গল্প লেখার প্রয়োজনে সৈয়দ হক যখন একদিন আবিষ্কার করলেন যে প্রতিটি গল্পে তাকে কোনো গ্রামীণ জনপদ নিয়মিতই উদ্ভাবন করতে হচ্ছে, তখন তিনি এমন একটা কাল্পনিক জনপদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন, যেটাকে ব্যবহার করা যাবে তার সমস্ত গ্রামীণ গল্পের পটভূমি হিসেবে। সৃষ্টি হলো সৈয়দ হকের ‘জলেশ্বরী’, নদীতীরের কয়েকটি কাল্পনিক চর নিয়ে গঠিত যে জনপদকে তিনি বহুবার ব্যবহার করেছেন তার গল্প উপন্যাসে। সত্যি বলতে, লেখকের প্রয়োজনে কাল্পনিক জনপদ তৈরির ব্যাপারটা সাহিত্যে নতুন কিছু নয়; আর কে নারায়ণের ‘মালগুঁড়ি’, কিংবা গার্সিয়া মার্কেজের ‘মাকেন্দো’ নামগুলোও কিন্তু দেশ বিদেশের পাঠকের কাছে অতি পরিচিত, লেখকদের বয়ানে সেই জনপদগুলো পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছে বাস্তবের চাইতেও অধিক বাস্তব।
অনলাইনে কিংবা চায়ের কাপের আড্ডায় কিশোর বয়েসীদের জন্য ভালো বইয়ের খোঁজ করতে দেখি অনেককে। আন্তর্জালের কল্যাণে বিদেশি ভাষার সুদৃশ্য কিশোরোপযোগী বইগুলোর নামধাম জানা সকলের জন্যেই সহজ এখন। কিন্তু বিপণনের আয়তনের স্বল্পতা হোক, বা সংশ্লিষ্টদের অনীহা; বাংলা প্রকাশনাগুলোর ক্ষেত্রে সেই ঘরানার বইগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা দেখি না খুব একটা। বাংলাদেশের কিশোর সাহিত্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের অবস্থানটি দুর্দান্ত সবল, কিশোর বয়েসীদের জন্য ভালো বইয়ের তালিকায় সবাই তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর রচিত গল্প উপন্যাসের কথাই সচরাচর বলেন।
আড়ালে চলে যান শাহরিয়ার কবির।

বিজ্ঞানীসুলভ অধ্যাবসায় নিয়ে লেখালেখির কাজটাকে গাণিতিক ছকের মতো করে তুলেছিলেন কোন্ লেখক, ভাবতে গেলে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের নামটাই সবার আগে মাথায় আসে। বাংলাভাষী লেখকদের মাঝে লেখার দক্ষতা অর্জনকে শাস্ত্রের মতো করে তোলার ব্যাপারটা যে সৈয়দ শামসুল হকের মাঝে দেখি, কাকতালীয় মনে হয় না মোটেই, যখন জানতে পাই যে তাকেও তার সহধর্মিনী আনোয়ারা সৈয়দ হক ডাকতেন ‘হেমিংওয়ে’ বলে।
অ্যাকুরিয়ামের অধিকাংশ মাছের গায়ের রং লালচে, কিছু আছে সোনালি বর্ণের। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এম মালিক এই বড় ঘরটিতে এলেই মাছগুলোর সাথে কিছু সময় কাটান। বিশেষ করে কাচের দেয়ালে টোকা মারতে তার খুব ভালো লাগে। হঠাৎ আলোড়নে বিব্রত হয়ে পড়া মাছগুলোর দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করার দৃশ্যটা বড় চমৎকার ঠেকে গভর্নর মালিকের কাছে। তবে আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন, গভর্নরের নিজেরই এখন মাথার ঠিক নেই।
চারপাশে বসে থাকা মন্ত্রীপরিষদের দিকে তিনি একবার চোখ বোলালেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘এখন কী করা যায় আপনারাই বলুন। প্রেসিডেন্টকে টেলিগ্রাম করলাম পরশুদিন, এখনো তো সেটার কোনো জবাব এলো না। জানি যে প্রেসিডেন্ট খুব ব্যস্ত মানুষ, তবুও…’

পড়া হলো লেখালেখি নিয়ে ইতালো কালভিনের বেশ কিছু বক্তব্যের সংকলন ‘সিক্স মেমোজ ফর দা নেক্সট মিলেনিয়াম’। ১৯৮৪-৮৫ এর দিকে The Charles Eliot Norton Lectures সিরিজের অংশ হিসেবে এই বক্তব্যগুলো প্রস্তুত করেছিলেন কালভিনো।
আগামী শতাব্দীর (অর্থাৎ এই একবিংশ শতাব্দীর) সাহিত্যের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি নিয়ে কয়েকটা প্রবন্ধ জায়গা পেয়েছে আলোচ্য সংকলনে। শোনা যায়, এই বিষয়ে মোট আটটি প্রবন্ধ লেখার পরিকল্পনা ছিলো কালভিনোর, কিন্তু অকাল প্রয়াণের কারণে কাজটি সম্পূর্ণ করা আর হয়ে ওঠেনি তার। ফলে, নামে ‘সিক্স মেমোজ’ হলেও অত্র শতাব্দীর সাহিত্যচর্চার পাঁচটি মাত্রা নিয়েই আলাপ করা হয়েছে এখানে।

মানিক, বিভূতি, তারাশঙ্কর যেমন মুখে মুখে ঘোরে বাংলা উপন্যাসের পাঠকের; সতীনাথ ভাদুড়ী সেদিকে যেন বিহার জেলার মতোই দূরে, চট করে তাকে স্মরণ করাটা কঠিন। ফলে এমন দেখেছি অনেক, যে অনেক পাড়া মাড়িয়ে আসা পাঠকেরও সতীনাথকে আবিষ্কার করতে সময় লাগে। তবে বিলম্বে হোক, বা দ্রুত; যখন পাঠক পড়েন সতীনাথকে; বিস্ময়ের এক প্রচন্ড থাবড়া খেয়ে তাকে সোজা হয়ে বসতে হয় তখন। এমন লেখকও আছেন? এভাবে, অ্যাতো নিস্পৃহ থেকে, অ্যাতো অচঞ্চল থেকে, নিজেকে এমন আড়ালে রেখেও তবে উপন্যাস লেখা যায়? সেই পাঠককে তাই প্রচণ্ড ঈর্ষা হয় আমার, যিনি সতীনাথ ভাদুড়ীর উপন্যাস পাঠ করবেন প্রথমবারের মতো।

(১)
স্মৃতিচারণ বলবো, না ইতিহাস?
যে নামেই ডাকা হোক, প্রচ্ছদ দেখেই আন্দাজ করা যায় যে গ্যারি জেনকিন্সের এই রচনায় চরিত্রের অভাব নেই। কিন্তু কারা এই স্মৃতিচারণের চরিত্র?
অনেকেই। যেমন সাও পাওলোর বড়লোক পাড়ার অ্যাস্ট্রোটার্ফের কোণে দাঁড়িয়ে ফুটবলে লাথি মারতে থাকা বাচ্চাদের দিকে চেয়ে থাকা ওই বুড়ো। আজও ব্রাজিল ওই বুড়োকে চেনে ‘দা ক্যাপিটান’ নামে।