একবিংশ শতাব্দীর প্রায় কোয়ার্টার সেঞ্চুরি পেরিয়ে অনলাইনকে কেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের লেখকেরা?

সত্যি বলতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুবাদে পছন্দের লেখকদের অনুসরণ করা পাঠকের জন্য এখন আর দুরুহ নয়। অনলাইনের কর্মকান্ড দেখেই আমরা অনলাইন প্রসঙ্গে কোনো লেখকের মনোভাবের একটা গড় আন্দাজ পাই। তবু, অনুভব করি- সরাসরি তাদের এ সংক্রান্ত ভাবনা শুনতে পারলে আরও ভালো হয়।

ব্যক্তিগত এই ওয়েবসাইটের ৫ বছর পূর্তিতে আমি তাই চেনা কজন সমকালীন লেখকের কাছে হাজিরা দেই অনলাইন ব্যবহারের পেছনে তাদের ভাবনাটা জানতে। সচরাচর কী করেন তারা মূলতঃ ফেসবুক ভারাক্রান্ত অনলাইন জীবনে, কীভাবে অনলাইনে পাঠকের সাথে তারা মিথস্ক্রিয়া করছেন, সেই সক্রিয়তা কীভাবে প্রভাব ফেলছে তাদের লেখার অভ্যাসে- এমন সব প্রশ্ন করে বুঝে নিতে চাই তাদের অনলাইন ব্যক্তিত্বের ধাঁচটাকে।

নাতিদীর্ঘ সে সব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেনঃ
• শিবব্রত বর্মন (কথাসাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার, অনুবাদক)
• মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক)
• মোজাফ্‌ফর হোসেন (কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক)
• বর্ণালী সাহা (কথাসাহিত্যিক)
• মুরাদুল ইসলাম (লেখক)
• এনামুল রেজা (কথাসাহিত্যিক)

মূল্যবান সময়টুকু দেয়ার জন্য তাদের জানাই অজস্র ধন্যবাদ।

আর একটি বিশেষ ধন্যবাদ থাকলো তারেক নুরুল হাসানের জন্যও- সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো তৈরিতে যিনি সাহায্য করেছেন, আর লেখালেখির যাত্রায় যিনি আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে! 

প্রশ্নোত্তর পর্ব 

সুহানের প্রশ্ন ০১
দুনিয়ার নানা দেশে লেখকদের নিজস্ব ওয়েবসাইট এখন বেশ সাধারণ ব্যাপার। অথচ বাংলাদেশে সেটার চল কম। ওয়ার্ডপ্রেস বা ব্লগারের সৌজন্যে ফ্রি-তেই কিন্তু লেখকরা নিজের সাইট তৈরি করতে পারেন। অথচ বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত লেখক অনলাইন মাধ্যম হিসেবে কেবল ফেসবুকের প্রতিই ভীষণ অনুরাগী। আপনিও যেমন বিভিন্ন বিষয়ে মতামত, বই বা সিনেমা নিয়ে প্রতিক্রিয়া, সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু – এসব নিয়ে আলাপ করার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করেন। এর কারণ কী? শুধুই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া?

উত্তরমালাঃ

শিবব্রত বর্মণ
ফেসবুকে আমি খুব যে সক্রিয়, তেমন না। তবে বিভিন্ন সময় নানান বিচ্ছিন্ন চিন্তা, তুলার মতো উড়তে থাকা কোনো ভাবনা, কোনো বই পড়া বা সিনেমা দেখা থেকে তৈরি হওয়া তাৎক্ষণিক কথা ইত্যাদি ধরে রাখার ইচ্ছা থেকে ফেসবুকে আঁচড় কাটার মতো কিছু একটা পোস্ট দেই। এভাবে যে ফেসবুককে আমি ব্যক্তিগত ব্লগের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছি, এটা লক্ষ্য করিনি।

ফেসবুকে আমার এ ধরনের সক্রিয়তার পেছনে প্রধান কারণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার আকর্ষণ। বন্ধুবান্ধবরা লাইক দেয়, কমেন্ট করে। সেটা অবশ্যই প্রধান প্রাপ্তি। এর বিপরিতে আছে নিজস্ব একটা ওয়েবসাইট বা ব্লগ খোলার কারিগরি জ্ঞানের অভাব, আলস্য, অপরিচয়জনিত অনিচ্ছা – সর্বোপরি উদ্যমের অভাব। তবে এটা সবসময়ই অনুভব করে এসেছি, একটা ব্যক্তিগত ব্লগ থাকলে মন্দ হতো না। আর সেখানে যা লিখতাম, অবশ্যই সেগুলো অন্যরকম হতো। ফেসবুকে যা লিখি, সেরকম না।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
আমাদের এখানকার লেখকেরা ঠিক পেশাদার না, ফলে যা হয়, যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক না- এমন একটা মনোভাব আছে। নিজের লেখা নিয়ে, লেখালেখির ক্যারিয়ার নিয়ে কেউ খুব বেশি ভাবে বলেও মনে হয় না। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। ফলে যেটা হয়, কোনো রকম পরিকল্পনার ছাপ থাকে না। লেখকদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বানানোটা যে ভীষণ জরুরি, এটা কম লেখকই বোঝে। ফেসবুকের মতো অনেক বেশি সহজ আর খরচবিহীন মাধ্যম হাতের নাগালে আছে বলে ওয়েবসাইটের দিকে আগ্রহ দেখানো কমই দেখা যায়। ওয়ার্ডপ্রেস বা এরকম কিছুর কথাও খুব কম লেখকই জানে। জানার এই ঘাটতিটাও আছে। আমি নিজেও এরমধ্যে পড়ি। পরিচিত এক ছোটভাই-ভক্ত আমার নামে ওয়েবসাইট করে দিয়েছে, কিন্তু খুব কমই সেখানে ঢুঁ মারি। আগে আমি ফেসবুকেও খুব কম সক্রিয় ছিলাম, ইদানিং পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করা বাড়িয়ে দিয়েছি, সেটাও কোনো রকম পরিকল্পনা কিংবা উদ্দেশ্য থেকে নয়, আমার কলকাতার প্রকাশকসহ বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষজনের পরামর্শে করছি। আর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা, প্রতিবাদ করা- এগুলো মূলতঃ শুরু থেকেই করতাম, এখানেও বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে আসার কারণে আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি। গোয়েন্দাসংস্থার লোকজনের কাছে জবাবদিহি করতে ভালো লাগে না।

মোজাফ্‌ফর হোসেন
ভালো প্রশ্ন। এক অর্থে আমরা, মানে বাংলাদেশের লেখকরা এক্ষেত্রে পিছিয়ে। বিষয়টি কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা দাবি করে। ‘লিটারারি কালচার’ বিকশিত না হওয়ার কারণে আমাদের লেখকদের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাইরের লেখকদের মতো আমরা সমষ্টিগত জায়গা থেকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনা আর একটা ওয়েবসাইট পরিচালনা এক বিষয় না। হ্যাঁ, ফ্রি করা যায়। কিন্তু বিদেশে অনেক লেখকের প্রফেশনাল ওয়েবসাইটও থাকে। সেখানে অধিকাংশ সময় থার্ড পার্টি এসব ওয়েবসাইট পরিচালনা করে। ইউরোপ আমেরিকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত লেখকের ফেসবুক পেইজও থার্ড পার্টি দেখে। সাহিত্য ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়ালে অনেক কিছু করা সম্ভব। ধরুন, হাসান আজিজুল হকের মতো লেখকের কাজ না নিজের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করা। প্রতিষ্ঠিত লেখকের ক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাউকে নিযুক্ত করে লেখকের সার্বিক কাজের প্রচারণার জন্য ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে ফেইসবুক পেইজ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতি পরিচালনা করা উচিত। কিন্তু আমাদের এখানে লেখকের সঙ্গে একক কোনো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকে না যে সেই প্রতিষ্ঠান এই দায়ভার বহন করবে। তার মানে লেখক কর্তৃক নিযুক্ত কেউ সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে। সেক্ষেত্রে লেখকের উপর একটা বাড়তি চাপ চলে আসে। লেখকের মার্কেটিংয়ে ওয়েবসাইটের উপযোগিতার দিক থেকে এটা বলা। ওয়েবসাইটে কোনো লেখক যখন তাঁর লেখার ইংরেজি অনুবাদ আপলোড করেন তখন বিদেশি পাঠকের জন্য সুবিধা হয় তাঁকে পাঠ করা। আমি সম্প্রতি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত অনুবাদ পত্রিকার দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ভারত বাদে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ আমরা খুব বেশি পাই না লেখকদের ওয়েবসাইট না থাকার কারণে। বিদেশ থেকে কেউ বাংলা ভাষার সাহিত্য ইংরেজি অনুবাদে পড়তে চাইলে গুগলে সার্চ করে সেগুলোই পাবে যাদের কন্টেন্ট ইন্টারনেটে আছে। সেই শর্তে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের সাহিত্য বিদেশিদের জন্য অন্তর্জালে খুঁজে পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। যেমন আমি নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের লেখা ইন্টারনেটে খুব কম পেয়েছি। আপনি আরেকটা উপযোগিতার কথা বলেছেন, ওয়েবসাইটে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মতামত, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, যেটা আমি বা আমরা ফেসবুকে করি। আমি মনে করি, এ ধরনের কাজে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের চেয়ে ফেসবুক উপযুক্ত প্লাটফরম। কোনো বই পড়ে সেটার পাঠপ্রতিক্রিয়া হয়তো ওয়েবসাইটে আপ করা যায়, কিন্তু ধরুন বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হলো, বা ঝুমন দাসের মতো কারো জামিন আটকে গেল, তখন সেটার প্রতিবাদ জানানোর জন্য ফেসবুকের বিকল্প এদেশে এখনো হয়নি। কারণ সেখানে আমি অল্প সময়ে অনেক মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারছি। ফেসবুক এখানে এত পাওয়ারফুল মিডিয়া যে মুলধারার মিডিয়াকেও সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শিল্পসৃষ্টির পাশাপাশি লেখকের কাজ জনগণের ভাষা তৈরি করা, আপনি যখন কোনো প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করবেন, অনেকে তাতে অংশ নেবে, সেটা প্রচার করবে নিজেদের ভাষ্য হিসেবে। ফেসবুকে সেটা ভালোমতো সম্ভব। আগে প্রতিবাদ মিছিয়ে, মানববন্ধনে যেটা হতো, সেটা এখন ফেসবুকের পোস্টের মাধ্যমে হচ্ছে। এটা যোগাযোগের এক ধরনের বিবর্তন। সমাজকে অসহিষ্ণু করে তুলতে একটা পক্ষ সেটা কাজে লাগাচ্ছে, আমাদেরও কাজে লাগাতে হবে মানুষকে সহনশীল ও মানবিক করে তুলতে। তবে আমি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটেরও পক্ষে। দুটোর কাজ দুইরকম। আমি এক বছর ধরে আমার ব্যক্তিগত একটি ওয়েবসাইট (mojafforhossain.com/) পরিচালনা করছি—সেটা আমার অ্যাক্টিভিজম না, সাহিত্যের প্রয়োজনে।

বর্ণালী সাহা
নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগ শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা আমার জন্য আলস্য, এবং একটা স্বকীয় ‘মাধ্যম’ তৈরির তাগিদে লেখকপ্রবৃত্তির দানার প্রতিকূলে (against the grain) যাওয়ার পরিশ্রম। একই কারণে আমি নিজের উদ্যোগে গুডরীডসে নিজের লেখা বইয়ের এন্ট্রি দিই নাই কখনো। তবু আমি মনে করি সিরিয়াস লেখকদের নিজস্ব সাইট তৈরির একটা চল তৈরি হলে এবং তেমন লেখকদের সংখ্যা critical mass পার হয়ে গেলে একটা বিকল্প পাঠের অভ্যাস/ সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।

আমার নিজের জীবনের খণ্ডাংশ, ছবি, সিনেমার রিভিউ, নতুন-শোনা গান, চিন্তাবীজ ইত্যাদি ‘সাহিত্য’ নয়, নিতান্তই যোগাযোগ – আলাপ। এই জিনিসগুলি সাহিত্যের ক্ষুদ্র রসদের বাইরে আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না: না গঠনগত দিক থেকে, না উদ্দেশ্যগত দিক থেকে, না প্রক্রিয়াগত দিক থেকে। এদিকে সাহিত্যরচনায় ‘আলাপ’এর জায়গাও তেমন দেখি না, অতএব সাহিত্যের সাথে ফেসবুককে আমি মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিযুক্ত রাখতে পারি।

নিজের লেখার অংশ ফেসবুকে দেওয়া, নিজের কাজ নিয়ে ফেসবুকে (যথাসম্ভব নিম্নস্বর) প্রচার চালানো, নিজের কাজ নিয়ে অন্যদের মতামত শেয়ার করা: এইসব নিজের কাজের স্বাধীন বিপণনমাত্র। প্রকাশক-কৃত বিজ্ঞাপনেই যদি চলতো, অর্থাৎ আমার যদি প্রকাশককে সাহায্য করার এই প্রয়োজনটি না থাকত, ফেসবুকে আমি আরো বেশি অনিয়মিত হতাম।

মুরাদুল ইসলাম
তাৎক্ষণিক চিন্তা শেয়ার, তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া, অনেক মানুষের সামনে লেখারে নিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি কারণ। সমসাময়িক ইস্যুর প্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চলে আসে, এইগুলা আলোচনা করা দরকারী মনে হয়, এবং ভালো লাগে।

এনামুল রেজা
প্রথমত, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ঐভাবে লেখা হয় না এর কারণ আসলে ঐ ছোট্ট প্রতিক্রিয়া আমি ফেসবুকে আমার যে বন্ধুবান্ধব ও পাঠকীয় পরিমণ্ডল আছে, সেখানে শেয়ার করতে চাইছি। আবার দেখা গেছে, ফেসবুকে কোনো বড় লেখা লিখলাম, মনে হলো সেটা আরেকটু ঘষামাজা করলে একটা নিবন্ধের আকার নিতে পারে, সেই লেখাটি তখন আমি ওয়েবসাইটে আপ করে দিয়েছি পরে। আমার ওয়েবসাইটে জার্নাল এন্ট্রি নামে একটা পেজ আছে, সেখানে এমনকি ছোট্ট সব ফেসবুকে লেখা প্রতিক্রিয়াগুলোও আমি আপ দিতাম এক সময়। সেই পেজের নির্দিষ্ট পাঠক আছে। কিন্তু কাজটা নিয়মিত করা সম্ভব হয়নি। করতে পারলে ভালো হতো।

দুটিই অনলাইনের ঘটনা হলেও, ফেসবুকে সক্রিয়তা আর ওয়েবসাইটে সক্রিয়তা এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় দুই ধরণের কাজ। ফেসবুকের ইমিডিয়েট প্রতিক্রিয়া একটা ঘটনা যা আপনি ভালবাসতে বাধ্য, কিন্তু এটা নিয়েও সচেতন না থাকলে চলে না যে, ফেসবুক আসলে তাৎক্ষণিকতারই একটা যন্ত্র – সেটা লেখা ও প্রতিক্রিয়া দুই ক্ষেত্রেই। সাহিত্যিক হিসেবে আপনার চাওয়া নিশ্চয় তাৎক্ষনিকতার উৎপাদন হতে পারে না।

সুহানের প্রশ্ন ০২
ফেসবুকে পাঠকের জন্য লেখার একটা সাধারন লক্ষ্য হচ্ছে স্বল্প দৈর্ঘ্যের রচনা, সেখানেই পাঠকের সাথে দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওয়া। বই আকারে প্রকাশের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস- কিংবা অনলাইনের পাঠকের মন্তব্য- কি প্রভাব ফেলছে আপনার লেখায়? কীভাবে সেটাকে মোকাবেলা করছেন আপনি?

উত্তরমালাঃ

শিবব্রত বর্মণ
ফেসবুকে আমি যা লিখি, তার সঙ্গে আমার ফিকশন লেখার যোগ আমি অনুভব করি না। এটা অনেকটা চিঠি লেখার মতো। আর তাছাড়া ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ খুব কমই ঘটে। কারণ আমার ফেসবুক বন্ধুরা মূলত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও নিকটজন, আমার পাঠক নয়। লেখালেখি বিষয়ে একতরফা ভদ্রতাজনিত উচ্ছ্বাস ছাড়া তাদের কাছ থেকে আমি কিছু পাই না। পাঠকের প্রতিক্রিয়া আমি যা পাই, তা মূলত গুডরিডস থেকে। সেটার ক্ষেত্রেও দেখেছি, পাঠকের প্রতিক্রিয়া আমার লেখালেখির অভিমুখ বদলাতে কোনো ভূমিকা রাখে না। অন্যকথায় পাঠকের প্রতিক্রিয়া আমাকে স্পর্শ করে না খুব একটা। তবে আমার অব্যবহিত পরিপার্শ্ব, যাদেরকে আমি ছাপার আগে পড়তে দেই, তাদের মতামত আমার মধ্যে গভীর প্রভাব রাখে।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
এই বিষয়টা ফেসবুকের শুরু থেকেই অবগত ছিলাম আমি। এখন পর্যন্ত মাত্র একবার একটা ছোটগল্প ফেসবুকে দিয়েছি, যতো ভালোই হোক, দু-তিন দিন পর সেই গল্প কেউ মনে রাখে না। আমার কাছে মনে হয়, ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। লেখালেখির জন্য ফেসবুক মোটেও আদর্শ কোনো জায়গা নয়। বিশাল কলেবরে লেখার ক্ষেত্রেও বাজে প্রভাব পড়ে। আর অনলাইনে পাঠকের মন্তব্যের বেলায়ও একই কথা বলবো : ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়। ফেসবুকে আলকাটপকা মন্তব্য বেশি করা হয়, নতুন লেখকদের জন্য এটা বিপজ্জনক। আমি নিজে কখনও ফেসবুকের মন্তব্যকে বড় করে দেখি না, যার জন্যে ফেসবুকে কখনও পাঠকের সঙ্গে তর্কে জড়াইনি। ভালো বললে ভালো, খারাপ বললে এড়িয়ে যাই। পাল্টা কোনো জবাব দেই না; সাফাই গাই না।

মোজাফ্‌ফর হোসেন
ফেসবুকের পাঠকের জন্য আমি সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে মুক্তগদ্য ছাড়া কোনো গল্প/প্রবন্ধ লিখিনি। পাঠক বলতে আমি এখনো বইয়ের পাঠককেই বুঝি। আমি সাধারণত গল্পই লিখি, তাও স্বল্পদৈর্ঘ্যের, তাই সেটা অনেক সময় ফেসবুকে পোস্ট করতে সুবিধা হয়। যখন উপন্যাস লিখেছি, তখন কোনো অংশ ফেসবুকে দিইনি। সাহিত্যের প্রকৃত পাঠক আমি গ্রন্থের মধ্যেই খুঁজে পেতে চাই। তারপরও কথা থাকে, আমি নিজেও ফেসবুকে ছোটোগল্প বা কবিতা পেলে পড়ি। অনেক সময় পড়ে লেখকের বই সংগ্রহ করি। অনেক ভালো বই নিয়েও ফেসবুকে আলোচনা হয়, প্রচার পায়। তাই ফেসবুকে সাহিত্যচর্চার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তাছাড়া, অনলাইন/অফলাইন কোনো মাধ্যমের পাঠকই শেষ পযন্ত আমার চূড়ান্ত গন্তব্য না। এক শ্রেণির পাঠকের পছন্দমতো লিখতে গেলে নিশ্চিত করেই সেটা অন্য শ্রেণির পাঠকের মন-মতো হবে না। আমি এভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই: প্রত্যেক লেখকের তিন ধরনের পাঠক থাকেন। এক ধরনের পাঠক তাঁর বই কিনে পড়েন, তাই নিজের রুচির সঙ্গে তিনি মিলিয়ে নেন সেই লেখককে। এরা ঐ লেখকের প্রকৃত পাঠক। আরেক ধরনের পাঠক ঐ লেখকের কোনো লেখা হাতের সামনে পড়ে গেলে পড়েন। তিনি সেই লেখক সম্পর্কে বাজারে যে ধারণা সেই ধারণা দ্বারা আক্রান্ত হন। ফলে তিনি ঐ লেখকের প্রকৃত পাঠক না। অ্যাকসিডেন্টাল পাঠক। আরেক ধরনের পাঠক লেখকের দর্শন ও চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাঁর বই পাঠ করেন। এরা ঐ লেখকের আদর্শ পাঠক। এর বাইরেও আরেক ধরনের পাঠক থাকেন, যে পাঠক প্রতিটা শব্দে লেখকের অন্তর্গত ভাবনা লেখকের মতো করে বুঝতে পারেন। এরা হলো ঐ লেখকের ইউটোপিয়ান পাঠক। বাস্তবে এই পাঠকের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। লেখক নিজের মাথার মধ্যে এই পাঠকের অস্তিত্ব ভেবে নিয়ে লিখতে থাকেন। সচেতন লেখক মাত্রেই আসলে জীবনব্যাপী ইউটোপীয় পাঠকের সন্ধান করেন। দিনশেষে আমি আমার লেখাটাই লিখব, পাঠক তার লেখাটাই পড়বেন—দুজনেই এখানে সমান স্বাধীন।

বর্ণালী সাহা
খারাপ প্রভাব ফেলছে। অন্যদের কথা বলতে পারব না, আমি বড় পরিসরে লেখার চ্যালেঞ্জ ভালবাসি। আমার গল্প দীর্ঘ হয়, আমার গদ্য পড়তে লোকের সময় লাগে, আমি ধীরে, ডেলিবারেটলি লিখি। লেখা পাকা না-হলে ছাপতে দিই না; সম্পাদকবন্ধুদের বিরাগভাজন হই: এইসবকিছুই আমার লেখালেখির জন্য হিতকর বলে আমি মনে করি। কমল কুমারের ভাষায় ‘খুকু গদ্য’ লেখা আমি এড়াতে চাই। এর উল্টা স্রোতের নৌকায় উঠেছি – এই অনুভবটা যখন হয়, একটা মারাত্মক ভীতির বোধ আসে। আমি এই ভীতিটা কাটাতে চাই না। আমার লেখার মান পড়ে যাওয়ার অ্যান্টিডোট সম্ভবত এই ভীতিকে সদাজাগ্রত রাখা। এইভাবে মোকাবেলা করার দীর্ঘমেয়াদী ফল কী, তা দেখতে হয়তো আরো বছর পাঁচেক লাগবে।

মুরাদুল ইসলাম
এক-এক মাধ্যমের প্রকৃতি এক-এক রকম, এবং মাধ্যমগুলা ভ্যালু নিউট্রাল না। যদিও ফেসবুকে সাধারণ প্রবণতা স্বল্প দৈর্ঘ্য রচনা ইত্যাদি, কিন্তু কেউ চাইলে তার উপন্যাসের অধ্যায় বা গল্প বা বড় সাহিত্য সমালোচনাও পোস্ট করতে পারেন। সেখানে আগ্রহী পাঠক পাওয়া যায় না এমন নয়।

ফেসবুকের যে স্বভাব চরিত্র, সব সময় ট্রেন্ডে থাকা জিনিশ নিয়া কথা বলা, বিতর্ক, নতুন কী ঘটতেছে, কী হইতেছে, এসব চিন্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যদি কেউ এগুলি দ্বারা বেশী প্রভাবিত হয়ে যান।

বই আকারে লেখার সময় লেখক যদি ভাবতে পারেন তিনি ফেসবুক পোস্ট লেখছেন না, তাহলেই স্বল্প দৈর্ঘ্যতা, তাৎক্ষনিকতা ইত্যাদি সমস্যা থাকে না।

আমি ওয়েবসাইট, ফেসবুক, সাবস্টাক, বই যেখানে লেখি, ওই মাধ্যমের চরিত্র সম্পর্কে সচেতন থাকি। মিডিয়া, বিশেষত ডিজিটাল মিডিয়ার চরিত্র এক্সপ্লোর করা আমার আগ্রহের বিষয়।

এনামুল রেজা
লেখার উদ্দেশ্য তো পাঠক, তো ফেসবুকে বা সোশাল মিডিয়াতে যা হয়, পাঠকরাও সেখানে সব সময় থাকেন, লেখা মাত্রই তাদের কাছে পৌছনো যায়। কিন্তু আগেই বলেছি, তাৎক্ষণিক লেখাপত্রের জন্য সোশাল মিডিয়া ভালো। বড় আকারের লেখা বা খুব চিন্তা ভাবনার জটিলতা আছে, এই ধরণের আলাপের জন্য ফেসবুক বা কোন সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মকেই আমি উপযোগী মনে করি না। বিশেষ করে ফেসবুকের একটা ফাঁদ আছে, পাঠকের সরাসরি প্রতিক্রিয়া যেহেতু পাওয়া যায়, এটা লেখককে আক্রান্ত করতে পারে, এবং চটুল ধরণের লেখা বা ট্রেন্ডি লেখা ছাড়া ফেসবুকে রিচ ঐ ভাবে পাওয়া যায় না, তো পাঠকের প্রতিক্রিয়ার নেশায় পড়ে লেখক প্রতিনিয়ত ঐ চটুল ও ট্রেন্ডি লেখা লিখে যেতে পারেন, যা তার চিন্তাভাবনার জগতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আমার নিজের ক্ষেত্রে এসব তেমন প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয় না। এর একটা কারণ হতে পারে ফেসবুককে আমি অতোটা গুরুত্ব দেই না লেখালেখির প্লাটফর্ম হিসেবে। গল্প বা নন-ফিকশন প্রকাশের জন্য আমার নিজের ওয়েবসাইট তো আছেই, নতুন কিছু লিখলে সেসবও আমি প্রকাশ করছি পত্রিকা বা লিটারারি প্লাটফর্মগুলোতেই।

তবে, আমি এটাও চাইছি যে আমার লেখা যারা পছন্দ করেন, তারা যেন একটু কষ্ট করে আমার লেখাগুলো ঐ সব ওয়েবসাইট বা প্রিন্ট মাধ্যম থেকে পড়ে নেন। ঠিক এ কারণেই ফেসবুককে আমি অন্য কোথাও প্রকাশিত লেখাগুলো শেয়ার করার একটা মাধ্যম হিসেবেও দেখি।

কিন্তু, খোদ ফেসবুকেই গল্প বা বড় লেখা পোস্ট করে থাকেন অনেকে। দীর্ঘদিনে আমার অবজার্ভেশন – এসব ফিকশন বা নন-ফিকশন খুবই ফর্মুলা মেনে লেখা হয়ে থাকে, অর্থাৎ, আপনি ফর্মুলার বাইরে যেতে পারবেন না। এসব লেখার বক্তব্য ও প্যাটার্ন প্রায় একই রকমের। এসবে মানুষের অংশগ্রহণও অনেক। এবং এই অংশগ্রহণ দেখে সোশাল মিডিয়ার অনেক লেখক বইও প্রকাশ করে ফেলেন – স্বভাবতই তাদের সাহিত্যিক জগত নির্মিত হয় ফেসবুক বাবল দিয়ে। এই বাবলের বাইরে যেতে না পারলে খুব মেধাবী কোন মানুষও সাহিত্যের বড় ও বিস্ময়কর জগতটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না, লেখাগুলো শেষ অব্দি কিছুই আর হয়ে উঠতে চায় না, পারেও না।

চূড়ান্ত ভাবে, আমি তো বইই লিখতে চাইছি, সাহিত্য করতে চান এমন যে কারও গন্তব্য আসলে বইই, এই যুগে এসেও আমি এমন মনে করি। এটা সোশাল মিডিয়া নির্মিত লেখকেরাও এড়াতে পারেন না, তারাও বই প্রকাশ করতে চান। তবে আমার মনে হয়, বই লেখা আর ফেসবুকের লেখা থেকে বইয়ের সৃষ্টি করার মানসিকতা সম্পূর্ণ আলাদা দুই জাতের লেখক সৃষ্টি করছে আমাদের সময়ে।

সুহানের প্রশ্ন ০৩
ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মতো টেক্সট-ভিত্তিক নয়, ইনস্টাগ্রাম/ইউটিউবের মতো ছবি-ভিত্তিক মাধ্যমগুলোয় সক্রিয় উপস্থিতি কি লম্বা দৌড়ে লেখকের জন্য ভালো হচ্ছে, না খারাপ? প্রশ্নটা বাংলাদেশকে মাথায় রেখে করা।

উত্তরমালাঃ

শিবব্রত বর্মণ
যে-কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়তা লেখকদের ক্ষতি করে বলে আমার মনে হয়। অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরির সক্রিয়তাও টেক্সটভিত্তিক সৃজনশীলতায় ভাগ বসায় বলে আমার ধারণা। এ ক্ষেত্রে আমি এতোই রক্ষণশীল যে আমি ফিকশন লেখকদের এমনকি নন-ফিকশন (প্রবন্ধ-নিবন্ধ/সমালোচনা) লিখতেও দিতে রাজি না।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
গত বছর আমাকে একজন বলেছিল লেখকদের জন্য ইনস্টাগ্রাম আর ইউটিউব প্রচারণার জন্যে ভালো মাধ্যম হতে পারে। টিকটক নাকি আরো বেশি কার্যকরী! কিন্তু আমি অনেক ভেবে দেখেছি, এসব সেলিব্রেটিদের জন্য ঠিক আছে, লেখকদের জন্যে নয়। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি লেখক সেলিব্রেটি নয়, যেহেতু সে কোনো কিছু পারফর্ম করে না। একই কথা চিত্রশিল্পীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। তবে এটাও সত্যি এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া যায়। সেটা টেকসই কি না, আমার সন্দেহ আছে তাতে।

মোজাফ্‌ফর হোসেন
লেখকের জন্য লেখালেখি ও পঠনপাঠনের বাইরে যে কোনো উন্মাদনা খারাপ, এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। ব্লগ বা ওয়েবসাইট টেক্সটভিত্তিক হলেও, সেটাও লেখকের গন্তব্য হয়ে ওঠা উচিত না। একটা সময় ব্লগ নিয়ে অনেক উন্মাদনা ছিল। ব্লগ থেকে সেলিব্রিটি লেখকও তৈরি হতে দেখেছি, কিন্তু লম্বা দৌড়ে তাদের অধিকাংশই ঝরে গেছে। মাধ্যমভিত্তিক বা মাধ্যমনির্ভর সাহিত্য বা লেখক তৈরি হয় না, লেখক হবেন বইভিত্তিক বা বইনির্ভর। পাঠের নতুন নতুন মাধ্যমকে যুক্ত করে বলতে পারি টেক্সট-নির্ভর। এর বাইরে যা সবই সাময়িক উত্তেজনা। সাময়িক উত্তেজনা লম্বা রেসের লেখকদের জন্য ক্ষতিকর।

বর্ণালী সাহা
লেখকের জন্য ভাল হচ্ছে। অনেকে দেখছে, জানছে, লেখকের কাজ পরখ করছে। লেখার জন্য ভাল হচ্ছে না, এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

মুরাদুল ইসলাম
ব্লগ বা ওয়েবসাইট হাইপার টেক্সট, বইয়ের মত টেক্সট না। বইয়ের টেক্সটের যে স্থিরতা আছে ওয়েবের টেক্সটের এই স্থিরতা নাই। আপনি লিংক যুক্ত করতে পারেন, প্রয়োজনীয় ছবি ভিডিও যুক্ত করতে পারেন লেখায়, এডিট করতে পারেন। ওয়েবের আবির্ভাব লেখারে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে, এবং নলেজ শেয়ারিং-শিল্প সাহিত্যরে নানা ভাবে বিস্তারিত করেছে।

লেখা মানুষের চিন্তায় আপিল করে, এনালিটিক সাইডে, অন্যদিকে আপনি যখন লোকটারে দেখতে পান, তার কথা শুনবেন, সাউন্ড আপিল করবে বেশী আবেগে। মাধ্যমের এই চরিত্র কন্টেন্টের চরিত্রও বদলে দিবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। “ট্রেন্ডিং” থাকা এখানে একটা সাফল্য। শিল্পসাহিত্যের ধরণ এটা না। তবে, সময়ের সাথে শিল্প সাহিত্যেও পপুলারিটির বিভিন্ন মানদণ্ড এসেছে, এবং গৃহীতও হইছে বলা যায়, যেমন বেস্ট সেলার।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বইয়ের কোন ভালো মার্কেটই নাই, সেখানে লেখকেরা যদি নানা মাধ্যমে সক্রিয় হন, সাহিত্য ও আইডিয়ারে ছড়িয়ে দিতে পারেন, এটা ভালো। বাংলাদেশের সবচাইতে পপুলার লেখকদের টিভি কানেকশন ছিলো, যখন বিটিভি ছিল প্রধান বিনোদন মিডিয়া।

সোশ্যাল মিডিয়া এখন একটা এডভান্টেজ দিতে পারে লেখকরে নতুন পাঠকের কাছে যাবার, ও পাঠক তৈরি করার ক্ষেত্রে।

ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া, টিভি পত্রিকা আসবে, মানুষের সামনে নিয়ে যাবে, এখন এই আশায় বসে থাকার কোন যুক্তি নাই, তাদের নিজস্ব রাজনীতি ও স্ট্র্যাটেজি থাকে।
এখন আমাদের প্রিন্ট পূর্ব আদিম যুগে যাবার সুযোগ হইছে। মানুষ নিজেই মিডিয়া। তার ভয়েজরে এমপ্লিফাই করার জন্য আছে ইন্টারনেট।

এনামুল রেজা
আমার মনে হয়, সময়ের সাথে সাথে লেখকের নানান প্ল্যাটফর্মে পরিমিত উপস্থিতি মন্দ কিছু না। পাঠকের সাথে সংযোগ রাখতে, বা সমসাময়িক মানুষেরা কিভাবে ভাবছে বা কী করতে ভালবাসছে এসব দেখার জন্য হলেও টেক্সটের বাইরে যে বিরাট একটা জগত ছবি ও ভিডিও দিয়ে আজ তৈরি হয়ে গেছে, সেখানে লেখকের উপস্থিতি একটা প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। এমন না যে আপনি নিয়মিত টিকটক করছেন, রিলস বানাচ্ছেন। কিন্তু মানুষ এসব মাধ্যম ব্যবহার করে আসলে কী করছে, সেসব তো আপনাকে মনে হয় অবজার্ভ করতে হবে, করাটা দরকার। যতক্ষণ না আপনি নিজেও আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন। এসব মাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতির ক্ষেত্রেও একই কথা। আপনি নিজের মন মত কন্টেন্ট বানাতে পারছেন নাকি ট্রেন্ড অনুসরণে বাধ্য হচ্ছেন? যে মাধ্যমেই নিজেকে আপনি প্রকাশ করেন না কেনো, লেখক হিসেবে আপনার লক্ষ্যটা ভুলে গেলে মনে হয় আপনি তখন নিজের ক্ষতিই করবেন।

সুহানের প্রশ্ন ০৪
শিল্প-সাহিত্য সংক্রান্ত লেখাপত্র পড়তে কোন ওয়েবসাইট/ওয়েবজিন/পোর্টাল আপনি মোটামুটি অনুসরণ করেন এবং পাঠকদের জন্যও সুপারিশ করেন? বাংলাভাষী এবং ভিনভাষী, উভয়ক্ষেত্রে উত্তরটা জানতে চাই।

উত্তরমালাঃ

শিবব্রত বর্মণ
আমি ঠিক শিল্প-সাহিত্য সংক্রান্ত পোর্টাল অনুসরণ করি না। কিছু পরিমাণে বুক রিভিওয়ের সাইটগুলোয় ঘুরি (টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট, লন্ডন রিভিউ অব বুকস, নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ, গার্ডিয়ান বুক সেকশন এবং গুড রিডস)। বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনার খোরাক আমি পাই ইয়ন (https://aeon.co/), নটিলাস (https://nautil.us), বিগ থিংক (https://bigthink.com/), আইএআই (https://iai.tv/articles-proxy/) ইত্যাদি থেকে। প্যারিস রিভিউ (https://www.theparisreview.org/) আমার পছন্দের একটা জায়গা। অনেক ইন্টারভিউ থাকে।

এর বাইরে আমি বিজ্ঞান-ইতিহাস-দর্শন বিষয়ক বিভিন্ন পডকাস্ট নিয়মিত ফলো করি। যেমন: দ্য গার্ডিয়ান লং রিডস, দ্য আটলান্টিক রেডিও, বিবিসি রেডিও ফোর-এর ‘ইন আওয়ার টাইম’।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
গতিপথ নামের একটি বাংলা ওয়েবজিন মাঝেমধ্যে পড়ি। তবে বাড়িতে একাধিক পত্রিকা রাখি, সেখানকার সাহিত্যপাতা পড়া হয় নিয়মিত। যদিও ওগুলোর সাম্প্রতিক মান নিয়ে আমি হতাশ। ইংরেজিভাষি ম্যাগাজিন হিসেবে ‘স্টেট অফ ম্যাটার’ নিয়মিত পড়ি। আর প্রায় সব বাংলা পোর্টালই পড়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের ঋত্বিক ম্যাগাজিনও পড়ি।

মোজাফ্‌ফর হোসেন
ওয়েবে খুব বেশি পড়ি না। একান্তই নিরুপায় হয়ে বাইরের সাহিত্য পড়ার জন্য openlibrary.org/, gutenberg.org/, archive.org-এর মতো ফ্রি সাইটগুলো দেখি। আর আমার এক বন্ধুলেখক প্যারিসরিভ্যুয়ের একাউন্ট করে দিয়েছেন, সেটা নিয়মিত পড়ি। বাংলাদেশের সাহিত্য পড়ার জন্য এখন পর্যন্ত বইয়ের বিকল্প পাইনি। কারণ, এখানকার অধিকাংশ সাহিত্যের পোর্টাল খুব দুর্বল। বিডিআর্টস-এ ভালো কিছু লেখা পাই। রাইজিংবিডি, বাংলাট্রিবিউনের সাহিত্যের অংশটা মাঝেমধ্যে দেখি। এখন কবি বিধান সাহার শ্রী ওয়েবপোর্টালটা ভালো হচ্ছে। পরস্পর.কম মাঝে মাঝে দেখা হয়। তবে প্রতিযোগিতামূলক ভালো কাজ হচ্ছে না। ফ্রি সেটা সম্ভবও না। ওয়েবজিন/পোর্টালে এখনো প্রফেশনাল জায়গা তৈরি হয়নি। আমি নিজে যেমন সম্মানি ছাড়া কোথাও লিখি না, কোনো লেখকের লেখা উচিত বলে মনেও করি না। পাঠক হিসেবেও বলি, একটা ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন ফি থাকা উচিত। চ্যারিটি করে এসব হবে না।

বর্ণালী সাহা
বাংলায় সমকালীন অনলাইন কন্টেন্ট আলাদা তাগিদ নিয়ে পড়ি না বললেই চলে। ফেসবুকে কেউ শেয়ার করলে পরস্পর, গল্পপাঠ, শ্রী, শিরীষের ডালপালা ইত্যাদি ওয়েবজিনের বাছা কিছু কাজ পড়া হয়। খুব শান্তি পাই, বলব না; তবে সহযাত্রীদের চেষ্টার প্রশংসা করতে চাই। প্রতি বছরই বইমেলা মিস্‌ করি; গত কয়েক বছর ধরে আপনার (সুহান রিজওয়ানের) নাতিদীর্ঘ পুস্তক সমালোচনা পড়ার কারণে মূলত কী কী ‘মিস’ করছি, ভাল জানতে পারছি। ফেসবুকে যাঁদের পাঠরুচি নিয়ে উচ্চ ধারণা রাখি, তাঁদের পোস্ট পড়েও নিজেকে কিছুটা হালনাগাদ রাখতে পারি।

মেলবোর্নে ‘বইয়ের দেশ’ পত্রিকাটি রাখি, ত্রৈমাসিক গ্রাহক হিসাবে হাতে কিছু বাংলা ছাপার অক্ষর পাই। প্যারিস রিভিউয়ের গ্রাহক আছি – ভাল গদ্য আর সাক্ষাৎকার পাওয়ার জন্য ভবিষ্যতেও নিয়মিত থাকতে চাই। গ্রান্টা’র গ্রাহক ছিলাম, তবে এখন বইয়ের দোকানে কপি পেলে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে তারপর ভাল লাগলেই শুধু কিনি। বাইট-সাইজড সমালোচনা পড়তে চাইলে, এবং ব্যাপকতা/ সূক্ষ্মতা/ গভীরতা কম আশা করলে লিটহাবে ঢুঁ মারি। অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্য পত্রিকা মীনজিন পড়ি মাঝেমাঝে, অনলাইনে সুলভে পাওয়া গেলে। আমার ধারণা, প্রৌঢ় পুঁজিবাদের ভিতরে সৃষ্ট নয়া শিল্পসাহিত্যকে অ্যাকটিভিজম থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সাহিত্যকে প্রান্তিকতার রাজনীতির লেন্সের ভিতর দিয়ে দেখতে ভালো লাগে না বলে অনেক প্ল্যাটফর্ম এড়িয়ে যাই।

দেশে গেলে বাবার কালি ও কলম পত্রিকার স্তূপ নেড়েচেড়ে দেখি; সম্পাদনার মান ভাল হওয়ায় সেখানেও কিছু রত্ন পাওয়া যায়।

দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা (অনলাইন বা অফলাইন) পড়ি না। ঈদসংখ্যা/ পূজাসংখ্যা কিনি না। নিতান্তই ফেসবুকে কেউ ট্যাগ না-করলে কনটেম্পোরারি বাংলা গল্প-উপন্যাস অনলাইনে পড়ি না।

মুরাদুল ইসলাম
https://philosophynow.org/
https://3quarksdaily.com/
https://philosophybites.libsyn.com/

এনামুল রেজা
বাংলাদেশে দুঃখজনকভাবে অমন প্লাটফর্মের অভাব আছে। নিয়মিত কোনো প্লাটফর্মকেই অনুসরণ করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে গল্পপাঠ, কালি ও কলম পড়া হয়। দৈনিকের মধ্যে প্রথম আলোর অন্য আলো আর সমকালের কালের খেয়া মাঝেমধ্যে। এদের মাঝে সবচেয়ে ভালো বণিক বার্তার সিল্করুট। বিষয়ভিত্তিক দারুণ সব সংখ্যা করে থাকেন এনারা। বাইরের কয়েকটা প্লাটফর্মের লেখাপত্র আমার ভালো লাগে। প্যারিস রিভিউ, লিটহাব, কারকাস রিভিউ, নিউ ইয়র্কার – এগুলোয় নিয়মিত চোখ রাখি। আর বই পড়ার জন্য আর্কাইভ ওআরজি। তুলনাহীন।

সুহানের প্রশ্ন ০৫
অনলাইনে পাঠকের সাথে মিথস্ক্রিয়ার কোনো ভালো/খারাপ স্মৃতি কি আছে আপনার? থাকলে সেটা বলা যায়?

উত্তরমালাঃ

শিবব্রত বর্মণ
না, তেমন কোনো স্মৃতি নেই। পাঠকের সঙ্গে আমার আলাপ নেই বললেই চলে।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
সত্যি বলতে, এখনকার বাস্তবতা হলো পাঠকের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মিথষ্ক্রিয়া/যোগাযোগ ঘটে অনলাইনেই…বিশেষ করে ফেসবুক, মেসেঞ্জার আর হোয়্যাটসঅ্যাপে। এই মাধ্যমগুলোতে এতো বেশি সংখ্যক পাঠকের সঙ্গে পরিচয় আর যোগাযোগ ঘটে যে, এগুলো ছাড়া এখন ওদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্য কোনো মাধ্যম কল্পনাও করা যায় না। এমন কি অন্য লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গেও অনলাইনেই সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ ঘটে। অনলাইনে আমার খারাপ অভিজ্ঞতা একদমই নেই, যেহেতু আমি পরিমিতভাবে এগুলো ব্যবহার করি, তর্কে জড়াই না এবং সর্বোপরি প্রাইভেসি সচেতন মানুষ হিসেবে একটা সীমারেখা মেনে চলি। এখন পর্যন্ত আমার সুখস্মৃতিই বেশি।

মোজাফ্‌ফর হোসেন
অসংখ্য। প্রথমে ভালোটা বলি—স্পেসিফিক না, ইন জেনারেল—আমার অনুপ্রেরণার নব্বইভাগ আমি বলব আমি অনলাইনে পেয়ে এসেছি। পাঠক এখন বই পড়লেও সেটা অনলাইনে জানাচ্ছেন। অনলাইনের কারণেই অনেক পাঠকের অনুভূতি জানা সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে। আর খারাপ স্মৃতি বলতে, যত হুমকিধামকি পেয়েছি লিখতে এসে, কিংবা নানা বিষয়ে মতপ্রকাশ করতে গিয়ে, সেটারও নব্বইভাগ অনলাইনের মাধ্যমেই এসেছে। ভালো মন্দ মিশিয়েই তো জীবন, অভিজ্ঞতা হিসেবে দুটোই আমাদের সমৃদ্ধ করে।

বর্ণালী সাহা
বেশিরভাগ স্মৃতিই আনন্দের, নিজেকে খুঁজে পাওয়ার। যেন অন্ধকার ঘরে গান গেয়েছি, কিন্তু সেই ঘরে আমি একলা ছিলাম না, জানালার কাছে বসা কারো অদৃশ্য, মনোযোগী আত্মা ছিল। এই সংযোগটা অনলাইনে না-ঘটলে এত সহজে টের পেতাম না। সবচেয়ে ভাল স্মৃতিগুলির মধ্যে আছে অনেক প্রিয়, অগ্রজ লেখককে অপরিচয়ের আড়াল থেকে, ফ্যানগার্লিংএর আড়াল থেকে পাঠক হিসাবে পাওয়া। প্রকৃতির মধুর ষড়যন্ত্রে র‍্যান্ডম কোনো পাঠকের হাতে আমার বই পড়ে গেছে, এবং সেই পাঠক আমার লেখাকে ভালবেসেছেন, আমাকে আবিষ্কার করেছেন, এইসবও জেনেছি। কোনো একটা ঘটনা দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। সামগ্রিক অভিজ্ঞতা মুখ্যত সুন্দর।

খারাপ স্মৃতি আছে বটে। পাঠকদের সাথে নয়, সতীর্থ/ সহকর্মী/ সহযাত্রীদের সাথে। লেখালেখির মতো অন্তর্মুখী বৃত্তিতে যাঁরা জড়িত থাকেন, তাঁদের নিজস্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি সচেতন হওয়া দরকার আছে বলে মনে করি। আমাদের নিজেদের সাপেক্ষে বাকি দুনিয়াকে আমরা কীভাবে দেখছি, আমাদের আত্মচেতনা কতখানি সবল এবং অন্যের ভাল কাজ দেখে আমরা কতখানি উদ্দীপিত হই, কতখানি হীনম্মন্য হই, এবং কতখানি ঈর্ষান্বিত হই, সেই ইনভেন্টরির হিসাব নিয়মিত রাখতে না-পারলে আমরা এই মিথস্ক্রিয়াকে আমাদের অনুকূলে রাখতে পারব না। এর চেয়ে বেশি বলতে চাই না।

মুরাদুল ইসলাম
ভালো স্মৃতি, যখন লেখা পড়ে কেউ তার ভালোলাগা জানান। অপরিচিত কেউ কেউ এইরকম জানাইছিলেন, কীভাবে আমার নন ফিকশন লেখা তাদের লাইফে ভালো প্রভাব ফেলছে, এসব ভালো লাগে।

খারাপ স্মৃতি তেমন নাই। ইনস্ট্যান্ট কিছু বিরক্তি তৈরি হয় বাজে মন্তব্যে, ওইগুলা ওইখানেই ডিল করতে হয়।

এনামুল রেজা
আলাদা করে কোনো স্মৃতির কথা তো মনে পড়ছে না। তবে কখনও কখনও কোনো লেখা বা মন্তব্যের জেরে খুব গালি খেয়েছি বা মানুষের সাথে বন্ধুত্বে ভাটা পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যা দুঃখজনক। তবে এসব ঘটনা আমাকে পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষাও দিয়েছে। আনন্দের স্মৃতি অনেক, একটা রেখে একটা বলা যায় এমন না। আমার পাঠকশ্রেণী আজ যতটুকুই তৈরি হয়েছে, এর সিংহভাগই অনলাইন থেকে তৈরি হয়েছে। অনলাইনে আমার উপস্থিতি এখন পর্যন্ত একটা ইতিবাচক কর্মকান্ড হয়ে আছে বলেই মনে হয়।

[জুলাই, ২০২৩]

প্রিয় পাঠক,
কয়েক বছর ধরে একক শ্রমে গড়ে তোলা এই ওয়েবসাইটকে আমি চেষ্টা করেছি অগণিত বাংলাভাষী ওয়েবপোর্টালের মাঝে স্বতন্ত্র করে তুলতে। নানা স্বাদের এসব লেখা নির্মাণে আমাকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে যথেষ্ট সময় আর শ্রম। এছাড়াও, পাঠক, আপনি এসব লেখা পড়তে পারছেন কোনো ধরনের বিজ্ঞাপণের উৎপাত ছাড়াই।

কাজেই প্রিয় পাঠক, স্বেচ্ছাশ্রমের এই ওয়েবসাইট চালু রাখতে প্রয়োজন হচ্ছে আপনার প্রণোদনার। আমরা চাইঃ এই সাইটের কোনো লেখা যদি আনন্দ দেয় আপনাকে, কিংবা আপনার উপকারে আসে- সেক্ষেত্রে এই নাম্বারে ০১৭১৭ ৯৫৩০৮৭ (Personal) বিকাশ করে আপনি প্রণোদনা দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করবেন।

আপনার সামান্য উৎসাহ বাংলাভাষী অন্তর্জালকে করে তুলতে পারে আরও আকর্ষণীয় লেখায় সমৃদ্ধ!