পূর্বপরিচিত

ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে যাওয়ায় তারা আলিঙ্গন করলো একে অপরকে। ‘কতদিন দেখা হয়নি!’ বলে আক্ষেপ করলো দুজনেই। তারপর তারা খবর নিলো একে অন্যের, ফোন নাম্বার বিনিময় হলো, দেয়া হলো কফি খেতে দেখা হবার প্রতিশ্রুতিও।

বাড়ি ফেরার পথে ‘ক’ স্মরণ করতে চাইলো কী কারণে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো; অ্যাতো চমৎকার একটা লোক! (অবাক লাগলো তার, জীবনে কত আজাইরা লোকের সাথে যে দেখা হয়! অথচ সত্যিকার মনে রাখা মতো মানুষগুলো উধাও হয়ে যায় কোনো চিহ্ন ছাড়াই।)

কিন্তু ট্যাক্সি গন্তব্যে পৌঁছার পর সে টের পেলো তার মানিব্যাগটা নেই। দোষীকে এক মুহুর্তে শনাক্ত করে নিয়ে সে ভাবলো, পূর্বপরিচিত লোকটা কাজটা করলো কখনঃ তাদের অপ্রত্যাশিত আলিঙ্গনের সময়, না বিদায় মুহুর্তে। 

ক্যান্টারভিলার ভূতেরা

রাতের বেলা জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে তারা দরজা আটকে দিলো ভেতর থেকে। পরদিন সকালে চে’র মুখ আঁকা একটা বিশাল লাল পতাকা তারা ঝুলিয়ে দিলো বিশাল বাড়িটার ফলকের সামনে (বাড়িটা বহু বছর ধরেই খালি)। পুলিশি হামলার জবাবে ঢিল মারতে বারান্দায় তারা জড়ো করে রাখলো পাথরের স্তূপ আর সাংবাদিকদের বিলানোর জন্য তৈরি থাকলো গাদাগাদা লিফলেট নিয়ে।

অথচ পুলিশ বা গণমাধ্যমের কেউই তাদের দিকে মনোযোগ দেয়নি।

অনেকদিন হয়ে গেলো, এখনো তারা সে বাড়িতেই আছে। নিজেদের তারা দাবি করে ‘বিপ্লবী’ বলে, তবে এলাকার লোকজন তাদের স্রেফ দখলকারী বলেই ভাবে।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শহরটায় বাতাস বয় উপর থেকে, পাশ থেকে নয়। যার অর্থ হচ্ছে এখানে মাথা থেকে টুপি উড়ে যায় না আর দরজারাও বন্ধ হয় না ধুমধাম শব্দে। একই সাথে, জানালা খুললেও এখানে বাতাস পাওয়া যায় না (আর মেয়েদের স্কার্টও ওড়ে না বাতাসে!)। এখানে পতাকা ঝোলানো হয় অনুভূমিক ভাবে, তোমাকে সিগারেট ধরাতে হয় উপর থেকে নিচে ঝুঁকে, ছাতাকে বলা হয় পাশ-ছাতা।

ঘুড়ি ওড়াতে বা কাগজের নৌকা ভাসাতে পারে না ঠিকই, তবুও এখানে পিচ্চিদের শৈশবটা ভালোই কাটে। অন্ততঃ এমন একটা শৈশব তারা পায়, যেখানে তাদের চুল থাকে সর্বদাই পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি।


** গল্প তিনটি অ্যারিয়েল ম্যাগনাসের লেখা। ভদ্রলোকের জন্ম ১৯৭৫-এ, বুয়েন্স আয়ার্সে। স্প্যানিশভাষী লেখক, অনুবাদক অ্যারিয়েলের একাধিক বই অনুদিত হয়েছে জার্মান আর ফ্রেঞ্চ ভাষায়। বর্ণিত গল্প তিনটি স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন কিট মোদে।

[এপ্রিল, ২০২১]