প্রথম দেখায় স্টেশনটাকে বেশি সুবিধার লাগে না। টিভি নাটকে বাংলাদেশের মফস্বলের কোনো অনামা রেলস্টেশন দেখাতে হলে যেভাবে সেট সাজাতে হয়, প্রায় সেই আদলেই সাজানো। বাতি জ্বলছে না অনেক জায়গায়। ওভারকোট মোড়া সন্দেহজনক দুয়েকটি অবয়ব, যে দলে পুরুষ আর নারী উভয়েই আছে, প্রায়ই আমাদের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। এদের দিকে দৃষ্টিপাত করে আমার উদ্দেশ্যে নিচুস্বরে নানা মাত্রার সতর্কবাণী ছাড়ে সফরসঙ্গী রিফাত আলম।
ঘটনাস্থল বেলগ্রেড, সময় রাত্রি সোয়া দশটা হবে। সার্বিয়ার রাজধানী থেকে আমরা রওয়ানা হবো হাঙেরির রাজধানী বুদাপেস্টের দিকে।
তথ্যকেন্দ্র বা এরকম সমস্ত কিছু পাট চুকিয়ে স্টেশনের লোকজন মনে হচ্ছে বাড়ি চলে গেছে ইতোমধ্যে, নির্ধারিত ট্রেনটি কোন প্ল্যাটফর্মে আছে, সেটি বের করতেই নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। গত দুদিন পায়ে হেঁটে বেলগ্রেড তোলপাড় করে ফেলে স্থানীয়দের একটা আক্ষেপ খেয়াল করা গেছে বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শেনজেন এলাকায় ঢুকতে না পেরে সার্বিয়া বেশ কাতর। আশ্রয়দানকারীর বদনাম করছি বলে কুষ্ঠ হবে হয়তো, তবে এদের ব্যবস্থাপনার বহর দেখে ঢাকার কমলাপুরকে আমার বেশ ভালোই লাগে।
তবে এই রেলস্টেশনেও প্রশংসা করার মতো ব্যাপার আছে। দেখতে যত সন্দেহজনই হোক, কাছে এসে কেউ বিরক্ত করলো না। বরং আমাদের গায়ের রঙে রাঙানো এক ভাইকে আবিষ্কার করলাম। ছেলেটি ভারতীয়, দেখে বোধ হয় যে একেবারেই খেটে খাওয়া মানুষ। তবে পাশেই বসে থাকা তার স্ত্রী এক সোনালি চুলের বুলগেরিয়ান। আগ্রহ নিয়ে এদের সাথে কথা বললাম খানিক। সেই পুরানো গল্প। প্রেমের বিয়ে, কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ছেলেটির, ফলে এখন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একবার বুলগেরিয়াগামী একটা ট্রেনে উঠে পড়তে পারলেই যে তার দুঃখের দিন ফুরোবে, এই আশায় তার চোখ অন্ধকারেও জ্বলে। আমি আর রিফাত মন দিয়ে বেচারার কথা শুনে যাই।
ট্রেন আসলো নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মিনিট পর। তা বাহনটির অবস্থা প্রায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের মতোই। সিট নম্বর মিলিয়ে দেখি চার বার্থের এক কামরায় আমরা দুজন ওপরে নিচে জায়গা পেয়েছি। বিছানার অবস্থা বেহাল, একদিকে ফোম বেরিয়ে আছে। আবার বালিশগুলোকেও ঠিক পরিষ্কার বলে আখ্যা দেয়া মুশকিল। এই জায়গায় আগামী সাত ঘন্টা ঘুমিয়ে যাবো? আবার বলকান অঞ্চলে রাতের ট্রেনে ডাকাতি নিয়েও নানা ধরনের গালগপ্পো শুনেছি। কাজেই নিরাপদে বুদাপেস্টে পৌঁছতে পারবো কি না, তা নিয়ে একটু ধন্দে পড়ি। সাথে আরো চিন্তাও থাকে। এই কামরার বাকি দুই বার্থে না জানি কে ওঠে!
রিফাত আলম আশাবাদী মানুষ। দারুণ কোনো সুন্দরী মেয়ের সাথে বন্ধ কামরায় রাত্রি যাপনের আশায় সে আমাকে অনেক ভালো ভালো কথা শোনায়। কিন্তু পরবর্তী ২০ মিনিটেও তার প্রত্যাশায় কোনো শিকে ছেঁড়ে না। অতএব বাকি রাতটা দুই বন্ধু ইচ্ছেমতো কামরাটির সদ্ব্যবহার করতে পারবো, এমন একটি বিবেচনায় আমরা যখন স্বস্তি পেতে যাচ্ছি আরেকটু হলে, ট্রেনও যখন নড়তে শুরু করেছে একটু একটু, রীতিমতো দিলওয়ালে দুলহানিয়া ধরনে হাঁচড়ে পাঁচড়ে আমাদের বগিতে উঠে পড়লেন, না কাজল নয়, বাদামি চুলের এক শ্বেতাঙ্গিনী। এবং তিনি টিকেট মিলিয়ে ঢুকে পড়লেন আমাদের কামরাতেই।
রিফাতের ভবিষ্যদ্বাণী একেবারে ব্যর্থ হয়নি। সুন্দরী মেয়েটি ঠিকই, কিন্তু সেই বিষয়টিই প্রথমে চোখ কাড়ে না, বরং নজর যায় তার পিঠে ঝোলানো প্রায় তিন ফুটিয়া এক লালচে ব্যাগপ্যাকে। ব্যাগপ্যাক হলেও ওজনে যে সেটির বস্তার চেয়ে কম কিছু নয়, সেটাও বেশ বোধগম্য। এই সাইজের ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে এসে মেয়েটি স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ হাঁপাচ্ছে। কঠিন এই শারিরীক কসরত সম্পন্ন করতে পেরেছে বলে মেয়েটিকে বাহবা দেই আমি, তবে মনে মনে। মুজতবা আলী বর্ণিত সেই কলেজের হকি টিমের কাপ্তান ক্লারা ফন ব্রাখেলের মতো এমন জাঁদরেল অথচ সুশ্রী আমার কোনো বইতে চোখে পড়েনি, সরাসরি বাহবা দিয়ে মার খাবো নাকি?
আমি আর রিফাত দুজনেই চুপ করে থাকি। ব্যাকপ্যাকটি বিছানায় ছুঁড়ে দিয়েই হাঁপানো এবং ঘাম মোছার পালা শেষ হলে মেয়েটি জানায় যে দৌড়ে ট্রেন ধরতে গিয়ে তার খবর হয়ে গেছে। শ্রোতারা ঘাড় নেড়ে সায় দেই। মেয়েটি আরো খানিক অপেক্ষা করে স্থির হতে। তারপর পরিচিতের হাসি হেসে জানায়, তার নাম ম্যারিলেস, ম্যারিলেস মুয়েলার।
ট্রেনের গতির সাথে গল্প জমে ওঠে এরপর দেখতে দেখতে। আমাদের মতোই ম্যারিলেসও ঘুরতে বেড়িয়েছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় মাসখানেক ধরে। জাতিতে সে সুইস, পেশায় সে শেফ। তবে এখনো নাকি পুরোদস্তুর শেফ সে হয়ে উঠতে পারেনি, আরেকজনের সাথে কাজ শিখছে। সুইস ভাষা বাদে সে ভালোমতো পারে জার্মান ভাষাটি, ইংরেজি তার বেশি ভালো নয় (আমরা দুই বাঙালও ইতোমধ্যে তার ভাঙা ইংরেজিতে সেটা বুঝে নিয়েছি।)।
অল্প আলাপেই আবিষ্কার করি, শিশুর মত সরল এই ম্যারিলেস। মানুষের প্রতি যতটা সরল হলে তাকে বাঙালি রীতিমতো মানসিক অসুস্থ বলে গণ্য করতে পারে, ম্যারিলেসের সরলতা ঠিক ততটাই। ঘুরতে বেড়িয়ে ক্রোয়েশিয়া থেকে সে কিনেছে এক বাটি মধু, আর স্লোভেনিয়া থেকে কিনেছে পোর্সেলিনের ছোট্টো একটা পাখি; বিশাল ব্যাগপ্যাকের রীতিমতো ভেতরটা উজাড় করে দিয়ে এইসব স্মারক আমাদের দেখিয়ে তবে ম্যারিলেসের শান্তি। পোর্সেলিনের পাখির জন্য সে যা দাম দিয়েছে তা শুনে আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি চোখ বেশ বড় হয়, কিন্তু পাখিটির লেজের একটা কোণা ভেঙে গেছে আবিষ্কার করে ম্যারিলেসের দুঃখবোধে আমরা আক্রান্ত হই আরো বেশি।
এভাবেই গল্পে গল্পে একটি ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পরে ম্যারিলেস বলে, যাত্রাপথে তোমাদের সাথে পরিচিত হয়ে ভারি ভালো লাগছে। সকালে স্টেশনে নেমে তোমাদের সাথে একটা ছবি তুলবো।
তা এই অনুরোধে মনে করার কী আছে? আমি আর রিফাত দুজনেই হাসিমুখে মাথা নাড়ি। আমাদের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে চশমা চোখের ম্যারিলেস এবার ব্যাগ থেকে বের করে পুরানো দিনের একটি অলিম্পাস ক্যামেরা। ১৯৮৯ এর মডেল, az-200।
ডিজিটাল ক্যামেরার যুগে এখনো কেউ এই মাল নিয়ে ঘোরে? বাংলাদেশের মফস্বলের স্টুডিওগুলোতেও খোঁজ করলেও তো এই জিনিস এখন দুষ্প্রাপ্য!
নানা প্রশ্নে আমরা এরপর ম্যারিলেসকে ব্যস্ত করে তুলি। ক্যানো সে আজও ডিজিটালের বদলে অ্যানালগ ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? এই ক্যামেরার ফিল্ম কি সহজলভ্য? প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো এই ক্যামেরা কি বহন করছে তার ব্যক্তিগত কোনো স্মৃতি?
ম্যারিলেস হাসে। বলে, ফিল্ম পেতে তাকে একটু ঝামেলা পোহাতে হয় ঠিক। একবারে ১৮টার বেশি ছবিও তোলা যায় না। ফলে যখন সে কেনে, একবারে বেশি করেই ফিল্ম কেনে। আর এই ক্যামেরায় ছবি তুলতে তার ভালো লাগে। কারণ ভুল করার অবকাশ থাকে না সবকিছুকে একেবারে রেডি করে তারপর ছবি তুলতে হয় এই ক্যামেরায়, প্রস্তুতির সে দায়টা ম্যারিলেস উপভোগ করে।
আমরা দুজনে মেয়েটির শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস লক্ষ করি গভীর মনোযোগে।
ম্যারিলেস এবার তার ব্যাগ থেকে বের করে ছোটো একটা নোটবুকের মতো। হাতে দিয়ে বলে, তোমরা এখানে কিছু একটা লিখে দাও। কী করে তোমাদের সাথে পরিচয় হলো, সেটাই লেখো! বহু বছর পরে ক্যামেরায় তোলা ছবির সাথে তোমাদের এই চিরকুট যখন পড়বো, তখন ভারি মজা হবে!
… ভ্রমণের নানা পরিস্থিতিতে বিবিধ মানুষের সাথে এর আগে দেখা হয়েছে আমার, আরো মানুষকে দেখা হবে পরেও। কিন্তু ম্যারিলেসের ক্যামেরা আর তার চিরকুট সংগ্রহের গল্প আমাকে স্পর্শ করেছে কোথাও। এই গল্প আমি পরেও করেছি অনেকের কাছে, হয়তো আরো করবো।
কিন্তু ক্যানো ম্যারিলেসের অলিম্পাস ক্যামেরা আর চিরকুট বিশেষ হয়ে ওঠে আমার কাছে, ক্যানো এই গল্প আমাকে স্পর্শ করে? লোকে তো যে কোনো সফরে গেলেই কমবেশি ছবি তোলে। গত এক দশকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ফ্লিকার এবং আরো সব সামাজিক সাইটের দৌরাত্বে এই ছবি তোলার হার এখন বোধ করি ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চাইতেই বেশি। এবং, আমরা এটাও জানি, যাত্রাপথে অথবা ঘুরতে গেলে সহযাত্রী বা সহ দর্শকের সাথেও ছবি তোলার সংস্কৃতিতে নতুন কিছু নেই। তাহলে ক্যানো, কীভাবে ম্যারিলেস আমাদের মনে জায়গা নেয়?
সন্তোষজনক উত্তর পেতে এই প্রশ্ন আমি নিজেকে করেছি অনেকবার। জ্বরের ঘোরে শয্যাশায়ী হয়ে থাকাতেই হোক, অথবা চৈত্রের শেষ দিনে ঢাকা শহরের হঠাৎ কালবৈশাখী হোক; আজ হঠাৎ মনে হয় ম্যারিলেস আসলে আমাদের শিখিয়ে গেছে একবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ দুটো সূত্র।
আমরা সবাই ক্যামেরার সামনে নিজেকে পণ্যের মতো করে উপস্থাপন করি। ক্যামেরার দিকে চেয়ে আমরা হাসি, কারণ বিজ্ঞাপণে আমাদের হাসিমুখ দেখানোটাই দুনিয়ার নিয়ম। এবং ক্যামেরার পেছন থেকে যিনি আমাদের ছবি তোলেন, কিছুক্ষণের জন্যে হলেও, তিনিই ধারণ করেন আমাদের পুতুল নাচের সুতো। সেই মানুষটির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ থাকি, এবং তার তোলা ছবিটা ফেসবুক বা অন্য কোথাও বন্ধুদের প্রদর্শন করা গেলে সেই কৃতজ্ঞতা আয়তনে বহুগুণে বাড়ে। একথা বলাও অত্যুক্তি হবে না তাই, যদি বলি যে ক্যামেরাম্যান আসলে আমাদের কাছে থাকে বিশেষ এক সেবাদাতা হয়ে। আর বিক্রেতার মতো মুদি দোকানের চাল/ডাল অথবা শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত শপিংমলের বাহারি পোশাক নয়, ক্যামেরার পেছনে থাকা মানুষটা যোগান দেয় আরো দামী কিছু, আমাদের অহম।
ডিজিটাল ক্যামেরার মুহুর্মুহু ক্লিকবাজি খর্ব করেছে আমাদের ওপর ক্যামেরার পেছনে থাকা বন্ধুটির মনোযোগ। অজস্র ছবি সে তোলে, ভালো ছবিও সে তুলতে পারে অনেকগুলোই; কিন্তু তার জন্য আমাদের সে প্রস্তুত হতে দেয় না, এমনকি মাঝে মাঝে আমাদের সে প্রস্তুত হতে বলে না পর্যন্ত। কিন্তু পুরোনো দিনের অ্যানালগ ক্যামেরা নিয়ে কেউ যখন দাঁড়ায় আমাদের সামনে; রিল নষ্ট না করতে সে চিরসতর্ক, পণ্য হয়ে সামনে দাঁড়ানো মানুষদের সে তখন নিখুঁত একটি বিন্যাসে সাজাতে চায়। ফলে, আমরা পাই আমাদের অহমের জন্য সবচে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি, মনোযোগ। এবং এ কারণেই, ডিজিটাল ক্যামেরার চেয়ে অ্যানালগ ক্যামেরার পেছনের মানুষটি আমাদের মনে দাগ কাটে বেশি।
আর চিরকুট আমাদের বলে যায় অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা বহন করে চলা এই শতাব্দীতে দৃশ্যের পাশে অক্ষরের ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।
এ তথ্য এখন আর অজানা নেই কারো যে অটোগ্রাফের যুগ শেষ হয়ে পৃথিবীতে চলে এসেছে ফটোগ্রাফের যুগ। বিজ্ঞাপণের দুনিয়ায় পর্যন্ত তামিম ইকবালরা আজকাল অটোগ্রাফ দ্যান না। খেলোয়াড়, অভিনেতা, গায়ক, চিত্রকর, অফিসের বড়কর্তা; এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আনন্দঘন মুহুর্তটি ছবি স্মারক করে তুলে রাখায় আমাদের হোমপেজ আজ ভেসে যায়। নিজের পিঠ চাপড়াতে এর চাইতে সহজ রাস্তা আর নেই। মোবাইল ক্যামেরার সবর্গ্রাসী যুগে এরকম হওয়াটাই যথার্থ হয়তো, কে জানে। কিন্তু অটোগ্রাফের সাথে ফটোগ্রাফের, বলা ভালো ছবির সাথে লেখার একটা মৌলিক পার্থক্য আমি খুঁজে পাই।
যখন আমরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি হই আরেকজনের জন্য, সেই ছবি আমাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যায়। আর যখন আমরা লিখি অন্য কারো জন্য, আমাদের তখন নিজেকে দিতে হয়। ফলে, অটোগ্রাফ নেবার বদলে ছবি তুলতে আর অটোগ্রাফ প্রদানের বদলে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়ানোটাই মানুষের জন্য সোজা। কেবল লেখকের কাছ থেকেই আমরা এ যুগে অটোগ্রাফ নেই, কারণটা কাকতালীয় নয় মোটেই, কারণটা হচ্ছে আমরা জানি যে শুধু লেখকই ছবির চাইতে শব্দে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ইতিহাস বলে যে ছবির সাথে মানুষের সম্পর্ক বেশিদিনের নয়। বরং দীর্ঘকাল ধরে শব্দের সাথে চলে আসছে তার প্রেম। যে কারণে আজও বৃষ্টিবিঘ্নিত ঢাকা সামান্য মনোরম হলেই আমরা ইলিয়াসকে কোট করি, কবীর সুমনের সাথে আবিষ্কার করি যে প্রমোটার শোনে টাকার বদলে বর্ষার গান, রবীন্দ্রনাথের সাথে হাত ধরি পাগলা হাওয়ার। বৃষ্টির মাঝে প্রিজন ভ্যানের মাঝ দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়া কয়েদির ছবিটির অজস্র চোখ ধাঁধানো ছবিও আমাদের ঠিক করে প্রকাশ করতে পারে না।
তবু ক্রমশ কমে আসছে ম্যারিলেস মুয়েলারের মতো মানুষ, যারা চিরকুট চায়। আর চিরকুটে যেহেতু শব্দের সাধনা, আমরা জানি যে সে কাজটি আমাদের জন্য কঠিন, কারণ অস্তিত্বের একটা অংশ দিয়ে আসতে হবে সেখানে। তার চাইতে বরং একটা ছবি কারো সাথে তুলে ফেলা, প্রযুক্তিগত আর প্রকৃতিগত ভাবেই, অনেক সহজ।
বেলগ্রেড থেকে বুদাপেস্টের রাতের সে ট্রেনযাত্রাতেই নয় শুধু, ম্যারিলেসের সাথে আমাদের পরেও দেখা হয়েছে আবার, প্রাগ শহরে। চার্লস ব্রিজের লাগোয়া এক পাবে বসে সোনালি বিয়ারের সাথে সেই সন্ধ্যায় আমরা চাক্ষুষ করেছি অবিচ্ছিন্ন জনস্রোত। এবং তারও প্রায় মাসখানেক পরে ম্যারিলেস হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়েছে তার সেই অ্যানালগ অলিম্পাস ক্যামেরায় তোলা ছবি। ছবিটা খুব ভালো আসেনি।
তবু, ছবি নয়, ম্যারিলেস মুয়েলারকে আমি মনে রাখবো এ কারণেই, যে সে আমায় বুঝিয়ে গেছে ক্যামেরার সামনে আমাদের অহমের স্বরুপ। আর জানিয়েছে, যে লেখার টেবিলে বসে যে লোকটা শব্দ দিয়ে কিছু একটা আঁকতে চায়, একবিংশ শতাব্দী তার জন্য সুকঠিন এক সময়।
[এপ্রিল, ২০১৯]
নুসরাত
চমৎকার!!!
Tonu
Crispy
Enjoyed a lott