গল্পগ্রন্থ ‘নয়পৌরে’ প্রকাশ হতে যাচ্ছে অচিরেই, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী থেকে। মনে হলো, তার আগে দু’চার কথা বলে নেই ওয়েবসাইটে।
বাইরের দেশে লেখকের ওয়েবসাইটের আলাদা মাহাত্ম্য আছে। লোকে সেখানে ওয়েবসাইট ঘেঁটে লেখকের কথাবার্তা কি তার কাজের হালনাগাদ জেনে নেয়। কোনো জরিপ করা হয়নি, কিন্তু পাঠকদের কোনো তথ্য পৌঁছে দিতে বাংলাভাষী লেখকদের মূল ভরসা বোধ করি, হয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়াই। বিপণন বা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর পেশাদারিত্ব হয়তো লেখকদের ওপর থেকে এই কাজের কিছুটা সরাতে পারে।
… থাক এসব আলাপ। ‘নয়পৌরে’ নিয়েই কথা বলি।
যে সময়ে লেখা হয়েছিলো উদ্দিষ্ট সংকলনের গল্পগুলো, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-বাস্তবতা তখন ভিন্ন ছিলো। এখন যেমন কোথাও দু’দন্ড বসলেই রাজনৈতিক মত, অনুমান এবং অবস্থান নিয়ে কথাবার্তা এড়ানোর উপায় থাকে না, বিগত মে-জুন মাসে অবস্থাটা তেমন ছিলো না। তেমন একটা সময়েই বইয়ের গল্পগুলো লেখা। নয়টা গল্পের কেন্দ্রীয় বিষয় একঃ ভয়।
‘ভয়’ নামের আদিম অনুভূতিটি মানুষের পিছু ছাড়ে না কখনোই। আবার ভয়ের পেছনের কারণটা যদি হয় ব্যাখ্যাহীন, তাহলে ভয় পরিণত হয় আতঙ্কে। এবং, আতঙ্ক অনুভূতিটাই সম্ভবতঃ সবচেয়ে দ্রুত এলোমেলো করে ফেলে মানুষকে। তার আটপৌরে জীবনের সাজানো ছকও মুহুর্তে বদলে যায় আতঙ্কের মুখোমুখি হলে।
‘নয়পৌরে’ যখন লিখেছি, আমার অচেতন মন তখন— ধারণা করি— চারপাশের অতি-চেনা উপাদান থেকে কোনো ব্যাখ্যাহীন পরিস্থিতি খুঁজে নিয়েছে। আর সচেতন মন সেই সম্ভাব্য পরিস্থিতিকে দিয়েছে একটা হরর গল্পের আবহ।
এখানে বোধ করি, ‘হরর’ শব্দটা নিয়েও একটু কথা বলা দরকার। হরর মানে ঠিক ভৌতিক নয় আমার কাছে, হরর মানে— যা ভয় পাওয়ায়। অপরিচিত ভাষার একটা শহরে হাতের মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়াটাও আমার কাছে হরর গল্প। প্রিয় লেখকদের অনেকেই চেনা পরিসরে এই ঘরানার গল্প খুব ভালো মতো ফাঁদতে পারেন। বিশেষ ভাবে মনে পড়ছে হুমায়ূন আহমেদ আর স্টিফেন কিং-এর কথা।
একবিংশ শতাব্দীর জীবনে প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক এখন দূরের, বলতে গেলে সর্বক্ষণই আমরা এখন বাস করি মানুষ-সৃষ্ট পরিবেশে। ফলে, ভয় পেতে গ্রামের পোড়োবাড়ি কিংবা বনের মাঝে ক্যাম্পিং-এ যাওয়াটা আমাদের আর হয়ে ওঠে না আজকাল। কিন্তু তবুও তো আমরা ভয় পাই! কখনো অচেনা কোনো রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে থেকে ভয় পাই; কখনো ভয় পাই লিফটে আটকে পড়ে; মনের কাছে মিথ্যা না বললে, আলোকিত কফিশপে মুঠোফোনের অলস স্ক্রলিং-এর মুহুর্তেও আমরা কখনো ভয় পাই মনের ভেতর উদ্ভট কোনো পরিস্থিতি ভেবে নিয়ে। এ যুগের হরর গল্প তাই, আমার মতে হওয়া উচিৎ এমনঃ যা ঘোরতর ওইসব নাগরিক পরিস্থিতিতেও আমাদের মনের ব্যাখ্যাহীন ওইসব ভয়কে উস্কে দিতে পারে।
নয়পৌরে’ সংকলনের গল্পগুলো খুঁজতে চেয়েছে তেমন কিছু ব্যাখ্যাহীনতার সম্ভাবনাই। আর তার জন্য তারা আশ্রয় করেছে কখনো ফ্যান্টাসি, কখনো অতি-চেনা প্রযুক্তি আর কখনো অতিপ্রাকৃত কিছুকে।
আশা করি হরর-প্রেমী পাঠকরা ওই গল্পগুলো উপভোগ করবেন। অলম অতি বিস্তরেণ।
[নভেম্বর, ২০২৪]
প্রিয় পাঠক,
কয়েক বছর ধরে একক শ্রমে গড়ে তোলা এই ওয়েবসাইটকে আমি চেষ্টা করেছি অগণিত বাংলাভাষী ওয়েবপোর্টালের মাঝে স্বতন্ত্র করে তুলতে। নানা স্বাদের এসব লেখা নির্মাণে আমাকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে যথেষ্ট সময় আর শ্রম। এছাড়াও, পাঠক, আপনি এসব লেখা পড়তে পারছেন কোনো ধরনের বিজ্ঞাপণের উৎপাত ছাড়াই।
কাজেই প্রিয় পাঠক, স্বেচ্ছাশ্রমের এই ওয়েবসাইট চালু রাখতে প্রয়োজন হচ্ছে আপনার প্রণোদনার। আমরা চাইঃ এই সাইটের কোনো লেখা যদি আনন্দ দেয় আপনাকে, কিংবা আপনার উপকারে আসে- সেক্ষেত্রে ০১৭১৭ ৯৫৩০৮৭ (Personal) নাম্বারে বিকাশ (bKash) করে আপনি প্রণোদনা দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করবেন।
আপনার সামান্য উৎসাহ বাংলাভাষী অন্তর্জালকে করে তুলতে পারে আরও আকর্ষণীয় লেখায় সমৃদ্ধ!
Leave a Reply