সুহান রিজওয়ান

লেখালেখি

সাহিত্যে জলবায়ূ ও জ্বালানি প্রসঙ্গ

[সাধারণভাবে, যে কোনো ধরনের আলোচনা সভা আমি এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে বিষয়বস্তু যদি একটু ভারী ধরনের হয়, তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বক্তাদের প্রজ্ঞা আরও সহ্য হয় না। কিন্তু শুভ কিবরিয়া ভাই পুরোনো সুহৃদ বলে তার আমন্ত্রণ এড়াতে পারলাম না, ফলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর একটা আলাপে যেতে হলো ২৩ নভেম্বর, ২০২৪। শিরোনামটা বেশ জটিলঃ জ্বালানি রুপান্তরের সন্ধিক্ষণে সাহিত্য ও সংস্কৃতিজনের দায় ও দরদ।

সত্যি বলতে, মূল ব্যাপারটা শিরোনামের মতো অত কঠিন নয়। মূল প্রবন্ধ রচয়িতা ড কাজল রশীদ শাহীনের বক্তব্যটা সহজ করে বললে, তা দাঁড়ায় এমনঃ কার্বন নিঃসরণ তথা পরিবেশ দূষণ হ্রাসকল্পে দুনিয়া এখন জীবাশ্ম জ্বালানি (ফসিল ফুয়েল) থেকে ঝুঁকে যাচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি (রিনিউয়েবল এনার্জি)-এর দিকে, জ্বালানি রুপান্তরের এই চাহিদাটা গণমানসে ছড়িয়ে দিতে সংস্কৃতিজনের একটা ভূমিকা রাখা দরকার। দরকার– লেখাজোখা, গান বা চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো শিল্পমাধ্যমগুলোয় নতুন দিনের এই চাহিদাটা তুলে আনা।

‘নয়পৌরে’ প্রসঙ্গে

গল্পগ্রন্থ ‘নয়পৌরে’ প্রকাশ হতে যাচ্ছে অচিরেই, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী থেকে। মনে হলো, তার আগে দু’চার কথা বলে নেই ওয়েবসাইটে।

বাইরের দেশে লেখকের ওয়েবসাইটের আলাদা মাহাত্ম্য আছে। লোকে সেখানে ওয়েবসাইট ঘেঁটে লেখকের কথাবার্তা কি তার কাজের হালনাগাদ জেনে নেয়। কোনো জরিপ করা হয়নি, কিন্তু পাঠকদের কোনো তথ্য পৌঁছে দিতে বাংলাভাষী লেখকদের মূল ভরসা বোধ করি, হয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়াই। বিপণন বা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর পেশাদারিত্ব হয়তো লেখকদের ওপর থেকে এই কাজের কিছুটা সরাতে পারে।

সুলতানের দুই সফর

মঈনুস সুলতানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ নামের ভ্রমণ সংকলনের হাত ধরে। দৈনিক প্রথম আলো’তে সুলতানের যে ভ্রমণ গল্পগুলো পর্বের পর পর্ব ধারাবাহিক আকারে বেরিয়েছিলো প্রায় এক দশক আগে, ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ ছিলো তারই সংকলিত রুপ। পত্রিকার পাতায় অতটা নিয়মিত পড়া হয়নি সুলতানকে, স্বীকার করি; কিন্তু যখন তাকে পড়া হয় মলাটবদ্ধ বইয়ের পাতায়, অনুরাগী হয়ে যেতে তার সময় লাগে না। উর্দু-ফারসি-আরবীর আধিক্যের সাথে বহু অবাঙাল শব্দ যুতসই ভাবে ব্যবহার করে সুলতান কী করে প্রায়ই বাংলা ভ্রমণগদ্যের আরেক চূড়ামণি সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করান; সে প্রসঙ্গেও নিয়মিতই অনেকের সাথে আলাপ করেছি। মঈনুস সুলতানকে তাই সময় পেলেই অনুসরণ করেছি আমি; নিকারাগুয়ায়, জিম্বাবুয়েতে, অথবা কান্দাহারে।

২০২৪ এর বই / কিস্তি ০১

২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো পড়া শেষে আমার এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে রাখার জন্য এই ধারাবাহিক। আশা রাখি, এই স্বেচ্ছা-উদ্যোগ বেশ কিছুদিন চালিয়ে নিতে পারবো। আজ থাকলো প্রথম পর্ব।

(১) শূন্যের মাঝামাঝি শূন্যে / জিল্লুর রহমান সোহাগ

জিল্লুর রহমান সোহাগের গল্পগ্রন্থ ‘জুড়িগাড়ি’ পড়বার পর একটি পর্যবেক্ষণ আমি উপস্থাপন করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, গল্পকার হিসেবে সোহাগের ভাষা কিছু বেশিই অলঙ্কারপূর্ণ। গদ্য নয়, দীর্ঘ কোনো কবিতা– বলা ভালো আবৃত্তি করবার মতো কোনো কবিতা লিখছেন যেন সোহাগ। শব্দেরা সেখানে ভারি, গতি সেখানে সম্ভ্রম জাগানো শ্লথ।

ইতিহাস সংক্রান্ত বইপত্র

১৮ আগস্টে ফেসবুকে দিয়েছিলাম পোস্টটা, তালিকায় সামান্য পরিমার্জন করে তুলে দিচ্ছি ওয়েবসাইটেও।

ইতিহাস ব্যাপারটা কী, ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ তলস্তয় সেটা খুব ভালো মতো বলে দিয়েছেন। আমার কাছে ব্যাপারটা ফুটবল ম্যাচের মতো। লেফট ব্যাক থেকে অ্যাটাকিং মিড, কিংবা রাইট উইং থেকে স্ট্রাইকার— প্রত্যেকেই ভাবে যে গোলের পেছনে তার ভূমিকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাইরে থেকে যে দর্শক খেলা দ্যাখে, তার কাছে পুরো ম্যাচটাই ধরা দেয় বিক্ষিপ্ত কিছু প্রচেষ্টার সমষ্টি হিসেবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষেত্রে আবার, তুলনাটা দিতে হয় হাইস্কুলের ফুটবলের সাথে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের মতো দক্ষ ক্যামেরা না থাকায়, দর্শকের অবস্থানটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। খেলা আর ‘অফ দা বল মুভমেন্ট’; দুটোকেই একসাথে দেখাটা খুব কঠিন।

দুই লেখকের গল্প

একটা গল্প বলি, শোনেন।

এক উপত্যকার দুই বিপরীত ঢালে দুটো কাঠের বাড়ি। দুজন লেখক থাকে ওই বাড়িগুলোয়, আর তারা পালা করে একে অন্যের ওপর চোখ রাখে। একজনের অভ্যাস হচ্ছে সকালে লেখা, অন্যজন লিখতে বসে বিকালবেলায়। কাজেই সকাল আর বিকালে, যে লেখক লিখছে না, সে’ই নিজের স্পাইগ্লাস দিয়ে নজর রাখে অন্য লেখকের ওপর- যে লিখছে।

দুই লেখকের মাঝে একজন হলো বহুপ্রজ লেখক। মানে, যে কি না লিখতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে; ফলে লিখতে পারে প্রচুর। অন্যজন হলো যন্ত্রণাবিদ্ধ লেখক। মানে, যে কি না লিখতে গিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তা করে; ফলে তার লেখা হয় বড্ড অল্প।

আলমগীর হোসেন অড্রে হেপবার্নকে ভালবেসেছিল

“In a cruel and imperfect world, Audrey Hepburn was living proof that God could still create perfection.” – Rex Reed

আপনাদের অথবা সেগুনবাগিচার আদি বাসিন্দাদের, কারোরই জানার কথা না যে ১৯২৯ সালের মে মাসের ২ তারিখ জন্ম নেওয়া মাজেদা খাতুনের একমাত্র পুত্র আলমগীর হোসেন অড্রে ক্যাথলীন হেপবার্নের চেয়ে বয়সে দুইদিনের বড়। আলমগীর হোসেন জন্মের পর তার পিতাকে দেখেছে বলে মনে করতে পারে না এবং এই প্রসঙ্গে মাজেদা খাতুনের নীরবতার কোন গোপন তাৎপর্য থাকলেও থাকতে পারে বলেও সেগুনবাগিচার আদি বাসিন্দারা মনে করে। কিন্তু সেটি আলমগীর হোসেনের কাছে তেমন কোন বিশেষত্ব বহন করেনি কখনো এবং মাজেদা খাতুন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পেছন দিকে ভাত বিক্রয় করে সেটাও সেগুনবাগিচার লোকেদের পছন্দের বিষয় না হলেও আলমগীর হোসেন কখনো তা নিয়েও ভাবেনি। এটা জানাই যথেষ্ট যে সেগুনবাগিচার বর্তমান বাসিন্দারা প্রায় সবাই অড্রে হেপবার্নকে দেখেছেন- কিন্তু আলমগীর হোসেনকে দেখেছেন কেবল আদি বাসিন্দারাই; অথবা হয়ত তাদের একটা ছোট অংশ।

Page 1 of 19

Powered by WordPress & Theme by Anders Norén

error: Content is protected !!