লেখালেখি

Author: সুহান রিজওয়ান Page 2 of 19

কুটি কবিরাজের জগৎ

(১)
কুটি কবিরাজ কে?

পোশাকি পরিচয় দিতে গেলে, লোকটার নাম মীর্জা শিপিহর আলি। আয়ূর্বেদিক শাস্ত্রে পন্ডিত বাপের ছিলো কবিরাজি ব্যবসা, মাইনর পর্যন্ত পড়ে শিপিহর সেখানেই ঢুকে গেলো। তারপর কবিরাজি ব্যবসায় সাফল্য। কখনো সিলেটের করিমগঞ্জ, কখনো শিলং, কখনো বীরভূমের সীতাবাড়িতে তার চেম্বার।

কিন্তু বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে মানুষটার জীবন যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, তার কারণ নিশ্চিতভাবেই শিপিহরের পেশাগত জীবন নয়। লোকে বরং তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলো ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে, যখন দীর্ঘ বিরতির পর ‘কুটি’ ডাকনামের ওই কবিরাজ হঠাৎ চিঠি পাঠায় বন্ধু তুলুকে, আর জানায়ঃ দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর ছায়ার মতো অনুসরণ করে অবশেষে জামশেদ মুস্তফিকে কব্জায় পেয়েছে সে!

আজও অ্যালান পো

(১)
টিভি-ধারাবাহিক কিংবা সিনেমার ক্ষেত্রে ‘অমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে’ কথাটা যখনই ব্যবহার করা হয়, সম্ভাব্য দর্শকদের মাঝে তখন একটা বাড়তি সাড়া পড়ে। নির্মাতার দিক থেকে ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপণ-মার্কা প্রচার, নিঃসন্দেহে। কিন্তু দর্শক যখন শোনে যে অমুক কাজটা তমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে, ধারণা করি, তার ভেতরে সেই তথ্য তখন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে দু’ভাবে। (ক) যখন সেই নির্দিষ্ট রচনাটা তার পড়া থাকে না, কেবল জানা থাকে নাম-ধাম-রচয়িতা বিষয়ক তথ্য; সে তখন ওই টিভি-ধারাবাহিক বা সিনেমা দেখে স্বাদ পেতে চায় মূল গল্পের। ভাব এমন থাকেঃ খুব তো নাম শুনছি, দেখি না- ওই হ্যারি পটার জিনিসটা কেমন। এবং (খ) যখন মূল গল্পটা তার পড়া থাকে, তখন সে জিনিসটা দেখতে চায় নিজের ভেতরের কল্পনার সাথে নির্মাতার কল্পনা কতটা মিলেছে- সেটা দেখার জন্য।

বোর্হেস বাংলাদেশে এসেছিলেন

আর্জেন্টাইন গল্পকার হোর্হে লুই বোর্হেসের সাথে বাংলাদেশের অন্ততঃ একটি সম্পর্কের কথা জানা ছিল আমার। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা চালায় এই জনপদে, জানতাম, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর মতো আরো কিছু লেখকসহ বোর্হেস সেটার বিপক্ষে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা সরকারকে। তবে সম্প্রতি বোর্হেসের সাথে বাংলাদেশের আরো একটি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছি আমি। জেনেছি, পুরাতন পুঁথির খোঁজে সত্তরের দশকে বাংলাদেশে এসেছিলেন বোর্হেস।

২০২২ এর বইঃ ডি-মাইনর

(১) যখনই কোনো উপন্যাস প্রসঙ্গে বলি আমরা, অনুমিতভাবেই আমাদের মাথায় তখন ঘুরতে থাকে উপন্যাসটা পড়বার স্মৃতি। কোন জায়গাটায় সে উপন্যাস স্পর্শ করেছে আমাদের গোপন কোনো বেদনা, কোন অধ্যায়টা আমাদের নতুন কোনো ভাবনা দিলো, কিংবা কোন জায়গাটা মনে হয়েছে একেবারে গাঁজাখুরি- বলতে বা লিখতে গেলে সেইসব ভাবনাকেই আমরা উল্টেপাল্টে দেখি রুমালের মতো। সাথে, যদি লেখকের অন্যান্য লেখার সাথে পূর্বে যাত্রার অভিজ্ঞতা থাকে আমাদের- সেটাও প্রভাব ফেলে কোনো উপন্যাসকে নিয়ে বলবার সময়।

কিন্তু যখন ঔপন্যাসিকের রচনা-প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকেন পাঠক?

না, পাঠক যদি হয় লেখকের পূর্বপরিচিত, আর সে যদি টের পায় যে এই লেখা নামানোর সময় ঔপন্যাসিক ভাবনার অমুক সড়কটায় পা দিয়েছেন- তখন কিন্তু উপন্যাসটাকে সে অন্য দশটা বইয়ের সাথে একত্রে মেশাতে পারে না। শিরায় মাদক ঢুকলে যেমন চেনা জগতের মাত্রা সংখ্যা বেড়ে যায় – ঠিক তেমনই নতুন একটা বোধ, একটা দৃষ্টিভঙ্গি তখন তার চোখের সামনে চশমার মতো এসে দাঁড়ায় উদ্দিষ্ট উপন্যাস পড়তে গেলে।

আদর্শ পাঠক আর আদর্শ পাঠাগার

 আদর্শ পাঠক নিয়ে কয়েক লাইন 

কাগজের বুকে শব্দ বসাবার ঠিক আগ মুহুর্তে লেখকই হলো আদর্শ পাঠক। সৃষ্টি মুহুর্তের ঠিক পূর্বক্ষণেই আদর্শ পাঠক বিরাজ করে।

আদর্শ পাঠক কোনো গল্পকে পুনরায় জোড়া লাগায় না, তারা গল্পটাকেই বানায় নতুন করে।

আদর্শ পাঠক গল্পকে অনুসরণ করে না, তারা গল্পের অংশ হয়ে ওঠে।

লেখকের ভাবনায় অনলাইন

একবিংশ শতাব্দীর প্রায় কোয়ার্টার সেঞ্চুরি পেরিয়ে অনলাইনকে কেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের লেখকেরা?

সত্যি বলতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুবাদে পছন্দের লেখকদের অনুসরণ করা পাঠকের জন্য এখন আর দুরুহ নয়। অনলাইনের কর্মকান্ড দেখেই আমরা অনলাইন প্রসঙ্গে কোনো লেখকের মনোভাবের একটা গড় আন্দাজ পাই। তবু, অনুভব করি- সরাসরি তাদের এ সংক্রান্ত ভাবনা শুনতে পারলে আরও ভালো হয়।

ব্যক্তিগত এই ওয়েবসাইটের ৫ বছর পূর্তিতে আমি তাই চেনা কজন সমকালীন লেখকের কাছে হাজিরা দেই অনলাইন ব্যবহারের পেছনে তাদের ভাবনাটা জানতে। সচরাচর কী করেন তারা মূলতঃ ফেসবুক ভারাক্রান্ত অনলাইন জীবনে, কীভাবে অনলাইনে পাঠকের সাথে তারা মিথস্ক্রিয়া করছেন, সেই সক্রিয়তা কীভাবে প্রভাব ফেলছে তাদের লেখার অভ্যাসে- এমন সব প্রশ্ন করে বুঝে নিতে চাই তাদের অনলাইন ব্যক্তিত্বের ধাঁচটাকে।

‘আপনি কীভাবে উপন্যাস লেখেন?’

এটা, নিঃসন্দেহে, ঔপন্যাসিকদের প্রতি মানুষের সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত প্রশ্নগুলোর একটা। কে জিজ্ঞেস করছে, তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে সর্বদাই একটা সন্তোষজনক উত্তর দিতে হয়। এখানেই শেষ নয়, উত্তর দেয়ার সময় প্রতিবার সেখানে আনতে হয় কিছু বৈচিত্র্যও। শুধু আনন্দের জন্যে না, বরং- যেমনটা লোকে বলে- সত্য খুঁজে পাবার সম্ভাবনাটাকে বাঁচিয়ে রাখতেও। কারণ একটা ব্যাপার আমি নিশ্চিত জানি, যে কীভাবে উপন্যাস লেখা হয় প্রশ্নটা যারা করে, তারা নিজেরাও ঔপন্যাসিক। এবং আমরা প্রতিবারই নিজেকে একটা ভিন্ন উত্তর দেই।

Page 2 of 19

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!