০১.
মুক্তিযুদ্ধের পরে যাদের জন্ম, যুদ্ধকে অনুধাবন করতে হলে তারা ঠিক কীসের কাছে যান?

উত্তরে বলা যায় গ্রন্থাগারের ধুলো জমা বই, পূর্বসূরিদের স্মৃতিকথা, অথবা পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা। কিন্তু এসব তো অনুসন্ধান তো তাত্ত্বিক; তথ্য আর পরিসংখ্যানের বাইরে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করার যে আত্মিক যাত্রা করে বাংলাদেশের মানুষ, আরও নির্দিষ্ট করে বললে তরুণেরা; সেটার প্রাথমিক আগ্রহটা কে উস্কে দেয়?

প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ে, মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ পড়ে আমরা বন্ধুরা কী ভীষণ তাড়িত হয়েছিলাম শৈশবে। আজও ঈর্ষা করতে হয় সে পাঠককে, যিনি জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ পড়তে বসবেন প্রথমবারের মতো আর শুনবেন ক্র্যাক প্লাটুনের রুমির সঙ্গে টম জোন্সের গ্রিন গ্রিন গ্রাস। যে পাঠক পড়তে বসবে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামলছায়া’র মতো ছোটগল্প অথবা শাহীন আখতারের ‘তালাশ’ উপন্যাস; অনাগত কালেও সে নিশ্চিত আবিষ্কার করতে পারবে মুক্তিযুদ্ধ কতটা ত্যাগের আর কী ভীষণ কদর্যতার ছিল। পাঠকের সংবেদনশীল মনের ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে এসব কাহিনী তাকে উপলব্ধি করায় এটাও যে, দানবের বিরুদ্ধে লড়াই জিতে আসাতেই যুদ্ধ ফুরিয়ে যায়নি; যুদ্ধ আরও অনেক নির্মম, সেটির ক্ষত একালের ঢাকা মহানগরীর রাজপথের বুকে ফুটে থাকা মেট্রো রেলের নির্মাণযজ্ঞের চাইতেও গভীর।

কেবল বইয়ের পাতার শব্দ নয়, অনুভব করি, ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নিয়ে যায় সেলুলয়েডের দৃশ্যও। একুশে ফেব্রুয়ারির দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দা আর জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ যে সমার্থক হয়ে গেছে, সে কথা পুরোনো। আবার নতুন শতকের সিনেমা ‘গেরিলা’কেও তরুণ প্রজন্ম যখন গ্রহণ করে বিপুল আগ্রহের সঙ্গে; তখন স্পষ্ট হয়, যে বাংলাদেশের মানুষ এখনো মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে চায় সেটির বহুমাত্রিকতা নিয়ে।

গানের কথাও বাদ দেওয়া চলে না। কোথাও পড়েছিলাম, যে বেথোভেনে মোহিত হয়ে লেনিন বলেছিলেন, ‘এই সুর শুনলে আমি বিপ্লব শেষ করতে পারব না!’; সৌভাগ্যের ব্যাপার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঠিক উল্টো ব্যাপারটিই ঘটেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পীরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে উদ্দীপিত করেছিলেন, সে সত্য এখন প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রীয় দিবসে পাড়ার মোড়ে অজস্র চটুল হিন্দি গানের সঙ্গে মুহুর্মুহু বাজিয়ে জীর্ণ করে ফেলার পরেও তাই ‘…নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়!’ শুনে আমরা আজও কখনো কখনো থমকাই।

এসব উদাহরণ টানছি, কারণ উপলদ্ধি করি; পরিসংখ্যান নির্ভর প্রতিবেদন আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের রাশভারি সেমিনারের চাইতে ইতিহাসকে বহন করার কাজটা সাহিত্য, সঙ্গীত আর সিনেমার জন্য সবসময়ই সহজতর। মুক্তিযুদ্ধকেও তাই, বাংলাদেশের মানুষ আত্মিকভাবে অনুভব করে আর করতে চায় শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্য দিয়ে।

০২.
বিগত শতকের শেষ দিকটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপেক্ষাকৃত একমাত্রিক ছিল। ‘একমাত্রিক’ এই অর্থে, যে তখন চারপাশের প্রায় সকলে একই গণমাধ্যমের ভোক্তা। হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় এক একটা টিভি ধারাবাহিক সারা দেশের মানুষ একত্রে দেখছে, সৈয়দ শামসুল হক কি মনজুরুল ইসলাম পত্রিকায় পাতায় কলাম দিয়ে আলোড়িত করছেন গোটা দেশের পাঠকদের, নীরব দুপুরে প্রতিটি মফস্বলেও রাজধানীর মতোই রেডিওতে শোনা যাচ্ছে এন্ড্রু কিশোর আর সাবিনা ইয়াসমিনকে।

কিন্তু প্রথমে নব্বই দশকের মাঝপথে ডিশ অ্যান্টেনা, আর তার মোটামুটি এক যুগ পরে যখন অন্তর্জালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আগমন ঘটেছে আমাদের মাঝে, বিশ্বায়নের থাপ্পড়ে তখন ভেঙে গেছে মানুষের আগের মানস। এই দুনিয়া এখন আর, সত্যিই আলাউদ্দীন আলীর সেই দুনিয়া নাই।

ফেলে আসা আশি কি নব্বইয়ের দশককে যদি ‘একমাত্রিক’ হয়, আমাদের বর্তমান সময়টার মাত্রা গণনা তবে প্রায় অসম্ভব। এবং স্বাভাবিকভাবেই, শিশু কিশোর বা তরুণদের মনোজগতের গড়নটাও এখন দারুণ বৈচিত্র্যময়। একই ছাদের নিচে থাকা ভাইবোনের একজনের দেয়ালে হয়তো স্প্যানিশ লিগের ফুটবলারের পোস্টার ঝুলছে, অন্যজনের পোশাকে হয়তো শোভা পাচ্ছে কোরিয়ান টিভি সিরিজ, আরেকজন হয়তো দিনরাত ডুবে আছে হলিউড তারকাদের ইনস্টাগ্রামে। বায়বীয় স্বস্তির একটা বুদবুদ সকলে তৈরি করে নিয়েছে নিজের রুচি অনুসারে। যা নেই ফেসবুকে, আমাদের বুকেও সেটা অনুপস্থিত। আমরা জানি কেবল পর্দা থেকে ছুটে আসা কাহিনীটাকেই, তার বাইরে নিজে থেকে গল্প খোঁজার উদ্যম আমাদের ক্রমশ ক্ষীয়মাণ।

ভাবনা জাগে তাই; শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্যের নতুন এই জগতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কি এখনো আগের মতোই সাড়া জাগায় তরুণদের মনে?

দুশ্চিন্তার কারণ তো আছেই। বিধিনিষেধের বেড়াজালে শিল্পকে আটকানো যায় না বলে সত্যিকারের বিশ্বনাগরিক যে নিজের ভালো লাগা গান, সিনেমা কিংবা বইকেই বেছে নেবে; সেটা এই উন্মুক্ত অন্তর্জালের যুগে স্বাভাবিক। সময়টা বাজার অর্থনীতি আর প্রচারকুশলতার বলে, গেইম অফ থ্রোনসের আগুন ছোঁড়া ড্রাগনের সামনে শুধু লাঠি হাতে সৈয়দ হকের নুরুলদীন আজ খুব অসহায়। এখন এমনকি অবাকও লাগে না, যখন দেখি যে হলিউডের পর্দা মারফত আমাদের চারপাশের অজস্র তরুণ অবহিত শিকাগোর ছাত্র আন্দোলন কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানের ঘটনাবলী সম্পর্কে; কিন্তু খোদ বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর কিংবা স্বৈরাচার হটানো নূর হোসেন তাদের কাছে ডাকবাক্সের মতোই প্রাচীন এবং অচেনা।

আশঙ্কার এখানেই শেষ নয়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে মনে পড়ে, যার একটি ছোটগল্পে আমরা দেখেছিলাম পা উল্টোদিকে ঘোরানো এক লোককে, বাংলাদেশকে যে টেনে নিতে চায় পেছন দিকে। ব্লগ, ফেসবুক আর ইউটিউবের অজস্র মিথ্যা, অবৈজ্ঞানিক আর সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের ঢেউ আমাদের অনুভব জানায়, প্রতিক্রিয়াশীল সেই শক্তি জেগে আছে আজকের বাংলাদেশেও। উল্টোদিকে পা ঘোরানো সেই সব লোকের মিথ্যাচারের দাপটে তাই, তরুণদের বিভ্রান্ত হবার সম্ভাবনাও আজ তাই অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি।

এমন যখন পরিস্থিতি; তরুণদের মজ্জায় শুভবোধের ভ্যাক্সিন দিতে হলে; ইতিহাসকে বয়ে নেওয়া শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্য ছাড়া আমাদের আর রাস্তা কোথায়?

০৩.
কিন্তু শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্যকে তরুণদের উপযোগী নতুন করে উপস্থাপন করাটাও কঠিন এক কাজ। আগেই বলেছি, মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার লড়াইয়ে উন্নত বিশ্বের পুঁজি, মেধা আর শ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্পীদের প্রতিযোগিতাটা এমনিতেই ভয়ানক অসম। তাছাড়া গত এক দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতির পথ এমন বাঁক নিয়েছে; সত্যিকারের মেধাবী আর প্রজ্ঞাবান ছাড়া সেটার বয়ান তৈরিও অসম্ভব। অথচ কালের নিয়মে এখন আমরা দাঁড়িয়ে আছি একটি প্রজন্মান্তরে, বাতিঘরের মতো দীর্ঘ মানুষ এ মুহূর্তে আমাদের সমাজে কম। যারা আছেন, তারাও যেন তরুণদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলতি সময়টার এই জটিল রসায়নটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।

যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহার করা সিনেমা, গান বা বইগুলোর পাশে নতুন দিনের ভাষায় শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্য আবিষ্কারের জন্য তাই বাংলাদেশকে তাকাতে হচ্ছে নবীনদের দিকেই। আশা করা যায়, নতুন মাধ্যমে, নতুন ভঙ্গীতে, তারাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দিয়ে উদ্দীপ্ত করতে পারবেন মানুষকে। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে ‘মুজিব’ নামের গ্রাফিক নভেল তৈরির সাম্প্রতিক উদ্যোগটি এ প্রেক্ষিতে অবশ্য উল্লেখ্য। প্রশংসনীয় এই কাজটির মতো পডকাস্ট কি ডকুমেন্টারি তৈরি করেও তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাসের দিকে আকর্ষিত করা যেতে পারে।

নতুন করে সাজাতে হবে আমাদের যাদুঘরগুলোকেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হত ইহুদীদের স্মরণে ইউরোপের নানাপ্রান্তে যে যাদুঘরগুলো আছে, এই শতাব্দীতে তাদের অনেকেই নিজেদের খোলনলচে পাল্টে ফেলেছে। আলোছায়ার খেলা, মনের ওপর চাপ তৈরি করা শব্দ, চলমান মর্মস্পর্শী সব ছবি; দর্শকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার এরকম নানা কায়দা ব্যবহার করে যাদুঘর পরিদর্শনকেও তারা সব বয়েসের মানুষের কাছে করে তুলেছে ভীষণ আকর্ষণীয়। ঢেলে সাজালে, উনিশশো একাত্তরের বেদনাবিধুর আর গৌরবের ইতিহাসকে অনুভব করানোটার কাজের একটা বড় অংশ আমাদের যাদুঘরগুলোও করতে পারে।

০৪.
কিন্তু তাই বলে ইতিহাসের অ্যাকাডেমিক চর্চাকে কি বেকার করে ছেড়ে দিতে হবে? শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্য নির্মাণের দোহাই দিয়ে কি আমরা এড়িয়ে যাব অভিসন্দর্ভের মলিন পাতা অনুসন্ধান আর বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার গ্রহণের শ্রমসাধ্য কাজগুলো? নাহ, ইতিহাসের অনুসন্ধানকে কিছুতেই প্রতিস্থাপন করা যায় না শিল্পচর্চার অজুহাত দিয়ে। গল্প কি উপন্যাস আমাদের ব্যক্তিজীবনের এমন সব দিকে আলো ফেলতে পারে, কোনো প্রতিবেদন বা গবেষণায় যা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তবু ভিত্তি তার স্থাপন করতে হয় বাস্তবের ওপরেই; হ্যারি পটারের যাদুর দুনিয়াও যেমন বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তৈরি হয় না।

আমরা অবহিত, যে বহু দেশেই শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে ইতিহাসকে ভেঙেচুরে ফেলার ওপর কোনো সীমা আরোপ করা হয় না আর। সময়ের দারুণ আলোচিত টিভি সিরিজ ‘নারকোস’ থেকে শুরু করে কোয়েটজি কিংবা ইয়োসার মতো নোবেলজয়ী লেখকদের উপন্যাসে পর্যন্ত তাই লক্ষ করা যায় কল্পনার উদার প্রয়োগ। এসব লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের বিশ্বাসে সন্দেহ পোষণ করি না বিন্দুমাত্র, কিন্তু অনুধাবন করি, বাংলাদেশের বাস্তবতা হলিউডি বা ইউরোপিয়ান ঘরানার চাইতে দারুণ ভিন্ন। প্রতিটি নাগরিকের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠিত করবার যে কাজটি বহু আগেই সম্পন্ন হবার ছিল, নানা মহলের ক্ষমতার রাজনীতির মারপ্যাঁচে সেটি এখনো অসম্পূর্ণ। আবার ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাবার সময় না পেয়ে পাবলিকও এখানে গল্প-উপন্যাসের পাতা কি সিনেমার দৃশ্যকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগটা ছাড়তে চায় না।

এমন যখন প্রেক্ষাপট, আমাদের তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অ্যাকাডেমিক চর্চাকেই দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। গণহত্যার বিস্তৃতি নিয়ে গবেষণা অথবা প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহণের শ্রমসাধ্য কাজগুলোর মধ্য দিয়ে ইতিহাসবিদ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, এবং শিল্পী তখন সেটাকে করতে পারেন সার্বজনীন। তথ্যের শক্তি কল্পনার চাইতে বেশি, তা যেমন অনস্বীকার্য; তেমনি এটাও অনস্বীকার্য, যে কোনো প্রতিবেদন কখনো স্পষ্ট করতে পারবে না একাত্তরের ঝুমবৃষ্টিতে মিলিটারির ভয়ে পালাতে থাকা কোনো পরিবারের যাতনা, সেটার জন্য মানুষকে ফিরতেই হবে ‘খোঁয়ারি’র মতো গল্পের কাছে। কোনো পরিসংখ্যানের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না, মানুষের হৃদয়ে ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের…’ গানটির মতো দ্যোতনা সৃষ্টি করা।

তবে সত্যের প্রতি একাগ্র থাকার সঙ্গে সঙ্গে; শব্দ, ছন্দ আর দৃশ্য নির্মাতাদের সামনে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা এই ব-দ্বীপে বিরাজমান। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় কী করে আমাদের নায়কদের স্খলন ঘটে অবিরত, দেখেছি কীভাবে তপ্ত রাজপথ আর মুখরা সাইবার জগতে আজকের শত্রুকেও কেউ কালকেই বুকে তোলে, দেখেছি ক্যামন করে এখানে বিরুদ্ধ মতকে ফেলে দেয়া হয় নানারঙা স্টিকার লাগানো বাক্সে। আমরা জেনেছি, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিলো ‘জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার যে বার্তা, তার বদলে যেন নিজের স্বার্থই আজ গুরুত্ব পাচ্ছে এমন কি শিল্পের সাধকের কাছেও। আমরা আবিষ্কার করেছি, যে এসব বিরুদ্ধ স্রোত ঠেলে আর অপ্রয়োজনীয় তথ্যের অবিরাম প্রবাহে কী ভীষণ কষ্টকর হয়ে উঠছে শিল্পসৃষ্টি আর সত্য উচ্চারণের কাজটা।

কিন্তু এ কথাও সত্যি, যে কঠিন কথাটা সহজ করে উচ্চারণেই শিল্পের সার্থকতা। সেই দুরুহ কাজটি রেসকোর্সে শেখ মুজিবুর রহমান করতে পেরেছিলেন বলেই তার ৭ মার্চের ভাষণটি হয়ে উঠেছে কবিতার মতোই শাশ্বত। শব্দের, ছন্দের, দৃশ্যের আরাধনা যারা করেন; কবিতাটির দিকে তারা যেন আজ আরেকটিবার ফিরে তাকান।

বাংলাদেশের মানুষ সবই জানে ও বোঝে। মুক্তিযুদ্ধকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হলে তাই, এই হ্যাশট্যাগ মুখর আর ভাইরাল পিপাসু সময়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃত শিল্পীকে একটি কাজই করতে হবে; সংবেদনশীল ও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে গণমানুষের সামনে এসে হাজির হওয়া।

[২৬ মার্চ, ২০২১]

* ইতোপূর্বে  প্রবন্ধটি ‘দা ডেইলি স্টার’ পত্রিকার অনলাইন  মতামত বিভাগে ২০২১-এর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।