১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সংবাদ’ এর সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় যাত্রা শুরু করেছিলো সৈয়দ শামসুল হকের কলাম ‘হৃৎকলমের টানে’। ধারাবাহিক সেই কলাম থেমে গেছে কালের স্রোতে, জীবনাবসান ঘটেছে সৈয়দ হকের পর্যন্ত; কিন্তু বিশ্বাস করি, আজও বাংলাদেশের কোনো সৃজনশীল লেখকের কলম -কি ধারে কি ভারে- পেরিয়ে যেতে পারেনি হক সাহেবের ওই কলামকে। সংকলন হিসেবে প্রকাশিত কলাম ‘হৃৎকলমের টানে’ নামের বইটাকে কয়েক বছর পর আবার পড়তে গিয়েও নিজের পূর্বোক্ত সেই বিশ্বাসে অটল থাকতে হলো।
লেখকের হৃদয় এক অবিরাম চলমান কলম, সেই কলমের টানেই সৈয়দ হক বিচিত্র সব বিষয়ে লিখে গেছেন ওই ধারাবাহিক রচনায়। আজকাল আমরা ফেসবুক কি ব্লগের পাতায় লেখকদের যেমন তাৎক্ষণিক চিন্তা পড়ে অভ্যস্ত, মোটা দাগে বলতে গেলে তেমন শ্রেণিতেই ফেলতে হবে এসব টুকরো লেখাকে। কিন্তু সৈয়দ হক সেই বিরল লেখকদের দলে, যারা প্রতিদিনের সংবাদপত্রের লেখাকেও করে তুলতে পারেন মহাকালের। শাণিত সব পর্যবেক্ষণের কথা বাদই দিলাম, কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতির বিবর্তন; সংকলনটাকে শুধু এই কারণেই পড়া যায়- যে তার পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে অসাধারণ সব মানুষকে নিয়ে সৈয়দ হকের টুকরো কিছু মন্তব্য বা স্মৃতিচারণ।
উদ্দিষ্ট সংকলনকে দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে তাই ইচ্ছে হলো, অন্য কিছু শিল্পী বা লেখককে নিয়ে সৈয়দ হকের কিছু মন্তব্য আর স্মৃতিচারণ পাঠকের জন্য অন্তর্জালে তুলে রাখতে। ভালো লাগবে, যদি এইসব টুকরো লেখা পড়ে কারো ইচ্ছে হয় বইয়ের পাতায় সৈয়দ শামসুল হকের সাহচর্য খুঁজতে।
১) গুন্টার গ্রাস প্রসঙ্গেঃ
গুন্টার গ্রাস ঢাকায় এসেছিলেন কয়েকদিনের জন্য; জার্মান এই লেখক ও শিল্পীর সঙ্গে আমার মাত্র একবার একটি সন্ধ্যায় দেখা হয়েছিলো- রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ইফফাত আরার বাড়িতে নৈশভোজের নিমন্ত্রণে। কিছুমাত্র অপ্রতিভ না হয়ে আমি বলতে পারি, গুন্টার গ্রাসের লেখা এক লাইনও আমি পড়িনি, যদিও তার নামের সঙ্গে বহুদিন থেকেই পরিচিত। বড় ভালো লাগলো যখন আমি তাকে বললাম, আমি আপনার লেখার সঙ্গে পরিচিত নই, আর তার উত্তরে তিনি বললেন, আশ্চর্য রকমের শিশুর হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে, আহ, এটাই তো ভালো হলো; আমিও আপনার কাজ সম্পর্কে কিছু জানি না, একেবারে সাদা পটভূমিতেই বরং কথা আমাদের জমবে ভালো।
একজন খাঁটি লেখকই এরকম কথা অম্লান উচ্চারণে বলতে পারেন।
২) শওকত ওসমান প্রসঙ্গেঃ
… শওকত ওসমান তেহাত্তর বছর বয়সে পা দিলেন; জন্মদিনে তাকে আমার অন্তরের সমস্ত অভিনন্দন।
শওকত ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, সবচেয়ে বড় শিক্ষা তার কাছ থেকে নিয়েছি ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুষঙ্গ থেকে কর্ম, আমাদের কাজকে কীভাবে বাঁচিয়ে রেখে চলতে হয়। সেই দিনটির কথা মনে পড়ে, সেই একটি দিনই জীবনের মূল্যবান এই পাঠ তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম- শওকত ভাইয়ের এক পুত্রের জীবনাবসান হয়েছে অত্যন্ত শোকাবহ একটি পরিস্থিতিতে, আমরা তার রাজারবাগের বাড়িতে গেছি…
.একসময়ে আমি আর শামসুর রাহমান যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালাম। হঠাৎ শওকত ভাই বললেন, ‘শামসুর রাহমান, দাঁড়াও, তুমি যে আদ্রে জিঁদের বইখানা চেয়েছিলে একদিন, এসেছো যখন নিয়ে যাও।’ আমি হতবাক, শামসুর রাহমান হতবাক। শামসুর রাহমান একটু বেশি কষ্ট হলে কথা বলতে পারেন না ভালো করে, বিড়বিড় করে কেবল বললেন, ‘থাক না, থাক।’ আমি বললাম, ‘আরেকদিন আসব আমরা, বই নিয়ে যাব।’ -কিন্তু কিছুতেই নিরস্ত করা যায় না শওকত ভাইকে, তিনি বললেন, ‘জীবনে সুখ-দুঃখ থাকবেই, আসবেই, তাই বলে আমাদের সব কি থেমে থাকবে?’
কি কষ্টে যে সেদিন আমরা শওকত ভাইয়ের বাড়ি থেকে ওই বইটা নিয়ে ফিরেছি সে কেবল আমরাই জানি, সারা পথ শামসুর রাহমান আর আমি স্তব্ধ, রায়সাহেব বাজার পুলের কাছে দু’জনে বিদায় নেবার মুখে পরস্পরের দিকে তাকাই, এবং আমরা জেনে যাই, কিছুক্ষণ আগে যে অভিজ্ঞতা আমাদের হল তা আমাদের আরও খানিকটা বৃহৎ করে দিয়ে গেছে।
৩) রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ প্রসঙ্গেঃ
রবীন্দ্রনাথ যেদিন চলে গেলেন আমি তখনো বাড়িতেই লেখাপড়া করি; পিতার ইচ্ছে ছিলো একেবারে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেবেন; বাড়িতে দ্বিতীয় শ্রেণীর বই পড়ছি, সেই ‘সহজ পাঠ’ এর হঠাৎ একদিন সকাল সাড়ে দশটায় দেখি ছেলেরা মহানন্দে হইহই করে বইখাতা বগলে করে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরছে। শ্রাবণের মাস হলেও সেদিন ছিল না বৃষ্টি, কাজেই ‘রেইনি ডে’ এর ছুটি নয়, জাপানিরাও আসাম পেরিয়ে লালমনিরহাটে এসে পড়েনি যে আমাদের এক্ষুনি শহর ছেড়ে পালাতে হবে। ছেলেবেলায় লাজুক আর একা মানুষ ছিলাম, তাই কাউকে জিজ্ঞেস করতেও সাহস হয়নি কেন দুপুরে হঠাৎ ছুটি। ডিসপেনসারি থেকে বাবা ফিরে এলেন, সাইকেল থেকে নামতে নামতে ক্লান্ত গলায় মাকে শুধু বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা গেছেন।’ – বলেই তিনি আমার জন্য বিশদ করে দিলেন, ‘সেই যে কবি, লিখেছিলেন, তোর মনে আছে? – আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।’
এখনো স্পষ্ট দেখতে পাই, বাবা সাইকেল নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন, আর সম্মুখের পথের উপর দিয়ে কুড়িগ্রাম ইংলিশ মাইনর স্কুলের হেডমাস্টার, কবেই এখন প্রয়াত, শ্রী কালিপদ বিশ্বাস, চিতেপরা গরদের চাপকান পরে, ঈষৎ অবনত হয়ে বাড়ি ফিরে চলেছেন; তার সেই ঈষৎ অবনত ভঙ্গির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু আমার মনে জড়িয়ে আছে এইজন্য যে, কালিপদ বাবুর মত আর কাউকে আমি অতটা সোজা এবং উন্নত হয়ে পথ চলতে আমার ছেলেবেলায় আর দেখিনি।
৪) লেখকের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গেঃ
… এলোমেলো পাতা ওল্টাতেই চোখে পড়লো চার্লস ডিকেন্সের ওপর লেখা অরওয়েলের প্রবন্ধটি- চোখ আটকে গেলো সেই একটি জায়গায়- স্মৃতির গভীরে থেকে যায় প্রথম পাঠে আমরা আলোড়িত হই যেসব বাক্যে-ডিকেন্সের ঔপন্যাসিক হিসেবে অসামান্য জনপ্রিয়তার কথা স্মরণ করে অরওয়েল প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে যিনি সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের কথা লিখেছেন, লিখেছেন ধনলিপ্সার কথা, শিশুশ্রমের কথা, অনাথের কথা, যাকে ‘বিপ্লবী’ লেখক বলেও বহুজন বিশেষিত করেছেন- তিনি কী করে তার কালে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হন? ডিকেন্সের কালের যারা তার পাঠক ও শ্রোতা ছিলেন-ডিকেন্স দর্শনীর বিনিময়ে নিজের উপন্যাস পাঠ করেছেন বিপুল দর্শকের সম্মুখে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়- সেইসব পাঠক ও শ্রোতা ছিল সমাজের ওপরতলার মানুষ অর্থাৎ শোষকশ্রেণির; সেই তারা যদি ডিকেন্সকে এত আদরে গ্রহণ করে থাকেন, অরওয়েল প্রশ্ন করেছেন, তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে তার, ডিকেন্সের, ‘বিপ্লবী’ চেতনা আর নির্যাতিতের প্রতি সমবেদনা ছিল একটা বিষম ফাঁকি? ছিল সবই মেকি? এবং আসলে ছিলো শোষক এর প্রতি তার আচ্ছাদিত সহানুভূতি?
বছর কুড়ি আগে যখন প্রবন্ধটি প্রথম পড়ি, বাংলাভাষার এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিককদের একজন শরৎচন্দ্রের কথা আমার মনে পড়ে; প্রশ্ন জাগে, নারীর জন্য তার সকল সহানুভূতি, পুরুষ-রচিত সমাজ ব্যবস্থার প্রতি তার সকল আঘাত কি একই প্রকারে তবে ছিলো মিথ্যা, বানানো সাজানো এবং মূলত তিনি কোনো পরিবর্তন চাননি?
অরওয়েল আমাকে তখন গভীরভাবে ভাবিয়েছিলেন; একজন লেখক যিনি সমাজকে প্রকৃতই আঘাত করছেন, সে-সমাজ কেন এবং কোন যুক্তিতে তার গলায় পরিয়ে দেবে জনপ্রিয়তার মালা?…
অরওয়েল আমাকে শিখিয়েছেন একজন লেখকের-সরাসরি বলি, আমার নিজেরই যদি কিছু থেকে থাকে তো- সেই জনপ্রিয়তাকে সন্দেহ করা। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কলমটি থামিয়ে নিজের কলমের দিকে তাকাতে এবং ভাবতে যে আসলে কী আমি করছি?
৫) ফার্নান্দো পেসোয়া প্রসঙ্গেঃ
… ১৯৮৮ সাল, হৃদযন্ত্র শল্যচিকিৎসার পর কন্যা পুত্রকে নিয়ে প্যারিসে বেড়াতে গিয়েছি; যখনই যাই, ওই শহরের দুটি জায়গায় আমি অন্তত একবেলা করে কাটাই- ভাস্কর রদ্যাঁর মিউজিয়াম আর ইউনেস্কো ভবনে। সেবার ইউনেস্কো ভবনে গিয়ে একটি পোস্টার দেখতে পাই, পর্তুগিজ কবি ফার্নান্দো পেসোয়ার জন্ম শতবার্ষিকীর পোস্টার, আমার সেখানে যাবার মাসখানেক আগেই ইউনেস্কো ভবনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে উৎসব, বোর্ডে তখনও লাগানো আছে পোস্টারটি। কবি পেসোয়ার একটি রেখা প্রতিকৃতির নিচে পর্তুগিজ, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা তারই একটি কথা, ‘আমার স্বদেশ হচ্ছে পর্তুগিজ ভাষা।’
এখনো আমার স্মরণ হয়, কি ভীষণভাবে স্পৃষ্ট হয়েছিলাম ফার্নান্দো পেসোয়া- যার নাম বা রচনার সাথে তখন পর্যন্ত আমি পরিচিত ছিলাম না- তার ওই একটি কথায়; অনুভব করে উঠেছিলাম, বাংলাদেশে আমরাও তো ওই একই বাণীর অন্তর্গত; উপলব্ধি করেছিলাম, আমরা সকলেই কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত যা আমরা অনেকেই গাঙ্গেয় বদ্বীপে ভুলে বসে আছি।
৬) রশীদ করিম প্রসঙ্গেঃ
রশীদ করিম আমাদের প্রধান ঔপন্যাসিকদের একজন; তার মতো এতটা প্রস্তুতি নিয়ে, কি পড়াশোনা, কি সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে শিল্পকলায় এমন প্রতিভায় প্রতিসৃত করে আমাদের সমসময়ে খুব কম লেখকই উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছেন। আমি মনে করি, রশীদ করীমের রচনা এখনকার অনেকের তুলনায় অনেক বেশি দীর্ঘজীবী হবে, বাংলা উপন্যাসের আলোচনায় তাকে অনিবার্য উপস্থিত করতেই হবে- যদিও এটা সত্য, রশীদ করিম অধ্যাপক-শাসিত সাহিত্য সমালোচনা ও প্রস্তুতিহীন নিবন্ধকারদের রচনায় থেকে গেছেন ও যাচ্ছেন অনুল্লিখিত, কিংবা উল্লেখ করা হলেও ঘোড়দৌড়ের ভাষায় তা ‘অলসো র্যান’ এর পর্যায়ে।
৭) টনি মরিসন প্রসঙ্গেঃ
১৯৯৩ এর নোবেল পুরস্কার পেলেন কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন লেখক টনি মরিসন। মনে পড়ে গেলো, বছর দুয়েক আগে এই লন্ডনেই পেয়ে গিয়েছিলাম টনি মরিসনের একটি উপন্যাস- ‘বিলাভড’- প্রিয়জন, নিগ্রোদের দাসত্ব এবং সেই দাসত্বের দরুন উৎপীড়ন ও জীবন-আলিঙ্গনের কথা ছিলো উপন্যাসটিতে। মনে পড়ে, তার আরেকটি উপন্যাস ‘জ্যাজ’ -এর কথা; এ উপন্যাসে গোটা কাহিনিই বলে দেয়া আছে প্রথম দশটি বাক্যে, তারপর সেই দশটি বাক্য ঘিরে ধীরে ধীরে ধীরে ঘুরে ঘুরে চরিত্র ও সংকটের উন্মোচন, যেন বা জ্যাজ সংগীত রচিত হচ্ছে শব্দ এবং সংলাপে…
টনি মরিসন একবার এক সাক্ষাৎকারে উপন্যাস সম্পর্কে ধারণার কথা এভাবে বলেছিলেন, ‘আমার বিবেচনায় উপন্যাস একটি মানুষ লিখলেও বস্তুত তা লিখে একটি শ্রেণী কিংবা গোষ্ঠী, যাদের ভেতর থেকে লেখকটি উঠে এসেছে। উপন্যাসের কাজ, মানুষকে জানানো যা সে জানেনা।’
… টনি মরিসনের নোবেল পুরস্কার পাবার পরে পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, মার্কিন মুলুকে কৃষ্ণাঙ্গরা মানবেতর জীবনযাপন করেও তাদের মনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে শিল্পচর্চার ভেতর দিয়ে- প্রধানত সংগীত ক্ষেত্রে; উপন্যাসে যে ধারা প্রবলভাবে শুরু হয়েছিল রিচার্ড রাইটকে দিয়ে, জেমস বল্ডউইন হয়ে এখন টনি মরিসনে এসে তা একটি শীর্ষে পৌঁছুলো।
৮) হামিদুর রহমান প্রসঙ্গেঃ
লেখার টেবিলে বসে আজ কাগজ খুলেছি, প্রথম পৃষ্ঠায় এত বড় বড় সব হেডিং, সব ফেলে আমার চোখ প্রথমেই আটকে গেল এক কলামের ছোট্ট একটি হেডিংয়ের দিকে, আমার একটি হাত যেন অকস্মাৎ বিচ্যুত হয়ে গেল শরীর থেকে- ‘শিল্পী হামিদুর রহমানের জীবনাবসান’।…
স্বাধীন বাংলাদেশ শত্রুর কবল থেকে মুক্ত হবার পর হামিদুর রহমান দারুন শীতের ভেতরে লন্ডনে পাতলা একটি জ্যাকেট পড়ে ব্যালহ্যাম পাতাল রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন আমার জন্য; আমি এসে পৌঁছুতেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন, এখনো তার ঠান্ডা জ্যাকেটের স্পর্শ আমার গায়ে লেগে আছে, আমি আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়ে বলি, ‘গরম কোট পরেননি কেন?’; হামিদ বললেন, ‘ছবি আঁকছি তো, তাই ঠান্ডা করছে না।’
অবিস্মরণীয় এই উত্তরটি আজ ভোরে তার দেহত্যাগের খবর পড়ে আমি আবার কানে শুনে উঠলাম।
শিল্পী হিসেবে হামিদুর রহমান আমাদের সঙ্গে চিরদিনের জন্য রয়ে যাবেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য। …
পৃথিবীর খুব কম শিল্পী এত ভাগ্যবান যে তার একটি কাজের কারণে এবং প্রেরণায় এত অসংখ্য কাজ তার জন্মভূমির সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।
হামিদ, আপনাকে বিদায় বলবো না। আপনার কথা ধার করে বলি, আমরা সবাই লিখব, ছবি আঁকবো, কাজ করবো, তাই আমাদের কোন শীত স্পর্শ করতে পারবে না।
[সেপ্টেম্বর, ২০২১ ]
Leave a Reply