকটা কমে। প্রচারটা কিন্তু এরা আরেকটু ঠিকঠাক করতে পারতো। সিনেমা দেখাতে পারো কিন্তু লোকজনকে জানাতে পারো না? তো, ঢাকঢোল একটু কম পেটানোতে যা হয়, টিকেটের স্বল্প মূল্য সত্ত্বেও সিনেমা শুরুর আগ মুহুর্তে দর্শকের সংখ্যা থেকে যায় হাতে গোণা। ঝিরঝির ও ঝামেলা করা প্রজেক্টরের সুবাদে পর্দায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের নাম ভেসে আসার আগে দর্শকের তাই অখণ্ড অবসর, বড় পর্দায় শামীম আখতারের সিনেমা রীনা ব্রাউনদেখার সম্ভাবনায় মাথার ভেতরে শাহবাগ থেকে রোদ মাড়িয়ে আসার বিক্ষোভ অনেকটা কমে।

Page 1 of 2

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!