(১)
কাফকার শহর প্রাগের সেন্ট ভিটাস ক্যাথেড্রাল, কিংবা জার্মানির কোলোন ক্যাথেড্রালের চাইতে কী কারণে প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রাল বেশি আলোড়িত করে আমাদের? প্রশ্নটার উত্তরে বলা যায়, নটরডেমের নামের সাথে আমাদের পরিচিতি। যুগে যুগে দেশে দেশে অগণিত যে সব পাঠক ভিক্টর হুগোর ‘হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেম’ পড়েছেন, কোয়াসিমোদো আর এসমেরালদার সাথে ওই স্থাপনাটাও জায়গা করে নিয়েছে তাদের হৃদয়ের স্যাংচুয়ারিতে। উপন্যাস আর উপন্যাসের চরিত্রেরা যখন সত্যি আমাদের মনে ভালোবাসা জাগায়, কোনো পরিসংখ্যান আর তথ্য দিয়ে সেটাকে মোকাবেলা করা যায় না তখন।

কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয়, একই দিনে পুড়ে যাওয়া জেরুসালেমের মসজিদুল আকসা আর প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রালের মাঝেও দুনিয়াজোড়া মানুষের মন ক্যানো বেশি পক্ষপাত দেখায় দ্বিতীয়টির জন্য? এবার কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আগেরবারের চাইতে একটু কঠিন লাগে। সাহিত্যের শক্তি নিয়ে মনে দ্বিধা নেই বিন্দুমাত্রও, কিন্তু বিরাট সংখ্যাক অনুসারীযুক্ত একটি ধর্মের পীঠস্থানকে মানুষের মনোযোগের তালিকায় হেলায় পেছনে ফেলে দেওয়া শুধুই উপন্যাসের পক্ষে সম্ভব নয়। অনুভব করা যায়, রাজনীতিরও যোগ আছে ব্যাপারটায়। সেই রাজনীতি, যার খেলায় পাশ্চাত্য নিজেকে এগিয়ে রাখে প্রাচ্যের চাইতে, সেই রাজনীতি, যেখানে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ক্রিশ্চিয়ানিটি এগিয়ে থাকে বাদামি কি রোদে পোড়া ইসলামিস্টের চাইতে।

মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস আলথুসার এর যে ঘটনাপ্রবাহ, তার পেছনের মূল কারিগর ‘এক্সটিংশন রেবেলিয়ন’ নামের এমন এক পরিবেশবাদী দল, যাদের নেত্রী গেইল ব্র্যাডবুকের মাথায় পৃথিবী বাঁচানোর তাড়না আসে তখনই, যখন পরিবেশ-নিয়ে-কেয়ার-না-করা-পাবলিক স্বতঃস্ফূর্ত হয়েই চাঁদা তোলে অগ্নিদগ্ধ নটরডেম ক্যাথেড্রালকে পুনরায় গড়ে তুলতে।

(২)
উপন্যাস আলথুসার এর কেন্দ্রে আছে লন্ডনে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া এক বাংলাদেশি ব্যাংক কর্মকর্তা, ফরাসি দার্শনিক লুই আলথুসারকে নিয়ে যার আগ্রহ সীমাহীন। সেই মার্ক্সবাদী দার্শনিক আলথুসার, যিনি বলেছিলেন যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের দুভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, পীড়নমূলক প্রতিষ্ঠান (যেমন আদালত, পুলিশ) দিয়ে, আর আদর্শিক প্রতিষ্ঠান (যেমন সুশীল সমাজ, স্কুল, পরিবার) দিয়ে। তো উপন্যসের শুরুতেই দেখা যায় যে সেই আলথুসারের বাড়ি দেখতে গিয়ে লন্ডনের টিউবে চাপে গল্পের নায়ক ব্যাংক কর্মকর্তা, কিন্তু প্রকৃতিপ্রমের আবেগে সে যেহেতু যত্রতত্র ছবি তুলেছে মূলত গাছের, সাথে কিছু বাড়িরও, ফলে তাকে সন্দেহভাজন লোক হিসেবে আটক করে লন্ডন পুলিশ। জানা যায় ‘এক্সটিংশন রেবেলিয়ন’ নামে যে পরিবেশবাদীরা গত কদিন ধরে গরম করে রেখেছে লন্ডন, তাদেরই একজন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তাকে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পুলিশ যদিও ছেড়ে দেয় সন্দেহভাজনকে, কিন্তু কৌতূহলের তাগিদে বাংলাদেশি ওই ব্যাংক কর্মকর্তা নিজেই এবার আলোচনা জমায় আন্দোলনকারীদের সাথে। আর ধীরে ধীরে লোকটা জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনে, ‘এক্সটিংশন রেবেলিয়ন’ এর সদস্যও হয়ে ওঠে সে। পাঠক ক্রমাগত পরিচিত হয় আকর্ষনীয় তরুণী মেগান, পুলিশ অফিসার মার্ক, ক্ষ্যপাটে প্রফেসর স্যামুয়েল, আন্দোলনের নেত্রী গেইল ব্র্যাডব্রুকের মতো চরিত্রদের সাথে।

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, পেস্টিসাইডের ব্যবহার আর হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ার মতো বড় বড় বিপদে ভরপুর পৃথিবীতে; যেখানে রাষ্ট্র চায় যে কোনো উপায়ে সমস্ত বিক্ষোভের দমন, আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সেখানে ‘এক্সটিংশন রেবেলিয়ন’ এর আন্দোলন হয়ে ওঠে জীবনানন্দের ধানসিড়ি নদী বাঁচানোর উপায়। উপন্যাস আলথুসার, এগিয়ে যায় এই নিয়েই।

(৩)
আধুনিক সভ্যতা যে এক প্রহসন, আলথুসার উপন্যাসের চরিত্রদের পারষ্পরিক ও পাশ্চাত্যঘেঁষা জটিল মিথস্ক্রিয়ায় ব্যাপারটা ক্রমশ স্পষ্ট হয় পাঠকের কাছে।
শক্তিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা ব্যক্তি মানুষেরাও নৈতিকভাবে এ যুগে কতটা ভঙ্গুর, নেলি আর উইলিয়াম স্কিপিং বুঝিয়ে দেয় সেই ব্যাপারটা। উপন্যাসের নায়ক ব্যাংক কর্মকর্তা সব কিছু থেকে রক্ষা করতে চায় যে মেগানকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ পুলিশ অফিসার তাকে ঠাপ দিতে ছাড়ে না। আবার মার্কের স্ত্রী জেসিকা তাকে ছেড়ে গিয়ে যেন বুঝিয়ে দেয় এ যুগে ক্রিশ্চিয়ানিটির সাথে শান্তিপুর্ণ সহাবস্থান হয় না ইসলামের, বুঝিয়ে দেয়, ধর্মের সাথে সাথে সংস্কৃতিও বিভাজন রেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের মাঝে।

শুধু একটি ক্ষেত্রেই কোথাও বিভাজন নেই, আর তা হলো দুর্বিনীতদের শায়েস্তা করবার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বলপ্রয়োগ। আলথুসারের দেয়া তত্ত্ব মেনেই দুনিয়ার সর্বত্র এক সেই দমন-পীড়ন। সভ্যতা একদা আত্মঘাতী করেছিলো জীবনানন্দকে, তা আমাদের জানা; আর আলোচ্য উপন্যাসের পাতায় আমাদের জানা হয়, যে আজও ধানসিঁড়ি বাঁচানোর জন্য যে মানুষ ত্যাগ করবে সর্বস্ব, তার পাশ থেকে সরে যায় পাশ্চাত্যের ছায়া আর প্রাচ্যও তাকে দমন করে বলপ্রয়োগে। পাঠক অনুভব করে, সহজ লোকের মতো সহজ পথে চলা কী অসম্ভব কঠিন কাজ এই দুনিয়ায়, যখন পুরো সমাজ-ব্যবস্থাটার যন্ত্রের ব্যক্তি মানুষ একটা স্ক্রু কেবল। যখন সে কিছু বদলাতে চায়, তখন যে সে চারপাশের জগতটায় অনবরত মিথ্যাই আবিষ্কার করে; সেটাই সত্য। এবং যখন কেউ বলে, যে সত্যকথনের ঝুঁকি নিচ্ছে সে, সেটাও যে এক মিথ্যা; পাঠক বুঝে ফেলে সেটাও।

বর্ণবাদকে সযত্নে লালন করা জেনারেল ফ্লাশটারমেইশটার এখনো তাই দেমাগের সাথে দাপিয়ে বেড়ায় আজকের দুনিয়ায়; অথচ পৃথিবীর কিছুই যে বদলাবে না, সেই সত্য উন্মোচন করা দার্শনিক আলথুসার ক্রমশ লীন হয়ে যেতে থাকে বুড়ো ক্লেইজের স্মৃতির সাথে সাথে।

(৪)
নিজের প্রথম উপন্যাস ‘হিয়ার দা উইন্ড সিং’ লিখতে গিয়ে হারুকি মুরাকামির মনে হয়েছিলো, নিজের স্বরটা যেন ঠিক স্পষ্ট করতে পারছেন না তিনি। সেই উপলদ্ধি থেকে বিচিত্র একটি কাজ করেন হারুকি। উপন্যাসের প্রথম খসড়া মাথা থেকে ঝেড়ে, আর নিজ ভাষা জাপানি বর্জন করে শুরু করেন ইংরেজিতে উপন্যাস লেখা। অন্য একটা ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে গেলে যা ঘটে, তাই হয় তখন। হারুকির বাক্যগুলো হয় অপেক্ষাকৃত সরল আর কাটাকাটা। এবং এইভাবে মুরাকামি যখন আবিষ্কার করেন যে লেখার একটা নিজস্ব ছন্দে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি, তখনই কেবল শুরু হয় তার নিজের লেখা ‘ইংরেজি’ উপন্যাসের ‘জাপানি’ অনুবাদ। সমালোচকেরা যে বলেন মুরাকামির রচনার ধাঁচ জাপানি নয়, বরং অনেকটা যেন অনুবাদের মতো; বিষয়টাকে না উড়িয়ে হারুকি বরং সেটাকে আজও স্বীকার করেন জোরগলায়।

মাসরুরের গদ্যটাও এভাবে বিশিষ্ট। এক ধরনের ছন্দ সেটায় আছে ঠিকই, কিন্তু তা আবিষ্কারের আগেই একটা অনুবাদসুলভ বার্নিশের গন্ধ সহ্য করতে হয় পাঠকের নাককে। অথচ দীর্ঘ বাক্যের মাঝে ইংরেজি শব্দ আর রুপসী বাংলার ফুল-ফল-লতার প্রকৃতি মিশিয়ে নিজস্ব যে কোলাজ তৈরি করেন মাসরুর, বেশ আকর্ষণীয় সেটা।

ভাষার এই কারিগরির সাথে, অসতর্ক পাঠকের কাছে আলথুসার উপন্যাসের আঙিনাকে আরেকটু দূরের করে তোলে আরেকটি ব্যাপার। পট। উপন্যাসের বর্ণিত পরিবেশজনিত সমস্যাটি বৈশ্বিক ঠিকই, কিন্তু শেষের দিকের খানিক অংশ বাদ দিলে মাসরুরের গোটা উপন্যাসটারই পট হচ্ছে পাশ্চাত্য। মনে পড়ছে, সৈয়দ হকের উপন্যাস ‘তুমি সেই তরবারি’ও লেখা লন্ডনের প্রেক্ষাপটেই, কিন্তু সেখানে চরিত্রদের কার্যকলাপ বেশ বাঙালি গোছের হওয়াতেই সেটা খুব আলাদা লাগে না যেন, অথচ মাসরুর সেখানে একদম অচেনা একটা জানালা খোলেন। তার উপন্যাসের মূল চরিত্রদেরও মানসিকতা থেকে যৌন আচরণ পর্যন্ত সবকিছুতেই পশ্চিমা ঘরানার। ফলে বাংলা ভাষার যে পাঠক এই উপন্যাস পড়তে বসে, কৌতূহল জাগানো এক দশার ভেতরে দিয়ে যায় সে। হ্যাঁ, পেরুভিয়ান ভার্গাস ইয়োসার ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র কিংবা ব্রাজিলের বুকে লেখা উপন্যাস আমরা পড়েছি, ইউরোপিয়ান সার্বজনীন সংস্কৃতির সুযোগ নিয়ে এরিখ রেমার্ক’ও গপ্পো ফেঁদেছেন অন্য দেশের পটে; কিন্তু বাংলা ভাষার উপন্যাসে এই ব্যাপারটা (Appropriation? অধিগ্রহণ বলবো ব্যাপারটাকে?) এখনো নতুন। ফলে, অনভ্যস্ত পাঠকের ঠিক তেমনই লাগে, যেমনটা বোধ করি লাগবে কলম্বিয়ার কোনো পাঠকের, যদি সে গার্সিয়া মার্কেজের উপন্যাসে দেখতে পায় পুরান ঢাকাকে। 

তবে এই নতুনত্বকে উচ্চকন্ঠে স্বাগত জানিয়েও মনে খচখচ করে আরেক কথা। হয়তো বিশ্বায়নের পথও এটাই যে চিনুয়া আচেবে বর্ণনা দেবেন কী করে উইঘুর মুসলিমরা হারাচ্ছে তাদের স্বাতন্ত্র্য, কিংবা শহীদুল জহিরের বান্দরের দুধ খাওয়া পোলা ঘোরাঘুরি করবে নোভাস্কশিয়ার বরফে। কিন্তু আলথুসার উপন্যাস কি আমাদের এটাই বলে না, যে গেইল ব্র্যাডব্রুকের প্রোসেস ড্রিভেন, মেথডিক্যাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতারিতই হতে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক কর্মকর্তাকে? যে রাজনীতির হাত ধরে মসজিদুল আকসার চাইতে দুনিয়াজোড়া বেশি ফুটেজ খায় নটরডেম ক্যাথিড্রাল, সে রাজনীতি বিস্মৃত হওয়াটা কি উচিৎ আমাদের?

(৫)
পাঠক মাত্রই জানেন, ভালো উপন্যাসের ক্ষেত্রে গোপন একটা ভরকেন্দ্র থাকে, অনেক সংকেত আর বাক্যের আড়ালে সেখান থেকে পাঠকের আবিষ্কার করে নিতে হয় লেখকের মূল কথাটা। ‘মবি ডিক’ উপন্যাসকেই ধরা যাক। এ কি তিমি শিকারীদের কার্যকলাপের বয়ান? নাকি একটা ঘোরের পেছনে ছুটে চলা মানুষের পরিণতির গল্প? পাঠক যখন তাই ক্রমাগত করোটির ভেতর খুঁজতে থাকে ভরকেন্দ্র, তার মন তখন অজান্তেই নিমজ্জিত হয়ে যায় উপন্যাসে। ফলে, যতগুলো আপাত ভরকেন্দ্র উপস্থাপন করা যায় উপন্যাসে, ততই তা পাঠকের মনে প্রশ্নের জন্ম দেয়, আর ততই উপন্যাসটা হয়ে ওঠে পাঠকের।

আলথুসার উপন্যাসে মাসরুর আরেফিন এই কাজটা করেছেন বেশ দক্ষতার সাথেই। লুই আলথুসারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে ধ্বংস দেখতে পাওয়া পৃথিবী, পাশ্চাত্য প্রাচ্যের বিরোধ আর আধুনিক মানুষের নিঃসঙ্গতার মতো ভরকেন্দ্রগুলো উপন্যাসটাকে করে তুলেছে আগ্রহোদ্দীপক।

কিন্তু ভরকেন্দ্রের বাইরেও উপন্যাসে তো এক রকমের প্রাণভোমরাও দরকার। সেই প্রাণভোমরা, যা আজও আমাদের কাছে কোয়াসিমোদো আর এসমেরালদাকে অনন্য করে তোলে, যা আমাদের গলার কাছে কী যেন দলা পাকিয়ে তোলে এরিখ রেমার্ক পড়তে গেলে। লেখকের কৃতিত্ব সেই প্রাণভোমরাকে একের পর এক ভরকেন্দ্রের আড়ালে লুকিয়ে ফেলায়, আর পাঠকের কৃতিত্ব সেই প্রাণভোমরা উদ্ধারে।

অথচ নানা দিকের টানাহ্যাঁচড়ায় পাতালপুরীর কোনো কৌটায় লুকিয়ে রাখা সেই প্রাণভোমরা ঠিক যেন ধরা দেয় না আলথুসার-এ। আক্ষেপ তাই একটু লাগেই। তবে সেটা নিয়ে গলা তোলাও অনুচিৎ। যে পৃথিবীতে আন্দোলনের পেছনে কলকাঠি নাড়ে মসনদে বসে থাকে লোকেরাই; যে পৃথিবীতে কে, কাকে, কী কারণে মারছে সেটাই বুঝে ওঠা যায় না অক্সফোর্ড স্ট্রিটের দোকানে; সে পৃথিবীতে উপন্যাসের প্রাণরহস্য নির্ণয় বাহুল্য ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

[২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০]

[২০২০ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইগুলোর কয়েকটাকে নিয়ে আমার এলোমেলো পাঠানুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই সিরিজ। সিরিজের সবগুলো কিস্তি পাওয়া যাবে এইখানে]