লেখালেখি

Category: খেলা

তবু অনন্ত জাগে

কলোনির মাঠে বিকেলে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামা না গেলে জীবনের আর অর্থ কী? ফলে, আবেগী দর্শক আর আনাড়ি ফেসবুকার হিসেবে নয়, তখন তুমি নিজেই টেড লাসো সিরিয়ালের ‘দানি রোহা’, যার কাছে Football is life।

১৯৯৮ এর রহস্যময় ফাইনালে রোনালদোকে চেনাই গেলো না, কিন্তু- ব্রাজিল ফ্যান নয়- ফুটবলের ফ্যান হিসেবেই চোখে লেগে থাকলো বার্গক্যাম্পের তিন টাচের যাদুতে আর্জেন্টিনার বিদায়। সিআইএ তখনো অপেক্ষা করে যাচ্ছে, অচিরেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পতন ঘটবে। তোমার অপেক্ষা তখনো শুরুই হয়নি।

সুন্দরতম ফুটবলের বিজ্ঞাপণ

(১)
স্মৃতিচারণ বলবো, না ইতিহাস?

যে নামেই ডাকা হোক, প্রচ্ছদ দেখেই আন্দাজ করা যায় যে গ্যারি জেনকিন্সের এই রচনায় চরিত্রের অভাব নেই। কিন্তু কারা এই স্মৃতিচারণের চরিত্র?

অনেকেই। যেমন সাও পাওলোর বড়লোক পাড়ার অ্যাস্ট্রোটার্ফের কোণে দাঁড়িয়ে ফুটবলে লাথি মারতে থাকা বাচ্চাদের দিকে চেয়ে থাকা ওই বুড়ো। আজও ব্রাজিল ওই বুড়োকে চেনে ‘দা ক্যাপিটান’ নামে।

ইনভিকটাস, ১৯৭১

Some people believe football is a matter of life and death, I am very disappointed with that attitude. I can assure you it is much, much more important than that.
Bill Shankly

ক।

বাবার সামনে দাঁড়ালেই বুক কেঁপে উঠতো কেনো জানি, যে কারণে বাবার কাছে মুখ ফুটে মনের কথা বলা কখনোই হয়নি তার, যত আবদার ছিলো মায়ের কাছে। কোনোদিন এর অন্যথা হয়নি।

‘তোর বাবা বলতেছিলো তোকে লন্ডন পাঠায়ে দিবে আগামী মাসে,’ তূর্যকে বলেছিলেন মা। ‘এই নিয়ে ফয়েজ চাচার সাথে কথাও হইছে নাকি দুই-একবার।’

এ কথা শুনে আশঙ্কায় হঠাৎ ভারী হয়ে গিয়েছিলো তূর্যের বুকের ভেতরটা, চেষ্টা করেই গলার স্বরটা কাঠকাঠ করে তুলতে হয়েছিলো তাকে। ‘দ্যাখো আম্মা, ওই লন্ডন-ফন্ডন যাওয়া আমারে দিয়া হবে না। জুয়েলদের সাথে আমার কথা হইছে এর মাঝে, আগরতলায় যাবার রাস্তা খুঁজতেছে ওরা। আমিও ওদের সাথে যাবো ঠিক করছি, যুদ্ধে যাবো। তুমি আব্বারে বইলো।’

যে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে

‘ফুটপাথে দাঁড়িয়ে তোমরা খেলা দেখছো;

দোকানের মধ্যে টিভি স্ক্রিন।

বৃষ্টি এলো। মাথায় রুমাল।

ছাতা খুললো একজন। তিনজন তাঁর গায়ে ঘেঁষে।

একটা করে চার হচ্ছে। দূরে ফাটলো উল্লাসের বাজি।

ফিরে যাচ্ছে অল্প রানে। সমবেত গর্জন হতাশ।’

… জয় গোস্বামীর এই কবিতার মতোই ভিজতে থেকে তুমি চায়ের দোকানটার পাশের সেলুনে মুখ গলিয়েছো স্কোর জানতে, জানি। সবাই তাই করে। আড্ডা তো বাঁধা থাকে না নির্দিষ্ট কোনো রাস্তায়, কেউ কথা বলে রাজনীতি নিয়ে, কেউ বা হাঁকায় প্রোগ্রামিং, কেউ ক্লান্ত রাত জেগে রোগী দেখে এসে। শুধু একটা, কেবল একটা ধ্রুবকই পালটায়নি সেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা সন্ধ্যায় অথবা ঘামে জবজবে হয়ে বাস থেকে নেমে পনেরো মিনিট হেঁটে এসে চায়ের দোকানে পৌঁছবার পর। ‘চাচা, রান কত?’ জানতে চেয়ে তুমি শঙ্কায় কী উল্লাসে তাকিয়ে থেকেছো এগারোটা লাল-সবুজ জার্সির দিকে।

পর্দা নামার পরে

এমন কী একেবারে শেষ দৃশ্যেও নাটক। সিনেমায় যেমন হয়। বৃষ্টির প্রবল পাতে ভিজে যাচ্ছে সমবেত সুধীমন্ডলীর ফ্যাশনদুরস্ত কোট আর নিখুঁত ছাঁটের প্যান্ট, পাড়ার ফুটবলে পানিজমা কাদা মাঠে দুষ্টু ছেলের দল দৌড়ে যাচ্ছে মাথায় পতাকা চেপে ছপছপ শব্দ করে, আকাশের হস্তক্ষেপে হয়তো ঢেকে গেলো রাষ্ট্রনায়ক এবং নায়িকার চোখের আবেগ। কবে যে বিশ্বকাপের শেষ মুহুর্তে এমন হতে দেখেছি, তা স্মরণাতীত থেকে যায়।

রাশিয়ার রাত-দিন ০১

ঈদের পরের মৃতপ্রায় মনোরম ঢাকার ইস্টার্ন প্লাজার সামনে ঝুড়ি বিন্যাস্ত করে বসে থাকা মাঝারি উঁচু গাছটার গায়ে ছাপ্পড় মারা আকাশী-সাদা, আরেকটু এগিয়ে টং দোকানে চা খেতে চাই তো চারফুটের এক ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত গায়ে জার্সি ও মুখে উদ্বেগ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় খেলায় জিততে পারবে তো? ঈদের বেড়ানো মাটি করে কাজে যোগ দেবার চিন্তায় ফিরে আসা কর্মব্যস্ত অফিস-বাবুটি পর্যন্ত ভাবিত, রোনালদো শালা ওদিকে চার গোল করে ফেললো, আগের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করা মেসি এখন কী করবে?

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!