(১)
টিভি-ধারাবাহিক কিংবা সিনেমার ক্ষেত্রে ‘অমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে’ কথাটা যখনই ব্যবহার করা হয়, সম্ভাব্য দর্শকদের মাঝে তখন একটা বাড়তি সাড়া পড়ে। নির্মাতার দিক থেকে ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপণ-মার্কা প্রচার, নিঃসন্দেহে। কিন্তু দর্শক যখন শোনে যে অমুক কাজটা তমুক লেখকের রচনা অবলম্বনে, ধারণা করি, তার ভেতরে সেই তথ্য তখন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে দু’ভাবে। (ক) যখন সেই নির্দিষ্ট রচনাটা তার পড়া থাকে না, কেবল জানা থাকে নাম-ধাম-রচয়িতা বিষয়ক তথ্য; সে তখন ওই টিভি-ধারাবাহিক বা সিনেমা দেখে স্বাদ পেতে চায় মূল গল্পের। ভাব এমন থাকেঃ খুব তো নাম শুনছি, দেখি না- ওই হ্যারি পটার জিনিসটা কেমন। এবং (খ) যখন মূল গল্পটা তার পড়া থাকে, তখন সে জিনিসটা দেখতে চায় নিজের ভেতরের কল্পনার সাথে নির্মাতার কল্পনা কতটা মিলেছে- সেটা দেখার জন্য।
বলা বাহুল্য, নির্মাতাদের বড় সমালোচকেরা সবসময়ই অবস্থান করে খ শ্রেণিতে। কারণ স্বাভাবিক, নিজের ভেতরে কোনো গল্প পড়ার সময় পাঠক যে মনো-সিনেমা নির্মাণ করে, নির্মাতার সাধ্য কী তার সাথে পাল্লা দেয়? ফলে, উদ্দিষ্ট টিভি-ধারাবাহিক (বা, সিনেমাটা)কে একটা পৃথক, স্বাধীন শিল্প হিসাবে বিচার করাটা দর্শকের পক্ষপাতপূর্ণ মনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
কোনো সাহিত্য-অবলম্বনে নির্মিত টিভি-ধারাবাহিক (বা, সিনেমা)কে এই জায়গায় একটা চমৎকার সুযোগ এনে দেয় স্বাঙ্গীকরণ (নাকি আত্মীকরণ বলবো?) বা অ্যাডাপটেশন। নির্মাতা এক্ষেত্রে মূল গল্পটা গ্রহণ করেন ঠিকই, তারপর সেটাকে স্থাপন করেন ভিন্ন কোনো কাল-চরিত্র-অবস্থানের প্রেক্ষিতে। গল্পটা পড়ে আসা বিজ্ঞ দর্শকও তখন গল্পটাকে নতুন করে আবিষ্কার করার মজা পায় আরেকটা মোড়কে।
তবে, অধিকাংশ আত্মীকরণও একদম পরিতৃপ্ত হবার মতো অনুভূতি দেয় না পাঠক-দর্শককে। আর্থার কোনান ডয়েলের হোমসকে নিয়ে বানানো গত দশকের সাড়া জাগানো ধারাবাহিক ‘শার্লক’-এর কথা বলা যায় এই ক্ষেত্রে। নির্মাতা মার্ক গেটিস আর স্টিভেন মোফাট খ্যাতনামা ওই গোয়েন্দা-চূড়োমণিকে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক লন্ডনে নিয়ে এসেছিলেন দুর্দান্ত মুন্সিয়ানায়। কিন্তু প্রথম দিকের ‘স্ক্যান্ডাল ইন বেলগ্রাভিয়া’ বা ‘স্টাডি ইন পিংক’ পর্বগুলোয় যেমন চমৎকার আত্মীকরণ দেখা গেছে ওই ধারাবাহিকে, পরের গল্পগুলো যেন তার সাথে তাল মেলাতে পারেনি। কোনান ডয়েলের শার্লকের বদলে আমরা যেন দেখেছি গেটিস আর মোফাটের শার্লককেই।
কাজেই যখন শুনলাম হরর-নির্মাতা মাইক ফ্ল্যানাগান নেটফ্লিক্সের পর্দায় এডগার অ্যালান পো’কে নিয়ে এসেছেন, মূল গল্প বলে নয়- আত্মীকরণ করে; আগ্রহী হবার সাথে সাথে যে খানিকটা শঙ্কিতও হইনি, তা নয়। কিন্তু ফ্ল্যানাগান, আমাকে অন্ততঃ, আগাগোড়া মুগ্ধ করে গেছেন এইবার। সেই যে শার্লকের প্রথম পর্বে মাইক্রোস্কোপে চোখ দিয়ে রাখা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের মুখে ‘আফগানিস্তান অর ইরাক?’ প্রশ্নটা শোনা মাত্র আটকে গেছিলাম ল্যাপটপের পর্দায়, ‘দা ফল অফ দা হাউজ অফ উশার’ দেখতে বসে এবার ঠিক তেমন করেই আটকে গেলাম ইউএস এটর্নি অগাঁস্ত দ্যুঁপোর নাম খোদাই করা ওই ছোট্ট বোর্ডটা পর্দায় আসার পর।
মাইক ফ্ল্যানাগানকে উপলক্ষ করে, মৃত্যুর দেড়শো বছর পরেও এডগার অ্যালান পো আরও একবার পাঠক-দর্শককে মুগ্ধ করে ফেললেন তার নিজস্ব কালোযাদুতে।
(২)
শৈশবে যখন প্রথমবার পড়েছি অ্যালান পো’কে, সত্যি কথাই হচ্ছে, তার গল্প বলায় মুগ্ধ হলেও একরকম অস্বস্তিও অনুভব করেছি সাথে সাথে। কাছাকাছি ধরনের একটা অস্বস্তি হতো যখন এমন কোনো ‘বড়দের বই’ পড়তাম, যার সবটুকু আমি বুঝতে পারছি না। পো’র ক্ষেত্রেও সেই পুরো বুঝতে না পারার ব্যাপারটা থাকতো। অলৌকিক বা টানটান উত্তেজনার উপাদান আসার আগ পর্যন্ত পো’র গল্পেরা বাস্তবের পৃথিবীতেই থাকে, কিন্তু একই সাথে, পো’র বর্ণনারীতিতে এমন কিছু থাকে- যাতে করে মনে হয় পুরো ব্যাপারটা নিশ্চিতভাবেই ঘটছে কারো স্বপ্নে। অর্থাৎ, গোটা ব্যাপারটাই কারো স্বপ্নও হতে পারে- এমন একটা ধোঁকা দেওয়া ব্যাখ্যা যেন পো’র রচনার মাঝেই সন্নিবিষ্ট।
আবিষ্কার করেছি পরে, মনের ওই অবচেতন – স্বপ্নের মতো দূরবর্তী- স্তরকে আলোড়িত করে যাওয়ার ব্যাপারটা কেবল আমার মতো নাদান পাঠকের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। সমালোচকেরাও নানা বকবক করেছেন ওই নিয়ে।
ইংরেজ সাহিত্যের রোমান্টিক আন্দোলনের দিকে যদি চোখ বুলানো হয়, তবে উনবিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার একজন কবির নাম উঠে আসবেই। কোলরিজ। সেই কোলরিজ, যার কবিতা ঘোরাফেরা করেছে প্রকৃতির ব্যাখ্যাহীন রহস্যময়তার সাথে মানুষের নিয়তির একটা সংযোগ স্থাপন করে; সমালোচকেরা বলেন- এডগার অ্যালান পো দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন ওই কোলরিজের দ্বারা। ‘এনশিয়েন্ট মেরিনার’এর কবিতার সঙ্গে অ্যালান পো’র ‘আর্থার গর্ডন পিম’ উপন্যাসিকাকে মিলিয়ে দেখলে ওই প্রভাবের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে সচেতন পাঠকের দেরি হয় না (মজার ব্যাপার, ওই ‘আর্থার গর্ডন পিম’ রচনাটা আবার আরেক মহান লেখককে এমন প্রভাবিত করেছিল, যে তা নিয়ে তিনি একটা সিক্যুয়েল পর্যন্ত লিখে ফেলেছিলেন এরপর! সেই লেখকের নাম? জুলভার্ন! তার রচনাটার নাম কী, সেটা বের করার দায়িত্ব আগ্রহীদের ওপর ছেড়ে দিলাম!)।
… ইতিহাসের কচকচানি থেকে আবার ফিরে আসি অ্যালান পো’র সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়ায়। শৈশবের ওই প্রথম পাঠের পর নানা জনের অনুবাদে, নানা সংস্করণে আরো বহুবার মুখোমুখি হয়েছি অ্যালান পো’র গল্পের। এবং ধীরে ধীরে আবিষ্কার করেছি, অ্যালান পো’র কথাসাহিত্যকে- আমি নিজে মোটাদাগে ভাগ করি তিন গোত্রে।
একটা ভাগে থাকে অগাঁস্ত দ্যুঁপোকে নিয়ে লেখা তার ওই তিনটে গল্প (সেই অগাঁস্ত দ্যুঁপো, যাকে বলা যায় সাহিত্যের গোয়েন্দাদের আদিপুরুষ)। একটা ভাগকে বলা যায় অলৌকিকতা মেশানো ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’ ঘরানা (এই ঘরানার গল্পগুলোয় প্রোটাগনিস্ট তার কোনো পাপ বা অপরাধের শাস্তি পায়, একরকম অলৌকিক উপায়ে)। আর একটা ভাগ একেবারেই পাঁচমিশালি; সেখানে অভিযান থেকে শুরু করে অস্তিত্ববাদ- সবই আছে।
তবে মাইক ফ্ল্যানাগানের ওয়েব-ধারাবাহিকটা, নিজেকে একাগ্র রেখেছে মূলত ওই দ্বিতীয় ভাগের গল্পগুলোকে নতুন করে আবিষ্কার করাতে। ফ্ল্যানাগানের কাহিনিতে অগাঁস্ত দ্যুঁপো আছে, আছে আর্থার গর্ডন পিম, এমনকি অ্যালান পো’র বহুমুখী প্রতিভার সাক্ষ্য দিয়ে যাওয়া আলোচিত কিছু কবিতা (‘অ্যানাবেল লি’ বা ‘র্যাভেন’) পর্যন্ত ক্যামিও দিয়ে গেছে পর্দায়, কিন্তু আদতে গল্প সেখানে একটাই। ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট। পাপ, এবং পরিণতিতে অলৌকিক উপায়ে শাস্তিপ্রাপ্তি।
(৩)
‘দা ফল অফ দা হাউজ অফ উশার’ ধারাবাহিকের কেন্দ্রে আছে দুই ভাই-বোন, রডেরিক এবং ম্যাডেলিন উশার। বেদনানাশক এক ড্রাগ, যা প্রকৃতপক্ষে অতিদ্রুত আসক্তি জন্মায় রোগীদের মাঝে- তার মাধ্যমে ফার্মাসিউটিকাল জগতের বিশাল মাফিয়া হয়ে আছে উশারেরা। বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে, ডাক্তারদের পয়সা দিয়ে আর আইনকে পকেটে পুরে উশারেরা এখন রীতিমতো রকফেলার পরিবারের সমতুল্য। কিন্তু তাদের বেআইনি ওই ব্যবসার পেছনের কারসাজি উন্মোচন করতে দীর্ঘদিন ধরে লেগে আছে সরকারি উকিল অগাঁস্ত দ্যুঁপো।
ম্যাডেলিন নিঃসন্তান, কিন্তু রডেরিক ছয় সন্তানের পিতা। দুই সন্তানের জন্ম তার প্রথম প্রেম, অ্যানাবেল লি-এর গর্ভে। বাকি সন্তানেরা- সোজা বাংলায় বললে, জারজ। অথচ, হঠাৎ করেই একে একে সব কটা সন্তান মারা পড়ে রডেরিকের। কাহিনির শুরু হয়, যখন অগাঁস্ত দ্যুঁপোকে ডেকে পাঠায় রডেরিক উশার। বাদলের এক রাতে, নির্জন- প্রায় পরিত্যাক্ত এক বাংলোয় অগাঁস্ত দ্যুঁপোকে নিজের ইতিহাস শোনাতে থাকে রডেরিক। বলতে থাকে, তার সাফল্যের রহস্য, জানায়ঃ কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তার সন্তানদের।
ফ্ল্যানাগানের ওয়েব-ধারাবাহিকের ধারাবাহিকটা এগিয়ে যায়, রডেরিকের মুখে কাহিনি শুনতে শুনতেই। আমরা দেখি, অ্যালান পো’র গল্পে দেখিয়ে যাওয়া রাস্তায় প্রত্যেক পর্বে এক-একজন উশার সন্তানের মৃত্যু।
(৪)
একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে স্থাপন করা হলেও, একেবারে শুরু থেকেই এডগার অ্যালান পো’র স্বপ্ন (বলা ভালো, দুঃস্বপ্ন)-মুখর জগতটা ডানা মেলে থাকে ফ্ল্যানাগানের সিরিজে। মনে হতে থাকে, স্থান-কালের বাইরে থাকা কোনো দুনিয়াতে ঘটছে এই ঘটনাগুলো। হরর কাহিনিতে বহুল ব্যবহৃত জাম্প-স্কেয়ারের মতো কায়দা তো আছেই, সাথে ফ্ল্যানাগানের একটা দারুণ সাফল্য থাকে চরিত্রদের কর্মকান্ডকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারায়। যৌন জীবন থেকে পেশাগত জীবনে রডেরিক উশারের সন্তানেরা প্রত্যেকেই গড়পড়তা মানুষের চাইতে এমন দূরে- যে দর্শকের মনে তারা যথেষ্ট চাপ তৈরি করে। গল্পকথক রডেরিকের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি জাগলেও তার সন্তানদের কর্মকান্ড এমন ভাবে এগোয়, দর্শক যেন নিজেও বিশ্বাস করতে থাকে ভয়াল এক পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
প্রথম এবং শেষ পর্বের নামকরণের পেছনে আছে পো’র সেই তুমুল বিখ্যাত কবিতা ‘দা র্যাভেন’, এছাড়া বাকি সবগুলো পর্বের নাম রাখা হয়েছে পো’এর বিখ্যাত সব গল্পের নামে। এবং নামকরণগুলো এতো সার্থক, বোধ করি- ওই গল্পগুলো আরেকবার পড়ে নিয়ে সিরিজটা দেখতে বসলে দর্শকের আনন্দ বেড়ে যেবে একশো গুণ! বিশেষভাবে বলতে হয় ‘দা মাস্ক অফ দা রেড ডেথ’ আর ‘দা পিট এন্ড দা পেন্ডুলাম’ পর্বদুটোর কথা।
ব্যক্তিগতভাবে আমার দারুণ প্রিয় গল্প ‘দা টেল-টেইল হার্ট’ নামের পর্বটা নিয়ে অবশ্য কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে। অপরাধবোধটা সেখানে আরো কিছু তীব্র হতে পারতো। খানিক অন্যরকম হতে পারতো ‘দা ব্ল্যাক ক্যাট’ পর্বটার প্রথম অঙ্কটাও ।
(৫)
যেমনটা বলেছি আগেই, আত্মীকরণে অ্যালান পো’র জগতকে দারুণভাবে ধারণ করতে পেরেছে এই ধারাবাহিক। পর্বের নামকরণের মতো মূল চরিত্রগুলোর নামও অনুমিত ভাবেই পো’থেকে নেওয়া। বাদ যায়নি পার্শ্ব-চরিত্ররাও। যেমন, রডেরিক কন্যা ট্যামারলিনের সঙ্গী যে ফিটনেস-ফ্রিক পুরুষটি, তার নাম বিল উইলসন (সূত্র হিসেবে পড়া যায় পো’র গল্পঃ উইলিয়াম উইলসন)। বলাই বাহুল্য, ট্যামারলিন যে ভাবে মারা গেলো আয়না দেখতে দেখতে, খেয়াল করলে দেখা যায়, অস্তিত্ববাদী সেই যন্ত্রণাই উইলিয়াম উইলসন গল্পের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল।
এছাড়াও, অনেকগুলো ছোট ছোট জায়গাতে পো’র জগতের প্রতি নৈবেদ্য রেখে গেছেন ফ্ল্যানাগান। উল্লেখ করি অল্প কয়েকটা কেবল। জীবদ্দশায়, এমনকি মৃত্যুর পরেও পো’র সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন যে রুফাস গ্রিসোয়াল্ড, তাকে দেখানো হয়েছে রডেরিক উশারের উলটোদিকে থাকা খলনায়ক হিসেবে। সেই গ্রিসোয়াল্ডের যে কোম্পানিটা দখল করে নেয় উশারেরা, কী নাম সেই কোম্পানির? ফরচুনাটো (গল্পঃ কাস্ক অফ অ্যামন্টিয়াডো)।
সংলাপে পো’এর বিভিন্ন কবিতার পংক্তি উঠে আসাটাও খুব মানানসই হয়েছে। দারুণ লেগেছে উশারদের পারিবারিক উকিল হিসেবে আর্থার গর্ডন পিম’কে যুক্ত করাটাও। দর্শকের বিশেষ প্রাপ্তি এই চরিত্রে লিউক স্কাইওয়াকার-খ্যাত মার্ক হ্যামিলের অভিনয়। কেন্দ্রীয় চরিত্র রডেরিক উশারের চরিত্রে ব্রুস গ্রিনউড চমৎকার (লেমোনেড তৈরির ওই দীর্ঘ সংলাপ তো মোটামুটি বাঁধিয়ে রাখার মতো!), কিন্তু তাকে প্রায় ছাপিয়ে গেছেন ‘ভার্না’ চরিত্রে বারবার নিজেকে পালটে ফেলা কার্লা গুগিনো। আর ‘ভার্না’ শব্দটা যে ‘র্যাভেন’ শব্দটাকেই উল্টেপাল্টে বানানো, সেটা নিশ্চয়ই কারো চোখই এড়ায়নি!
(৬)
নামজাদা লেখকদের কাজকে নিয়মিতই পর্দায় নিয়ে আসেন মাইক ফ্ল্যানাগান, ভাগ্য হয়েছে তার আরো কিছু কাজ দেখারও। তবে এবার তাকে আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়, কারণ ‘দা ফল অফ দা হাউজ অফ উশার’ দেখতে বসে পড়ুয়া-দর্শকের প্রায় কখনোই মনে হয় না যে সে ফ্ল্যানাগানের কোনো ফেনানো কাহিনি দেখছে। বরং সাহিত্যকর্মকে পর্দায় আত্মীকরণের যে মূল ব্যাপারটা- লেখকের রচনার নির্যাসটাকে বুঝে নিয়ে সেটাকে পুনর্লিখন, ফ্ল্যানাগান সেই পরীক্ষায় রীতিমতো ‘এ প্লাস’ পেয়ে পাশ করে গেছেন।
মনে হয়েছে, হরর-জঁরার বাণিজ্যিক টোপগুলোর চিরচেনা উপস্থিতি সত্ত্বেও ‘দা ফল অফ দা হাউজ অফ উশার’ এর কাহিনিটা দর্শককে আরো বৃহত্তর কোনো জগতের হাতছানি দেয়। অ্যালান পো’র মতোই, সে জগতে অবিরাম বাজতে থাকে একটা পৌরাণিক সুর। সেখানে প্রলোভন আর প্রবৃত্তির মতো দুই সহচর অবিরাম মানুষের সঙ্গী হয়ে থাকে কানাগলি থেকে আলোকিত ভোজসভায়। এবং আয়নার দিকে তাকিয়ে পরাজিত মানুষ একদিন হঠাৎ বুঝে যায়, তার আর শয়তানের মাঝে এখন তেমন কোনো প্রভেদ নেই।
বাইবেলীয় সেই সুরকে আরো একবার নতুন করে উপস্থাপন করায় ফ্ল্যানাগানকে ধন্যবাদ। তাকে ধন্যবাদ, টিন্ডার আর টুইটারের জগতে আজও অ্যালান পো’র প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করে দেওয়ায়।
[অক্টোবর, ২০২৩]
প্রিয় পাঠক,
কয়েক বছর ধরে একক শ্রমে গড়ে তোলা এই ওয়েবসাইটকে আমি চেষ্টা করেছি অগণিত বাংলাভাষী ওয়েবপোর্টালের মাঝে স্বতন্ত্র করে তুলতে। নানা স্বাদের এসব লেখা নির্মাণে আমাকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে যথেষ্ট সময় আর শ্রম। এছাড়াও, পাঠক, আপনি এসব লেখা পড়তে পারছেন কোনো ধরনের বিজ্ঞাপণের উৎপাত ছাড়াই।
কাজেই প্রিয় পাঠক, স্বেচ্ছাশ্রমের এই ওয়েবসাইট চালু রাখতে প্রয়োজন হচ্ছে আপনার প্রণোদনার। আমরা চাইঃ এই সাইটের কোনো লেখা যদি আনন্দ দেয় আপনাকে, কিংবা আপনার উপকারে আসে- সেক্ষেত্রে ০১৭১৭ ৯৫৩০৮৭ (Personal) নাম্বারে বিকাশ (bKash) করে আপনি প্রণোদনা দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করবেন।
আপনার সামান্য উৎসাহ বাংলাভাষী অন্তর্জালকে করে তুলতে পারে আরও আকর্ষণীয় লেখায় সমৃদ্ধ!
Leave a Reply