লেখালেখি

Category: গল্প Page 1 of 2

দুই লেখকের গল্প

একটা গল্প বলি, শোনেন।

এক উপত্যকার দুই বিপরীত ঢালে দুটো কাঠের বাড়ি। দুজন লেখক থাকে ওই বাড়িগুলোয়, আর তারা পালা করে একে অন্যের ওপর চোখ রাখে। একজনের অভ্যাস হচ্ছে সকালে লেখা, অন্যজন লিখতে বসে বিকালবেলায়। কাজেই সকাল আর বিকালে, যে লেখক লিখছে না, সে’ই নিজের স্পাইগ্লাস দিয়ে নজর রাখে অন্য লেখকের ওপর- যে লিখছে।

দুই লেখকের মাঝে একজন হলো বহুপ্রজ লেখক। মানে, যে কি না লিখতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে; ফলে লিখতে পারে প্রচুর। অন্যজন হলো যন্ত্রণাবিদ্ধ লেখক। মানে, যে কি না লিখতে গিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তা করে; ফলে তার লেখা হয় বড্ড অল্প।

আলমগীর হোসেন অড্রে হেপবার্নকে ভালবেসেছিল

“In a cruel and imperfect world, Audrey Hepburn was living proof that God could still create perfection.” – Rex Reed

আপনাদের অথবা সেগুনবাগিচার আদি বাসিন্দাদের, কারোরই জানার কথা না যে ১৯২৯ সালের মে মাসের ২ তারিখ জন্ম নেওয়া মাজেদা খাতুনের একমাত্র পুত্র আলমগীর হোসেন অড্রে ক্যাথলীন হেপবার্নের চেয়ে বয়সে দুইদিনের বড়। আলমগীর হোসেন জন্মের পর তার পিতাকে দেখেছে বলে মনে করতে পারে না এবং এই প্রসঙ্গে মাজেদা খাতুনের নীরবতার কোন গোপন তাৎপর্য থাকলেও থাকতে পারে বলেও সেগুনবাগিচার আদি বাসিন্দারা মনে করে। কিন্তু সেটি আলমগীর হোসেনের কাছে তেমন কোন বিশেষত্ব বহন করেনি কখনো এবং মাজেদা খাতুন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পেছন দিকে ভাত বিক্রয় করে সেটাও সেগুনবাগিচার লোকেদের পছন্দের বিষয় না হলেও আলমগীর হোসেন কখনো তা নিয়েও ভাবেনি। এটা জানাই যথেষ্ট যে সেগুনবাগিচার বর্তমান বাসিন্দারা প্রায় সবাই অড্রে হেপবার্নকে দেখেছেন- কিন্তু আলমগীর হোসেনকে দেখেছেন কেবল আদি বাসিন্দারাই; অথবা হয়ত তাদের একটা ছোট অংশ।

বোর্হেস বাংলাদেশে এসেছিলেন

আর্জেন্টাইন গল্পকার হোর্হে লুই বোর্হেসের সাথে বাংলাদেশের অন্ততঃ একটি সম্পর্কের কথা জানা ছিল আমার। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা চালায় এই জনপদে, জানতাম, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর মতো আরো কিছু লেখকসহ বোর্হেস সেটার বিপক্ষে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা সরকারকে। তবে সম্প্রতি বোর্হেসের সাথে বাংলাদেশের আরো একটি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছি আমি। জেনেছি, পুরাতন পুঁথির খোঁজে সত্তরের দশকে বাংলাদেশে এসেছিলেন বোর্হেস।

২০২২ এর বই / কিস্তি ০৩

২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো পড়া শেষে আমার এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই ধারাবাহিক (অন্য পর্বগুলো পাওয়া যাবে এইখানে)। আশা করি, এই স্বেচ্ছা-উদ্যোগ চালু থাকবে বছর জুড়েই। আজ এর তৃতীয় পর্ব।

(১) সত্যজিতের শতবর্ষ / হিল্লোল দত্ত

এগুলো ঠিক প্রবন্ধ নয়, গবেষণা নয়, স্মৃতিচারণ নয়, রম্যরচনা নয়; এককথায় বলতে গেলে ব্যক্তিগত রচনা বলা যায় …” – মুখবন্ধে এই সাফাই গেয়েছেন লেখক হিল্লোল দত্ত; সেই হিল্লোল দত্ত- বই কিংবা বই সংক্রান্ত যার বিভিন্ন আলাপ আকর্ষণীয় গদ্যে অনলাইনের নানা জায়গায় পড়ে আসছি প্রায় এক যুগ। সত্যজিৎ-কে নিয়ে হিল্লোলের এই রচনা-সংকলন পড়তে তাই মুখিয়ে ছিলাম, পড়া হলো কদিন ধরে।

তিনটি অণু গল্প

পূর্বপরিচিত

ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে যাওয়ায় তারা আলিঙ্গন করলো একে অপরকে। ‘কতদিন দেখা হয়নি!’ বলে আক্ষেপ করলো দুজনেই। তারপর তারা খবর নিলো একে অন্যের, ফোন নাম্বার বিনিময় হলো, দেয়া হলো কফি খেতে দেখা হবার প্রতিশ্রুতিও।

শিকারী

১৮৬০ এর ২৯ জানুয়ারি জন্মেছিলেন আন্তন চেকফ।
লোকটা এমন ভাবে লিখেছে, যেন সে কিছুই বলছে না।
এবং সে সবই বলেছে।

এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো

[টীকাঃ  আন্তন চেকফের গল্পে ইম্প্রেশনাজিম ঘরানার শিল্পীদের ছায়া দেখেছিলেন তলস্তয়, চেকফের গল্পকে বোঝাতে গেলে, এই কথাটা দারুণ মানানসই।

অপূর্ব সব গল্প লিখে গেছেন চেকফ। ছোটর মাঝেও ছোট যে গল্পগুলো, সেখানে তিনি মানুষকে ধরেছেন একটা মুহুর্তের মহিমায় তার গোটা জীবনকে টেনে এনে। আর গল্প যখন একটু বড় হয়েছে, রাশিয়ার নানা স্তরের আপাদমস্তক বৈশিষ্ট্যহীন মানুষগুলোই তার বয়ানে হয়ে উঠেছে চিরকালের মানুষ।

‘শিকারী’ গল্পটা জুলাই, ১৮৮৫ তে লেখা। অল্প কথায় বহু না-বলা-গল্প বলার চেকফীয় ক্ষমতা এখানে পুরোমাত্রায় প্রকাশিত।]

তপ্ত আর দমবন্ধ গুমোট দিন। আকাশে কোনো মেঘ নেই। রোদেপোড়া ঘাসগুলোকে মনে হচ্ছে নিরানন্দ, নিরাশ, বৃষ্টি হলেও তারা যেন আর কখনো সবুজ হবে না। অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে নীরব, নিশ্চল, যেন গাছগুলো মাথা তুলে তাকিয়ে আছে কোথাও বা অপেক্ষা করছে কিছু একটার।

ইনভিকটাস, ১৯৭১

Some people believe football is a matter of life and death, I am very disappointed with that attitude. I can assure you it is much, much more important than that.
Bill Shankly

ক।

বাবার সামনে দাঁড়ালেই বুক কেঁপে উঠতো কেনো জানি, যে কারণে বাবার কাছে মুখ ফুটে মনের কথা বলা কখনোই হয়নি তার, যত আবদার ছিলো মায়ের কাছে। কোনোদিন এর অন্যথা হয়নি।

‘তোর বাবা বলতেছিলো তোকে লন্ডন পাঠায়ে দিবে আগামী মাসে,’ তূর্যকে বলেছিলেন মা। ‘এই নিয়ে ফয়েজ চাচার সাথে কথাও হইছে নাকি দুই-একবার।’

এ কথা শুনে আশঙ্কায় হঠাৎ ভারী হয়ে গিয়েছিলো তূর্যের বুকের ভেতরটা, চেষ্টা করেই গলার স্বরটা কাঠকাঠ করে তুলতে হয়েছিলো তাকে। ‘দ্যাখো আম্মা, ওই লন্ডন-ফন্ডন যাওয়া আমারে দিয়া হবে না। জুয়েলদের সাথে আমার কথা হইছে এর মাঝে, আগরতলায় যাবার রাস্তা খুঁজতেছে ওরা। আমিও ওদের সাথে যাবো ঠিক করছি, যুদ্ধে যাবো। তুমি আব্বারে বইলো।’

Page 1 of 2

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!